বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ পুরো অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, শুধু পোশাক খাতের রপ্তানি কার্যাদেশ স্থগিত হওয়ার ফলে দেশের নিম্ন আয়ের প্রায় এক কোটি মানুষ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত পৌনে দুই শ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির আদেশ বাতিল হয়েছে। এই সংকট উত্তরণে সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সংগঠনের সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, বিজিএমইএ হটলাইন অনুসারে গতকাল পর্যন্ত ১৭৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এ তথ্য এক হাজার ২৬৭টি কারখানার। এসব কারখানায় ১২ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করে। পোশাক খাতের এমন ধসের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের বড় উৎস তৈরি পোশাক খাত। এ খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সংগঠিত ও অসংগঠিত নিম্ন আয়ের মানুষ।
তিনি বলেন, পোশাক খাতের ৪০ লাখ শ্রমিকের পাশাপাশি এর সঙ্গে প্রায় এক কোটি লোক জড়িত। তারা এই মন্দায় বড় ধরনের সংকটে পড়বে। এ ছাড়া হোটেল ও রেস্তোরাঁ শ্রমিক, দিনমজুর, কাজের বুয়া, ফেরিওয়ালা এবং রিকশাওয়ালা এমন অসংগঠিত খাতের অসংখ্য মানুষ বিপদগ্রস্ত হবে। এ জন্য সরকার ও উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তবে এমন সংকটেও পোশাক খাতের শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের মজুরি পাবে উল্লেখ করে রুবানা হক বলেন, শ্রমিকরা আমাদের অংশ। আজকের পোশাক খাতের উন্নতির সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ তাদের। তাদের আমরা বাদ দিয়ে কোনো কিছু ভাবছি না। এ ছাড়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে তারা আমাদের পাশে আছে। প্রধানমন্ত্রী যত দিন আমাদের পাশে থাকবেন; তত দিন আমরা পানিতে পড়ব না। এক প্রশ্নের জবাবে রুবানা হক বলেন, পোশাক কারখানা বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে আগামীকাল (২৫ মার্চ)।
এদিকে গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, তৈরি পোশাক কারখানার সহযোগিতা আমাদের দরকার। তারা আমাদের মাস্ক ও জীবাণু প্রতিরোধকারী পোশাক সরবরাহ করছে। এরই মধ্যে ১০ হাজার নেওয়া হয়েছে। আরো ৯০ হাজার মাস্ক সংগ্রহ করা হবে তৈরি পোশাক কারখানা থেকে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বাব অব কমার্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনার প্রভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে। বিশেষত বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।