বিশেষ প্রতিবেদকঃ অবশেষে ইয়াবা ব্যবাসায়ী ও চোরাচালানী মাফিয়াদের বাসাবাড়িতে ছোবল বসানো শুরু করেছে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের করা তালিকা নিয়ে অভিযুক্তদের বাসাবাড়িতে যৌথভাবে হানা দেয়া শুরু করেছে অভিযানকারিরা। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় এ অভিযানের প্রথম ছোবল পড়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, এমপি বদির ছোট ভাই আবদু শুক্কুর, তার ম্যানেজার মারুফুল করিম বাবু ও আন্তর্জাতিক মাফিয়া হিসেবে পরিচিত সাইফুল করিম ও পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার রেজাউল করিম মানিকের বাসায়। অকস্মাত এ অভিযানের কথা প্রচার পেলে পুরো টেকনাফে হৈ চৈ পড়ে যায়। রাত আটটা পর্যন্ত চলে এ অভিযান।
অভিযানকালে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফরের বাড়ি থেকে ৩১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে যৌথ অভিযান দল। তারা সাইফুল করিমের বাসা থেকে নিষিদ্ধ বিপুল পরিমান স্প্রিট জব্দ করার কথাও উঠে এসেছে। এসময় সাইফুলকে না পেলেও তার ভাই জিয়াউল করিম জিয়া অভিযান দলের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় জরিমানা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ইয়াবার ছোবল দেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটি গ্রুপ দেশের কথা না ভেবে নিজেদের আখের ঘোছাতে পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে এ নিষিদ্ধ ব্যবসা। এটি নির্বিঘœ করতে এমপি, মন্ত্রী, প্রশাসনের উর্ধ্বতন অসাধু কর্মকর্তা, রাজনৈকি নেতৃত্বকে ব্যবহার করছে কৌশলে। তাই মাদক ব্যবসা দিনদিন প্রসার পাচ্ছে। অপরদিকে, সম্প্রতি নিপীড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গা স্রোতের সাথে নির্বিঘেœ ইয়াবা ও আগ্নেয়ান্ত্র এসেছে এবং তা তালিকাভ’ক্তদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে বলেও গোপন তথ্য এসেছে। এসব কারণে সরকার প্রধানের নির্দেশে মাদক ব্যবসার গতি রোধ ও অবৈধ বাণিজ্য ঠেকাতে মাঠে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়।
তিনি আরো জানান, অভিযানিকদল প্রথম যায় উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের বাসায়। তাদের তিন তলা বাসা থেকে ১৬ শিশু ও ১৫ নারীসহ ৩১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও তার ছেলে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান কেউ বাড়িতে ছিলেন না। এরপর আবদু শুক্কুর, তার ম্যানেজার বাবু, সাইফুল করিমের বাসায় যান অভিযানকারিরা।
স্থানীয় অসমর্থিত একটি সূত্র মতে, অতিগোপনে অভিযানিক দল এলাকায় এলেও কোন অদৃশ্য স্থান থেকে অভিযানের খবর পান রাঘব বোয়ালরা। ফলে সন্ধ্যার আগেও উল্লেখিত চার জনকে বাড়ি ও এলাকায় দেখা গেলেও অভিযানের ঠিক আগ মূহুর্তে তারা সটকে পড়ে। তাই অভিযানটি নিস্ফল হয়েছে। আর অভিযানকারিরা জাফর চেয়ারম্যানের বাড়িতে ঢুকার ১৫-২০ মিনিটের মাথায় বিদ্যুতের লোড়শেড়িং শুরু হয়। ফলে অভিযানকারিরা অন্ধকারে ঠিকমতো সব কক্ষ তল্লাশী করতে ব্যর্থ হন। সূত্রটির মতে, চেয়ারম্যান শাহজাহানের কক্ষে ইয়াবার চালান ও আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ থাকে। পর্যাপ্ত আলো থাকলে ভালকরে তল্লাশীতে সেসবের চালান পাওয়া যেত। আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার স্থানীয় ভাবে দায়িত্বরত কোন বিভাগের সদস্যরা তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো দূরে থাক ঢুকারও সাহস করে না। তাই নিরাপদ হিসেবে তার বিশেষ কক্ষটি এসবের জন্য ব্যবহার করা হয় বলেও সূত্রটি দাবি করেছে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, সম্প্রতি করা সর্বশেষ দেড় শতাধিক জনের তালিকাতে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, তার সকল ছেলে, এমপি বদির ছোট ভাই আবদু শুক্কুর, তার ম্যানেজার মারুফুল করিম বাবু ও সাইফুল করিমের নাম রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে আরো পরিচিত অপরিচত অনেকজন। তাদের আস্তানায়ও হানা দেবে অভিযান কারিরা। তবে, শুরুটা মোড়লদের দিয়ে করে জিরো টলারেন্স দেখানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সূত্রটি।
ঢাকার একটি সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখ মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দলের মাথে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের ১২ সদস্যের একটি দলের বৈটক হয়। সেখানে ইয়াবা আসা বন্ধে একসাথে কাজ করতে মতৈক্যে পৌছান দু’দেশের প্রতিনিধিরা। এরপরই সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ি মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের ধরতে সাড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত হয় এবং সেভাবে তৈরী করা হয় অভিযানের চক। যার প্রথম ছোবল বসানো হয় ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানের পদ দখল করা জাফর আহমদ ও ছেলে শাহজাহানের বাড়িতে। কিন্তু প্রত্যাশা অনুসারে সফলতা পায়নি অভিযানকারিরা।
যৌথ অভিযানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হয়ে সহযোগিতা দিয়েছেন নির্বাহ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার এহসান মুরাদ। অভিযান সম্পর্কে জানতে বুধবার রাতে তাকে বেশ কয়েকবার কল করা হয়। রিং হলেও ফোন রিসিভ না করায় রোহিঙ্গা উদ্ধারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আর জানা যায়নি।
তবে, টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, অভিযানের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। এরপরও জানতে পেরেছি বিশেষ বাহিনী উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। আমাদের সহযোগিতা না চাওয়ায় সর্বশেষ কি হয়েছে তা সঠিক জানেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযানের বিষয়ে জানতে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের মুঠোফোন বেশ কয়েকবার কল করা হয়। কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তার বক্তব্য পাওয়া গেলে তা গুরুত্বসহকারে প্রচার করা হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।