২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  যারা ক্লাসে ৭০% উপস্থিত থাকবে না তাদের পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া হবে না- শাহাজাহান চৌধুরী   ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান

কক্সবাজারে করোনা মোকাবেলায় বরাদ্দ ১৮৫০ টন চাল ও এক কোটি ২৩ লাখ টাকা

আনছার হোসেন:

বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়ানো করোনাভাইরাসে সরকার আরোপিত বিধিনিষেধে বন্ধ হয়ে গেছে জীবিকার চাকা। অচল হয়ে পড়া সেই মানুষগুলোর মধ্যে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীনদের সহায়তা দিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এক হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৯৬ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ৫ দফায় এই বরাদ্দ পাওয়া যায়।

বরাদ্দ পাওয়া সেই চাল ও নগদ অর্থ থেকে জেলার ৮টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৯ পরিবার হিসেবে এক হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন চাল উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৭৫ লাখ ৮৩ হাজার ১০৮ টাকা ও শিশু খাদ্য কিনতে ২১ লাখ নগদ টাকা উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে জরুরি চাহিদা পূরণে বর্তমানে ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ২০ লাখ ১৭ হাজার নগদ টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য ৬ লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে।

এছাড়াও জেলার ৮ উপজেরায় ৪৯ হাজার ৮১৭ জন উপকারভোগীর কাছে এক কোটি ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা অর্থসহায়তা ও বিভিন্ন ধরণের খাদ্যসহায়তা হিসেবে দুই কোটি ৫৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৬ টাকা পরিমাণের খাদ্যসহায়তা দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুধবার (৬ মে) সকালে এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানানো হয়।

জেলা প্রশাসন দাবি করছে, উপজেলা গুলোতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত চাহিদা অনুসারেই এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত সব উপজেলায় সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ সম্বলিত লোগো ব্যবহার করে অসহায়-দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (্ইউএনও) মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত চাহিদার ভিত্তিতে পরিবার সংখ্যা, দারিদ্রতা ও ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনা করে উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়।

সেই বরাদ্দ অনুযায়ী জেলার ৮টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার মধ্যে কক্সবাজার সদরে ২৬ হাজার ১০২ পরিবার হিসেবে ৩০২ দশমিক ৮ মেট্রিক টন, রামু উপজেলায় ৮ হাজার ৪৫২ পরিবারে ১১৯ মেট্রিক টন, চকরিয়ায় ৩১ হাজার ৮৯৯ পরিবারে ৩১৫ মেট্রিক টন, পেকুয়ায় ১১ হাজার ৮২৬ পরিবারে ১১৮ মেট্রিক টন, মহেশখালীতে ৯ হাজার ৫১৯ পরিবারে ১৫১ মেট্রিক টন, কুতুবদিয়ায় ৬ হাজার ৫০৫ পরিবারে ১০০ মেট্রিক টন, উখিয়ায় ৭ হাজার ৪৮৮ পরিবারে ৬৫ মেট্রিক টন ও টেকনাফে ৫ হাজার ৩৪২ পরিবারে ৬৯ মেট্রিক টন এবং কক্সবাজার পৌরসভায় ১২ হাজার ৪৭৩ পরিবার হিসেবে ১২৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন, চকরিয়া পৌরসভায় ১০ হাজার ৬৬৩ পরিবারে ১১১ মেট্রিক টন, মহেশখালী পৌরসভায় ৩ হাজার ১০০ পরিবারে ৫২ মেট্রিক টন ও টেকনাফ পৌরসভায় ৪ হাজার ৭০ পরিবারে ২২ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

একই অনুপাতে ৭৫ লাখ ৮৩ হাজার ১০৮ টাকা ও শিশুখাদ্য কিনতে ২১ লাখ টাকা উপ-বরাদ্দ হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন- রাজনৈতিক দল, এনজিও, ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা প্রভৃতি উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে।

ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্টানের দেয়া সহায়তার মধ্যে জেলার ৮টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৮১৭ জন উপকারভোগীর মধ্যে ১ কোটি ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা ও বিভিন্ন ধরণের খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২ কোটি ৫৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৬ টাকার সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।

