২১ এপ্রিল, ২০২৫ | ৮ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২২ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী

কক্সবাজারে নির্যাতিত আয়াতের বাড়িতে ইউএনও- ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এএইচ সেলিম উল্লাহ,(সম্পাদক): কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া কেজি স্কুলে সংগঠিত ন্যাক্কারজনক ঘটনায় পুরো জেলায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সুশিক্ষিত নাগরিক গড়ার কারিগরদের হাতে শিক্ষালয়ে বর্বরোচিত ঘটনায় লজ্জা প্রকাশ করছেন প্রখ্যাত শিক্ষগণও। নড়েচড়ে বসেছেন প্রশাসন। ঘটনায় জড়িত তিন শিক্ষককে শোকজ পাঠিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা। আর নির্যাতনের বিচার পেতে কক্সবাজার সদর থানায় ফৌজদারি মামলা করেছেন নির্যাতিতের স্বজনরা। এসব কারণে নিজেদের অপকর্মে ঢাকতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন অভিভাবককে পশুর মতো বেঁধে নির্যাতনকারী শিক্ষক নামধারী নরপিশাসরা।
এদিকে, ঘটনার মূল হুতা মাস্টার নামের কলঙ্ক জহিরুল হক, বোরহান উদ্দিন, নজিবুল্লাহ, নুরুল আবছার, ওবায়দ উল্লাহ, স্কুল সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী, দপ্তরি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন রোববার সন্ধ্যা থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে। প্রথমে স্কুলের নামে চালানো ফেসবুক আইডি থেকে বিরোচিত (!) ঘটনাটি পোস্ট করে প্রচার করা হলেও ধিক্কার উাঠার পর আইডিটাই মুছে ফেলা হয়েছে। আর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রাতভর ঘটনাকারিরা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও প্রশাসনের কর্তকর্তাদের শরণাপন্ন হন বলে দাবি করেছে নির্ভরযোগ্য সূত্র।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মূহুর্তে ছড়িয়ে পড়া ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সবাই সোচ্চার হওয়ায় অপরাধীরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোন পক্ষ থেকে আশ^াস না পাওয়ায় ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে তারা। কিভাবে ঘটনার শিকার আয়াত উল্লাহকে ফাঁসানো যায় সেফন্দি আটছেন তাদের দোসররা। ঘটনা উল্টোপথে চলাতে ইতোমধ্যে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মহলটি।
তবে, সোমবার দুপুরে নির্যাতনের শিকার আয়াত উল্লাহর সাথে দেখা করতে তার বাড়ি যান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্সসহ সামাজিক নেতারা।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি কথা বলছে। দু:খ ও লজ্জাজনক ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ নেই। অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে ইতোমধ্যে শোকজ পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভাবে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার আয়াত উল্লাহ বাদি হয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় একটি এজাহার জমা দেয়া হয়েছে কক্সবাজার সদর থানায়।
এামলায় বাদি উল্লেখ করেন, নির্যাতনকারীরা জামায়াতের বড় মাপের নেতা হওয়ায় পুলিশ ও সাংবাদিকের কাছে মুখ না খুলতে হুমকি দিচ্ছেন। যেকোন মুহুর্তে তারা তার পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষতি করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এজাহার জমা দেয়ার কথা স্বীকার কওে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি সবার নজরে এসেছে। আমিসহ পুলিশ টীম রোববার রাতেই নির্যাতিত আয়াতের বাড়িতে যাই। তিনি এজাহার জমা দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হবে।


অসমর্থিত স্থানীয় অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছে, খরুলিয়া কেজি ও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির নেতারা জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। আর খরুলিয়াটা জামায়াতি এলাকা হিসেবে নব্বইয়ের দশক থেকে সমাদৃত। সাঈদীর ফাঁসির আদেশ ঘোষনার পর কক্সবাজারে যে কয়েকটি স্থানে কঠিন প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হয় সেখানে খরুলিয়া ছিল অন্যতম। আয়াত উল্লাহও নির্যাতনকারিদেরই একজন সহযোগি। শিক্ষা ব্যবসার আড়ালে তাদের দীর্ঘদিনের অপকর্ম তিনিও জানতেন। কিন্তু নিজের উপর সে অপকর্ম ভর করায় তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়ে মধ্যযোগীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে গ্রুপটির রাজনৈতিক গুরুরা কৌশলে আয়াত উল্লাহকে ম্যানেজ করে সমস্যাটি দ্রুত ধামাচাপা দিয়ে দিবেন। এবং প্রচার করা হবে এটি একটি অনাকাঙ্খিত ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ভূল বুঝাবুঝির কারণে এমনটি হয়েছে, নির্যাতনকারিরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিরাও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নির্যাতনকারি ও নির্যাতিত ব্যাক্তি একই রাজনৈতিক ঘরানার। তারা ব্যবসা প্রসারে একে অপরের সহযোগি। বাইরের লোকজন অন্যায় এ ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও জামায়াত নেতারা উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের হাত করে ঘটনাটি সমাধানের চেষ্ঠায় রয়েছেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠা ছেলে শাহরিয়ার নাফিস কাঙ্খিত ফলাফল না করায় প্রথম শ্রেণীর পরীক্ষার খাতা দেখতে স্কুলে গিয়েছিলেন নাফিসের পিতা চিত্রকর আয়াত উল্লাহ। খাতা দেখানোর পরিবর্তে তাঁর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন স্কুলটির প্রিন্সিপাল পরিচয়দানকারি বোরহান উদ্দিন। তর্কের একপর্যায়ে এবার গত বছরের ভর্তি ফি’র দেড়গুণ নেয়ার বিষয়টিও তোলে ধরেন আয়াত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাশর্^বতী খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে মোবাইলে ডেকে নেন বোরহান। একসময়ের খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াতকে এখনো নিজ শিক্ষার্থী মনে করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিলেন জহিরুল হক। এরও প্রতিবাদ করছিলেন আয়াত। একপর্যায়ে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলেদেন জহির ও বোরহান। হোস্টেলে থাকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডেকে রশি এনে ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যাওয়া আয়াতকে মধ্যযোগীয় কায়দায় পেটান শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই মিলে। এ ঘটনাটি বেয়াদবির শাস্তি বলে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আইডিতে স্বগর্বে প্রচারও করে তারা। ছড়ানো হয় নির্যাতনের ভিডিওটিও। পরে ভিউয়াররা এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে সোচ্চার হবার পর তা নিউজ আকারে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসনসহ সর্ব মহল।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।