২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি

কক্সবাজারে দেশের প্রথম ডুবোজাহাজ ঘাঁটি নির্মাণ করছে চীন

চীন থেকে কেনা দুটি ডুবোজাহাজ রাখতে দেশটির সহায়তায় কক্সবাজার জেলায় সামরিক ডুবোজাহাজ ঘাঁটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। এই ঘাঁটি নির্মাণ করতে ব্যয় হবে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এটিই হবে দেশের প্রথম সামরিক ডুবোজাহাজ ঘাঁটি। বিষয়টি বেনারের কাছে নিশ্চিত করেছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান।

এই ঘাঁটি নির্মাণের ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যমের অভিযোগ হচ্ছে, এর ফলে বঙ্গোপসাগরে ভারতকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে চীন। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই সামরিক ঘাঁটি নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ, ডুবোজাহাজ দুটি প্রথাগত ধরনের। ওই দুটি ডুবোজাহাজ রাখতে ও পরিচালনা করতে ঘাঁটি প্রয়োজন। এখানে চীনা সামরিক ডুবোজাহাজ নোঙর করবে না।

“ঘাঁটি না থাকলে সাবমেরিন দুটো রাখব কোথায়?” মন্তব্য করে ফারুক খান বেনারকে বলেন, “আমরা চীনের সহায়তায় কক্সবাজারে সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করছি।”

ফারুক খান সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের সুনির্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে মন্তব্য না করলেও কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ডুবোজাহাজের জন্য ঘাঁটি নির্মাণ করা হবে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে এই কথা জানান বলে তখন এক প্রতিবেদনে জানায় বাসস।

“চীন আমাদের ঘাঁটি নির্মাণে সহায়তা করবে এবং আমাদের নৌ-বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঘাঁটিটি পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। তবে চীনা সাবমেরিন এখানে আসবে না। এই ঘাঁটি আমাদের সাবমেরিন ব্যবহারের জন্য,” বেনারকে বলেন ফারুক খান।

সামরিক ডুবোজাহাজ ঘাঁটি নির্মাণের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে বেনারের পক্ষ থেকে নৌ-বাহিনী গোয়েন্দা শাখা ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগে যোগাযোগ করা হলেও দপ্তর দুটি থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এদিকে ইংরেজি পত্রিকা নিউ এইজ গত মে মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই সামরিক ডুবোজাহাজ ঘাঁটি নির্মাণ করবে চীনা কোম্পানি পিটিআই। আর খরচ হবে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ চলতি বছরে শুরু হয়ে ১০ বছরের মধ্যে শেষ হবে বলেও জানায় নিউ এইজের ওই প্রতিবেদন।

চীনা সহায়তায় সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের মাধ্যমে ভারতকে ঘিরে ফেলতে চীনকে সাহায্য করছে বাংলাদেশ— ভারতীয় গণমাধ্যমের এই অভিযোগ খণ্ডন করে ফারুক খান বলেন, “ভারত অথবা চীন কোনো দেশের দিকেই বাংলাদেশ ঝুঁকে পড়েনি। চীন ও ভারত দুই দেশের সাথেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ চীনের সাথে যুক্ত হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, অথবা ভারতের সাথে যুক্ত হয়ে চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এমন কথা সঠিক নয়।”

ফারুক খান বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ চীন সফরের সঙ্গী ছিলাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী চীনা নেতাদের বলেছেন যে, বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি অনুসারে কাজ করে। আমাদের নীতি হলো, সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়।”

তিনি বলেন, “আমরা বুঝি যে, প্রভাব বিস্তারের জন্য বড় বড় শক্তিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু আমার মনে হয় না কোনো বৃহৎ শক্তি তাদের স্বার্থে আমাদের প্রভাবিত করতে পেরেছে।”

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ২০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে কেনা দুটি পুরোনো সামরিক ডুবোজাহাজ বাংলাদেশকে সরবরাহ করে চীন। এই খবর প্রচারিত হওয়ার পর পরই বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকার এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান বিপিন রাওয়াত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এশিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে সামরিক ডুবোজাহাজ ঘাঁটি নির্মাণের মাধ্যমে ভারতকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলছে চীন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, চীন থেকে সাবমেরিন কেনা এবং সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের মাধ্যমে ভারতের জন্য কোনো হুমকির সৃষ্টি করেনি বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ চীন থেকে যে দুটি সাবমেরিন কিনেছে সেগুলো প্রথাগত প্রকৃতির। সুতরাং, আমি মনে করি না এব্যাপারে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে।”

ইশফাক ইলাহী বলেন, বাংলাদেশ শুধু চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে তা নয়। চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের কাছ থেকে সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে।

তিনি বলেন, “ভারতীয় মিডিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, চীনের সাথে মিলে ভারতকে ঘিরে ফেলতে চীনকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ। তাদের এই অভিযোগটি মাথায় রেখে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য আনতে হবে। ভারত অথবা চীন কোনো দেশের প্রতি ঝুঁকে যাওয়া যাবে না আমাদের।”

আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত বলেন, “বিশ্বে ভারত একটি ‘বড়’ সামরিক শক্তি। আমি মনে করি না যে, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ দুটি পুরোনো সাবমেরিন ক্রয়ের কারণে ভারতীয় নীতি নির্ধারকেরা শঙ্কিত হয়ে যাবেন। বিষয়টি না বুঝে ভারতীয় মিডিয়া এ ধরনের হইচই করছে।”

তিনি বলেন, “চীন আমাদের কাছে সাবমেরিন দুটি বিক্রি করেছে। কাজেই তারা আমাদের সাবমেরিন দুটি ব্যবহার করতে সহায়তা করবে, আমাদের নৌ-বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, ঘাঁটি নির্মাণে সহায়তা করবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশী ফায়েজ আহমাদ বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ভারতকে দরকার। আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য চীনকে দরকার।”

তিনি বলেন, “ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। ভৌগোলিক কারণে আমাদের নিরাপত্তার জন্য ভারতকে প্রয়োজন। আবার ভারতের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশকে দরকার। সুতরাং, বাংলাদেশ ভারতের জন্য কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে না।”

মুনশি ফায়েজ বলেন, “আমি মনে করি, ভারতের নীতি নির্ধারকেরা খুব ভালো করে জানেন যে, আমরা তাঁদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করব না বা করতে পারব না। সুতরাং, এটি নিয়ে কারও মাথাব্যাথার কোনো কারণ নেই।”

এদিকে চীন থেকে কেনা সাবমেরিন দুটো নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও সাগরের নিচে সম্পদ অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বেনারকে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।