আনছার হোসেনঃ দিনে দিনে যেন বাড়তেই আছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এই সংখ্যা যেন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। কক্সবাজারে আজ শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) একদিনেই আরও ৭ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের একজন কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ায়, ৫ জন মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নে ও অন্যজন সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে। এ নিয়ে কক্সবাজার জেলায় ১৫ জন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলো।
নতুন শনাক্ত হওয়া ৭ জনের মধ্যে কক্সবাজার শহরে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার আবু ছিদ্দিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছের আবু সৈয়দের ছেলে শাহআলম। তিনি গত ১৮ এপ্রিল কৌশলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসেন। তার সাথে শহরের টেকপাড়ার করোনা শনাক্ত হওয়া আবুল কালামের সংস্পর্শে ছিলেন। প্রচার আছে, তারা দুইজনই একসাথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছেন। তারা দুইজনই মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত।
টেকনাফে শনাক্ত হওয়া নুরুল আলম (২২) টেকনাফ সদরের মিঠাপানিরছড়া এলাকার বাসিন্দা। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৫ জন হলেন মোহাম্মদ রিয়াদ (৩৪), মো. আবদুল্লাহ (৩৫), অঞ্জলী (৩৫), হোসাইন সাব্বির (৩০) ও হেলাল উদ্দিন (২৮)। এরা সকলেই ঢাকা ও নারায়নগঞ্জফেরত।
শুক্রবারের ১০১ জন সন্দেহভাজন রোগীর টেষ্টে ৭ জনের করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ পাওয়া যায়।
গত ২৪ দিনে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৭১৫ জন সন্দেহভাজন রোগীর করোনা টেষ্ট হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। করোনা পজিটিভ পাওয়াদের মধ্যে কক্সবাজার জেলায় ১৩ জন ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে একজন। এছাড়াও কক্সবাজারের প্রথম করোনা রোগী মুসলিমা খাতুনের (৭০) পরীক্ষা হয়েছে ঢাকার আইইডিসিআর ল্যাবে।
এরা প্রত্যেকেই জেলার বাইরে থেকে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই এসেছেন ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে। এদের মধ্যে দুইজন মাছ ব্যবসায়ী, একজন আম ব্যবসায়ী, দুইজন তাবলীগফেরত এবং একজন গার্মেন্ট কর্মীও রয়েছেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া, কলেজের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোনিয়া আফরোজ ও ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মো. শাহজাহান নাজির।
সুত্র মতে, কক্সবাজার শহরের শাহআলম গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসার পর তিনি টানা পাঁচদিন আত্মগোপনে ছিলেন। ওই ঘটনা জানাজানি হলে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে নিকটাত্মীয়দের সহায়তায় তাকে কৌশলে এনে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবারও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তিনি হলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩৫)। তিনি ঢাকার গাজীপুরে টঙ্গি ইজতেমা ময়দান থেকে তাবলীগ জামাতের ছিল্লা শেষে টেকনাফে ফেরেন।
তার আগের দিন ২২ এপ্রিল করোনা রোগী পাওয়া যায় কক্সবাজার শহরে। তিনি হলেন টেকপাড়ার চৌমুহনী এলাকার আবুল কালাম (৫৫)। তিনি মাছ ব্যবসায়ী। তিনি ও আজ শনাক্ত হওয়া শাহআলম দুইজনই এক সাথে ঢাকায় ছিলেন বলে প্রচার আছে।
ইতোমধ্যে যে ১৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে কক্সবাজার শহরে দুইজন, টেকনাফে তিনজন, মহেশখালীতে ৮ জন ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে একজন রয়েছেন। এছাড়াও জেলার প্রথম করোনা রোগী ছিলেন চকরিয়ার খুটাখালী এলাকার বাসিন্দা।
তবে জেলায় শনাক্ত হওয়া প্রতিজন রোগীই কক্সবাজারের বাইরে থেকে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলার প্রথম রোগী সৌদি আরব থেকে ওমরাহফেরত, পরবর্তী চারজন ঢাকা ও নারায়নগঞ্জফেরত, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার আবুল কালামও নারায়নগঞ্জফেরত, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মো. ইদ্রিস ঢাকাফেরত, কক্সবাজার শহরের শাহআলম, টেকনাফের মিঠাপানিরছড়ার নুরুল আলম ও মহেশখালীর কালারমারছড়ার মো. রিয়াদ তিনজনই ঢাকাফেরত। মহেশখালীর আরও ৪ জনের কেস হিস্ট্রি পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের প্রথম করোনা রোগী আবু ছিদ্দিক ছিলেন খুলনা হয়ে ঢাকাফেরত। ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন তাবলীগ জামাতের ছিল্লা দিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া, কলেজের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোনিয়া আফরোজ ও ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মো. শাহজাহান নাজির জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসহ জেলার উপজেলা ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ফ্ল্যু সেন্টার থেকে ১০১ জন সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। শুক্রবার দুপুর পযন্ত ৭২ জন ও বিকালে ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা হওয়া ১০১ জনের মধ্যে ৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এদের মধ্যে সকালে দুইজন ও বিকালে ৫ জনের পজিটিভ পাওয়া যায়। অন্যরা সবারই রিপোর্ট নেগেটিভ।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, কক্সবাজার ল্যাবে প্রতিদিন ৯৬ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও উপজেলা পর্যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ নমুনা আসছে না। তবে গত রোববার থেকে অনেক বেশি নমুনা পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, শুক্রবার চলমান ১০১টি নমুনারই পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকেই আনুষ্টানিক ভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবটিকে ঢাকাস্থ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্টান (আইইডিসিআর) করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নির্ধারণ করেছে। গত পহেলা এপ্রিল থেকে ল্যাবটি চালু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, প্রথম ৬ দিনে ২৪ জন, ৭ এপ্রিল ২৫, ৮ এপ্রিল ২৪ জন, ৯ এপ্রিল ২৭ জন, ১০ এপ্রিল ৩৭ জন, ১১ এপ্রিল ৯ জন, ১২ এপ্রিল ৩২ জন, ১৩ এপ্রিল ২৪ জন, ১৪ এপ্রিল ৩১ জন, ১৫ এপ্রিল ১৭ জন, ১৬ এপ্রিল ৪১ জন, ১৭ এপ্রিল ৩৯ জন, ১৮ এপ্রিল ১৩ জন, ১৯ এপ্রিল ৬৩ জন, ২০ এপ্রিল ৫১ জন, ২১ এপ্রিল ৪০ জন, ২২ এপ্রিল ৬৪ জন, ২৩ এপ্রিল ৫৩ জন ও ২৪ জন ১০১ জন সন্দেহভাজন রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে এই ল্যাবে। সব মিলিয়ে পরীক্ষা হওয়া রোগী সংখ্যা এখন ৭১৫ জন। এদের মধ্যে ১৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসে অস্থিত্ব পাওয়া গেছে।
জেলার প্রথম করোনা রোগীর টেষ্ট হয়েছিল ঢাকাস্থ আইইডিসিআর ল্যাবে। এই রোগীসহ জেলায় ১৪ জন ও নাইক্ষ্যংছড়িতে একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রথমজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।