সায়ীদ আলমগীর ::
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণে বিজিবির জব্দ করা বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রকার মাদক ধ্বংস করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৩৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন সদর দফতর প্রশিক্ষণ মাঠে বুধবার ‘মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ’ অনুষ্ঠানে এসব মাদক ধ্বংস করা হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মাদক সামাজিক ব্যাধি। এটি নিজের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে একটি পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা দুর্বার গতিতে চলছে। মাদক নিরোধ সম্ভব না হলে দেশের সেই উন্নয়ন যাত্রা থমকে যেতে পারে।
রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজেদুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সে নীতিতে কাজ করছে সরকার। মাদক সমাজকে ধ্বংস করছে। এতে পরিবার ও একটি দেশ ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়। তাই মাদকের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। তাদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা হলে বাকিরাও সতর্ক হবে।
মন্ত্রী বলেন, পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে। মাদক নির্মূলে কঠোর হয়ে কাজ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে জনপ্রতিনিধি, সমাজপতি সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শপথ নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সমাজে যেন মাদক ও মাদক ব্যবসায়ী স্থান না পায়। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে আসবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মতে, সন্ত্রাস, জঙ্গী দমনে যেমন আমরা সফল হয়েছি, মাদক নির্মূলেও সফল হতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে, আমরা সফল হব। আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হবো। এজন্য একযোগে কাজ করতে হবে। অন্যথায় নতুন প্রজন্ম পথ হারিয়ে ফেলবে।
বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজেদুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, অনুষ্ঠানে এক কোটি ৭৭ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৫ পিস ইয়াবা, ৫ হাজার ৭৯৯ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ৩৩ হাজার ৫৫৫ ক্যান বিয়ার, এক হাজার ৭৩৬ লিটার বাংলা মদ, ১৬ কেজি গাঁজা, ১৮ হাজার ৭৫০ পাতা সিডিল ট্যাবলেট, ৫ হাজার পাতা জুলিয়াম ট্যাবলেট ধ্বংস করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিজিবি কক্সবাজারের রিজয়নের আওয়াতায় বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক জব্দ করা মাদকের হিসাবও দেয়া হয়েছে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত তিন বছরে মালিকসহ ৯১ লাখ ৬২ হাজার ইয়াবা, তিন হাজার ৮৩৭৩ ক্যান বিয়ার, ১১৯ বোতল বার্মিজ মদ, ৪৩ লিটার বাংলা মদ, ১ কেজি গাজা, ৩৮১ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।
এছাড়াও মালিকবিহীন জব্দ হয়েছে, ২ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ইয়াবা, ৩৭ হাজার ৬৫৮ ক্যান বিয়ার, ৫৩৫ বোতল বার্মিজ মদ, ২ হাজার ৬ লিটার বাংলা মদ, ৩০ কেজি গাঁজা ও ১৫শ ২৪ বোতল ফেনসিডিল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল ফোরকান আহমেদ, আওয়মী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তাফা, কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার সুইটিসহ সামরিক-বেসামরিক, বিচার বিভাগ ও শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে চেকপোস্টের কার্যক্রমের ওপর ডেমো ও রিজিয়নের বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বিজিবি জানিয়েছে, গত ৩ বছরে ইয়াবা উদ্ধারের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের রামু সেক্টর। তারা ৩ বছরে মোট ৩ কোটি ১৬ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।