কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন
২০১৫, জুলাই ০৭ ০৩:৫২ পূর্বাহ্ণ
কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গঠন করা হচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৫’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। জাতীয় সংসদ ভবনে সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভা বৈঠকের বিষয়ে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এ অনুমোদনের কথা জানান। মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে কর্তৃপক্ষের মূল কাজ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ যাতে মাস্টার প্ল্যান পরিপন্থী কোনো কাজ না করে সে জন্য কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে। এ আইন কার্যকর হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ইমারত, রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।’ ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুকুর ও জলাধার খনন করা যাবে না, পাহাড় বা টিলা কাটা যাবে না। কর্তৃপক্ষ দেখেশুনে অনুমতি দেবে, অনুমতি দেওয়ার পর তারা অনুমতি বাতিলও করতে পারবে।’ আইন বাস্তবায়নে সরকার গেজেটের মাধ্যমে আইনের আওতাধীন কক্সবাজার ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা নির্ধারণ করবে বলেও জানান মোশাররাফ হোসাইন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কক্সবাজারের গুরুত্ব অনেক ও এটা একটা পর্যটন নগরী। এর উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হচ্ছে। কক্সবাজারকে যেভাবে আকর্ষণীয় হওয়ার কথা সেভাবে আকর্ষণীয় হতে পারছে না। মূল্যবান জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ জন্য পরিকল্পিত উপায়ে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।’ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) আদলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত আইনের খসড়াটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেছিল। এ সময় কিছু পর্যবেক্ষণসহ এটি নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।’ ‘খসড়া আইনে আটটি অধ্যায় ও ৫৫টি ধারা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ গঠন, কার্যাবলী, মাস্টার প্ল্যান তৈরির উপায় ও তা বাস্তবায়ন, স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ, তহবিল ব্যবস্থাপনা, আইনের লঙ্ঘনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।’ কর্তৃপক্ষের ১৫ জন সদস্য থাকবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চারজন পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন সদস্য থাকবেন ১১ জন। সরকার একজন চেয়ারম্যান ও তিনজন পূর্ণকালীন সদস্য নিয়োগ দেবে। সদস্যদের মধ্যে একজন প্রশাসন ও অর্থ, একজন প্রকৌশল ও একজন পরিকল্পনা বিভাগ দেখবেন।’ তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, কক্সবাজার শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধি থাকবেন সদস্য। সদস্য হিসেবে আরও থাকবেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র। তিনজন বিশিষ্ট নাগরিকও কর্তৃপক্ষের পার্টটাইম সদস্য হিসেবে থাকবেন, এরমধ্যে একজন হবেন নারী।’ নীতিগত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, এ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হবেন একজন অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা। মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) তৈরি করা হবে কর্তৃপক্ষর মূল কাজ। তারা ল্যান্ড জোনিংয়ের কাজও করবে। এর মাধ্যমে কোথায় আবাসিক এলাকা হবে, কোথায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে, কোথায় অফিস ভবন হবে তা নির্ধারিত হবে। ল্যান্ড জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।’ ‘কর্তৃপক্ষ নিজেরাও কাজ করবে তবে কম। বেশিরভাগ তারা অন্যের কাজটা সমন্বয় করবে। মূলত এটি একটি রেগুলেটরি অথরিটি (নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ) হবে। অনেক কাজে তারা (কর্তৃপক্ষ) সহায়তা দেবে। যাতে উন্নয়ন ও সেবার বিকাশ পরিকল্পিত হয়।’ সরকার যদি মনে করে কক্সবাজারে এখন যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা আছে জনস্বার্থে বা কাজের সুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার প্রয়োজন হলে সরকার তা করতে পারবে বলেও জানান তিনি। এ আইনের আওতায় অপরাধ প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বিচার্য হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অপরাধগুলো হবে আমলযোগ্য, মানে পুলিশ আমলে নিয়ে গ্রেফতার করতে পারবে এবং তা জামিন যোগ্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার রাখা হয়েছে।’ ‘নির্মাণাধীন ভবন, জলাধার খনন, পাহাড় কাটা ইত্যাদি স্থগিত বা বন্ধ করার আদেশ দিতে পারে কর্তৃপক্ষ। যদি কেউ এ আদেশ অমান্য করে তবে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে খসড়া আইনে। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধগুলো কোনো না কোনো আইনে রয়েছে। সেই অপরাধের শাস্তি সেই আইন অনুযায়ী হবে’ বলেন মোশাররাফ হোসাইন। এ আইনের আওতায় সরকার বিধিমালা করতে পারবে, কর্তৃপক্ষ নিজেরা প্রবিধানমালা তৈরি করতে পারবে বলে জানান তিনি। নীতিগত অনুমোদনের সময় কক্সবাজার কর্তৃপক্ষের একই সাথে উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে কাজ করার বিষয়ে মন্ত্রিসভার আপত্তি ছিল। কারণ উন্নয়নের কাজ করলে নিয়ন্ত্রণের কাজটা সেভাবে হয় না। মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ শুধু নিয়ন্ত্রকের কাজ করবে। কিন্তু গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলেছিল, কাজ করতে গিয়ে তারা দেখেছে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এটা চাচ্ছেন না। তারা চান কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়নমূলক দুধরনের কাজই করুক। ওই সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, ‘এখন মন্ত্রিসভা বলেছে কক্সবাজার কর্তৃপক্ষ সীমিত আকারে উন্নয়ন কার্যক্রম চালাবে। নিয়ন্ত্রণই হবে তাদের মূল কাজ। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন চাহিদার পূরণের ক্ষেত্রে তারা নজর দেবেন।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।