গত বছরের তুলনায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে।
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দশ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এবার পাসের হার ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কম।
মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৩০ হাজার ৩৭৫ জন।
সারাদেশে একযোগে আটটি সাধারণ বোর্ডের এসএসসি, মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিল ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির ফল প্রকাশ করা হয়েছে শনিবার।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শনিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এর আগে সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলের সার-সংক্ষেপ হস্তান্তর করেন।
হরতাল-অবরোধের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফল আশানুরূপ হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। ফলাফল হস্তান্তরের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ না থাকলে পাসের হার আরও বাড়ত।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৪ জন ছাত্র ও ৬ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৪ জন ছাত্রী।
তিনি আরও বলেন, আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এসএসসিতে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ২০ ও কারিগরি বোর্ডে ৮৩ দশমিক ০১ শতাংশ। গত বছর আট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৬৭, মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ২৫ ও কারিগরি বোর্ডে ৮১ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল।
বিদেশ কেন্দ্রে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া এবার ৫ হাজার ৯৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে, ৪৭ প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
ফলাফলের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এসএসসিতে এবার অংশ নিয়েছে ১১ লাখ ৮ হাজার ৬৮৩ জন ছাত্রছাত্রী। পাস করেছে ৯ লাখ ৬১ হাজার ৪০৫ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬২২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৬ জন। কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ১০ হাজার ২৮৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯১ হাজার ৪৫৭ জন।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩ হাজার ৬৩১ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে ১১ হাজার ৩৩৮ ও কারিগরি বোর্ডে ৬ হাজার ৯৩২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এবারও এসএসসিতে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বোর্ড। এ বোর্ডে ৩৬ হাজার ৮০১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর শতকরা হার, শতকরা পাসের হার, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও প্রতিষ্ঠানের গড় জিপিএ মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রতিটি বোর্ডে সেরা ২০ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। একই মানদণ্ডের ভিত্তিতে জেলাভিত্তিকও সেরা ১০টি করে প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে।
এবার ঢাকা বোর্ডে সেরা হয়েছে শামসুল হক খান স্কুল এ্যান্ড কলেজ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে গত বছরের সেরা রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গত বছরের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবার তৃতীয় অবস্থানে নেমে এসেছে।
মাদ্রাসা বোর্ডে সেরা হয়েছে ডেমরার দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা। কারিগরি বোর্ডের সেরা রাজশাহীর ইউসেপ-রাজশাহী টেকনিক্যাল স্কুল।
সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুর ২টা থেকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ছাড়াও www.educationboardresults.gov.bd ঠিকানায় ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে ফলাফল জানা যাবে।
মোবাইল থেকে ফলাফল জানতে মেসেজ অপশনে গিয়ে পরীক্ষার নাম (ssc/mad/tec) লিখে স্পেস দিয়ে ইংরেজিতে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পাসের সন ২০১৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে ফলাফল জানানো হবে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালের কারণে তা শুরু হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। হরতালে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবগুলো (১৬ দিন) পরীক্ষা পেছানো হয়। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ পরীক্ষাগুলো নেওয়া হয়েছে।
তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা থাকলে তা শেষ হয় ৩ এপ্রিল।
এবার বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথমপত্র, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র ছাড়া সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
৩১ মে থেকে ৬ জুন উত্তরপত্র পুনঃনীরিক্ষণের আবেদন
এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনীরিক্ষণের জন্য আগামী ৩১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল দিয়ে ফল যাচাই করার আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলে ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে আরএসসি (RSC) লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে ফি প্রযোজ্য হবে। ফিরতি এসএমএস এ আবেদন ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে।
আবেদনে সম্মত থাকলে ম্যাসেজে গিয়ে আরএসসি (RSC) লিখে স্পেস দিয়ে ইয়েস (YES) লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে নিজ মোবাইল ফোন নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
যে সব বিষয়ে দুটি পত্র (বাংলা ও ইংরেজি) রয়েছে সে সব বিষয়ে একটি বিষয় কোড (বাংলার জন্য ১০১, ইংরেজির জন্য ১০৭) এর বিপরীতে দুটি পত্রের জন্য আবেদন হিসেবে গণ্য হবে এবং আবেদন ফি হিসেবে ২৫০ টাকা লাগবে। একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা দিয়ে লিখতে হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।