প্রশাসনের দাবি, উল্লেখিত বরাদ্দের বাইরে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের মোবাইলে পাঠানো মেসেজ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ৩৩৩ নাম্বার ফোন কলের মাধ্যমে সহায়তা চাওয়া মানুষদেরও তাৎক্ষণিক ভাবে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা জানান, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে মাসিক ২০ কেজি হারে চাল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কক্সবাজার জেলায় ৭৫ হাজার পরিবার এই সুবিধার আওতায় আসবে। এই বিষয়ে গত ২ মে কক্সবাজার জেলায় ‘কোভিড ১৯’ সংক্রান্ত কাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে একটি সভাও হয়েছে।

জেলার সংসদ সদস্য, মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হওয়া ওই সভায় ৭৫ হাজার পরিবারের বরাদ্দ সর্বশেষ আদমশুমারির জনসংখ্যা অনুযায়ী বিভাজনের সিদ্ধান্ত হয়।

মাসুদুর রহমান মোল্লা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেই বিভাজন অনুযায়ী কক্সবাজার সদর উপজেলার দুই লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ জন জনসংখ্যার মধ্যে ৯ হাজার ৫৫০ জন, রামুতে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ জনের মধ্যে ৮ হাজার ৭৩২ জন, চকরিয়ায় ৪ লাখ ১ হাজার ৭৯৬ জনের মধ্যে ১৩ হাজার ১৫৯ জন, পেকুয়ায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৮ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৬০৯ জন, মহেশখালীতে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৭ জনের মধ্যে ৯ হাজার ৬১০ জন, কুতুবদিয়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৯ জনের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ জন, উখিয়ায় ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭৯ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৭৮১ জন, টেকনাফে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৩ জনের ৬ হাজার ৮২৬ জন, কক্সবাজার পৌরসভায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৭৭ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৫৪৯ জন, চকরিয়া পৌরসভার ৭২ হাজার ৬৬৯ জনের মধ্যে ২ হাজার ৩৭৬ জন, মহেশখালী পৌরসভায় ২৭ হাজার ৩২১ জনের মধ্যে ৮৯৩ জন ও টেকনাফ পৌরসভায় ২৫ হাজার ৫৬ জনের মধ্যে ৮১৯ জন প্রতি মাসে ২০ কেজি চালের বরাদ্দ পাবেন।

তবে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন এনজিও স্থানীয় ভাবে ত্রাণ বিতরণ করায় ওই দুই উপজেলা থেকে ২ হাজার উপকারভোগীর তালিকা কক্সবাজার পৌরসভায় যুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার জনসংখ্যা ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯০ জন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা মনে করেন, ত্রাণ বিতরণে সম্ভাব্য উপকারভোগীর নির্ভুল তালিকা প্রণয়ন একটি কঠিন কাজ। সাধারণত স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রণীত তালিকা-ই চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তির নাম তালিকা হতে বাদপড়া, একই মানুষ একাধিক সুবিধা পাওয়া, বেনামী মানুষের অন্তর্ভূক্তি ইত্যাদি অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে থাকে। কিন্তু ত্রাণ বিতরণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা থাকায় অত্যন্ত স্বল্প সময়ে তালিকা প্রণয়ন করা হয় বলে পুরোপুরি নির্ভুল একটি তালিকা প্রণয়ন করা অনেক সময় কষ্ট সাধ্য হয়।

তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এক্সেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচির সহায়তায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি আশা করছেন, ত্রাণ বিতরণে দ্বৈততাসহ অন্যান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিহার করা সম্ভব হবে।

করোনায় কী কর্মসূচি জেলা প্রশাসনের
জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশব্যাপী যে সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তার অংশ হিসাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন শুরু থেকেই নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকবিহীন করা, বিদেশফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জেলার বাইরে থেকে জনগণের প্রবেশ বন্ধ তথা লকডাউন বাস্তবায়ন করা, অভাবী মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌছে দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, পুলিশ, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যবৃন্দ, আনসার বাহিনীর সদস্যবৃন্দ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

আরও বলা হয়, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার কাজে নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সকল প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন তাদের পাশে রয়েছে। ঘরে বসে নাগরিকগণ যেন প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে পারেন সেজন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে।

সেই বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, জেলা প্রশাসন কক্সবাজার জেলার প্রতিটি মানুষের কল্যাণে তার (জেলা প্রশাসক) উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট। এ কাজে জেলা সংসদ সদস্যগণ, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগ সহায়তা করে যাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসন সম্মানিত রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক ও পেশাজীবী সকলের আন্তরিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।