কক্সবাজারে গত রোববার বৃষ্টিপাত একেবারেই হয়নি। সারাদিন ছিলো রোদ। ঢলের পানি নেমে যাওয়া খাল বিল-নদী নালা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এতে করে জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। পানি কমলেও দূর্ভোগ কমেনি পানিবন্দি হয়ে পড়া মানুষগুলো। বন্যা দুর্গতরা ঘরে ফিরতে শুরু করলেও দুর্ভোগ যেন তাদের পিছুই ছাড়ছে না। তাদের খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটের পাশাপাশি অনেক স্থানে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। অনেকেই গবাদিপশুকে খাদ্য দিতে না পেরে বাজারে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে জেলার ৪টি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত সাত দিনে পানিতে ভেসে গিয়ে পাহাড় ধ্বস দেয়াল ধ্বস,গাছ চাপা পড়ে এবং বিদ্যুৎ স্বষ্ট হয়ে গত ৪দিনে জেলার ২৪ জনের মৃত্যুও খবর পাওয়া গেছে।
বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলার ৪০টি গ্রামের মানুষের বাড়ি-ঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বন্যার পানি হ্রাস পাওয়ায় বন্যা দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। বন্যার সময় বেশিরভাগ এলাকা দীর্ঘ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে ফসলসহ তৃণজাতীয় খাদ্য স্বমূলে নষ্ট হয়। এতে করে বন্যা দুর্গত এলাকায় গবাদিপশুর চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। স্বল্প আয়ের চাষীরা সারা দিন মাঠে ঘুরেও গো-খাদ্যের কাঁচাঘাস খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেকেই সংসারের খরচ পাশাপাশি চাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। ধারাবাহিক বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পাহাড় ধ্বস, পানিতে ডুবে ও গাছ চাপায় গত ৪ দিনে কক্সবাজার জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক গ্রামের গ্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অভিযোগ, দুর্গতদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবে প্রশাসনের দাবি, প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় কক্সবাজার জেলার সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, রামু, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। অনেক স্থানে বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো রাস্তাঘাট ডুবে রয়েছে, জলকাদায় ভরে গেছে। অন্যদিকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ ত্রাণ সামগ্রী না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানিয়েছেন, সরকারিভাবে যে বরাদ্দ দুর্গত এলাকায় দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অবশ্য কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানালেন, প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলায় বন্যাদুর্গত লোকদের জন্য ১৪৫ মে.টন চাল, নগদ ১১ লক্ষ টাকা , ৫০বস্তা ছিড়া বরাদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মৃত পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা করে নগদ সাহায্য দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় ১৪১টি আশ্রয় কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ২’শ জনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে ৮ টি কন্ট্রোল রুম।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে জেলার ৪টি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ৭দিনে পানিতে ভেসে গিয়ে পাহাড় ধ্বস দেয়াল ধ্বস,গাছ চাপা পড়ে এবং বিদ্যুৎ স্বষ্ট হয়ে গত ৪দিনে জেলার ২৪ জনের মৃত্যুও খবর পাওয়া গেছে। চকরিয়া,রামু এবং পেকুয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার বাড়ীঘর এখনো পানির নিচে রয়েছে। জোয়ারের পানিতে রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে যান চলাচল আংশিক বন্ধ রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।