আলেকিন আরবি শব্দ। এটি বাংলা অর্থ দাড়ায় একান্ত বিশ্বস্ত। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারে সেনা ও রাখাইন উগ্রবাদিদের হাতে জ¦ালাও পুড়াও সহ নানান নির্যাতনের পর রোহিঙ্গা যুবকেরা তাদের শক্তি বৃত্তি করতে এলাকা ভিত্তিক বেশ কিছু যুবকদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরী করেন। এই সংগঠনটির নাম হচ্ছে আলেকিন। কিন্তু সংখ্যায় খুবই কম হওয়াতে মিয়ানমারের সেনা ও রাখাইন উগ্রবাদিদের নির্যাতনে বেশিদিন ঠিকে থাকতে পারেনি। নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে চলে আসে পাশ^বর্তী দেশ বাংলাদেশে। সীমান্তের আইনশৃংখলাবাহিনীর চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নেয় টেকনাফের লেদা, মুছনি, শাপলাপুর, উখিয়ার কুতুপালং এবং বালুখালীতে। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিত ভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলেও তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারো সংগঠিত হয়ে উঠে স্ব স্ব ক্যাম্প ভিত্তিক। সৃষ্টি করে চলেছে নৈরাজ্য, চাঁদাবাজী, অপহরণ, খুন,ঘুম সহ নানান অপকর্ম। গত সপ্তাহ খানেক পুর্বে এক সংগঠনের সদস্যরা মোঃ শফি প্রকাশ বলি নামের এক রোহিঙ্গা নাগরিককে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপন না দেওয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পের অদূরে জঙ্গলে নিয়ে খুন করেছে। একই ভাবে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আনরেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের সি-ব্লকের মোঃ আইয়ুব (৩৪ কে মুক্তিপনের জন্য অপহরণ করেছে উক্ত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা।
অপহৃত মোঃ আইয়ুবের স্ত্রী নুর আলকিস(২৮) বলেন, তার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ আনরেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের সেক্রেটারী দায়িত্ব পালন করে আসছে। নতুন করে অনুপ্রবেশকারী আলেকিন জঙ্গি সংগঠনের লোকেরা আমার স্বামী কারনে সাধারণ নিরহ রোহিঙ্গাদের নিহত থেকে চাঁদাবাজী করতে পারছেন বিধায় এরা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সে আরো বলেন, আমি অপহনকারীদের দেখেছি, এদের রয়েছেন, আলেকিনের অন্যতম নেতা জাবের (৩০), সেলিম (২৮) কলিম (৩৩) মনির আহমদ (৩২), খুইল্যা মিয়া প্রকাশ মুন্না (৩৫) এবং বালূখালী ক্যাম্পের ইসলাম (৩৩) ও কালু (৩৭)। এদেরকে আটক করে জিজ্ঞাবাদ করা হলে অবশ্যই আমার স্বামীর হদিস পাওয়া যাবে।
গোপন সুত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে উখিয়ার কুতুপালং এবং বালূখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে শতাধিক আলেকিনের সদস্য রয়েছে। যাদেরকে চিহ্নিত করতে কষ্ট হচ্ছে সেখান অপরাপর রোহিঙ্গাদের। এসব জঙ্গি সংগঠনের লোকেরা গোপনে নির্জণ এলাকায় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
বিশ^স্থ সুত্রে আরো জানা গেছে, আলেকিন সংগঠনের মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। উক্ত মাধ্যমে বিদেশ টাকা আনা, নতুন সদস্য ভর্তি, লোকজন অপহরণ পূর্বক মুক্তিপন আদায় সহ কুতুপালং ক্যাম্প থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা চালান পাচারেও তাদের হাত রয়েছে। আনরেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের সি ব্লকের এক বাসিন্দার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলেকিনের সদস্যরা প্রশাসনের তৎপরতায় কিছুদিন আত্মগোপনে চলা ফেরা করলেও বর্তমানে প্রতিনিয়ত ২০/২৫জন দল বেধে সশস্ত্র মহড়া দিতে থাকে আমাদের ব্লকে গুলোতে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে লাশ ঘুম করা হবে বলে হুমকি দেওয়ায় রোহিঙ্গারা ভয়ে মূখ খুলতে পারছেনা।
আনরেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্প কমিটির সেক্রেটারী মোঃ আইয়ুবের অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, আমি নিজেও সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু কোথাও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সন্দেহজনক জিয়াবুল নামের এক ব্যক্তি সহ ২জন আটক করে জিজ্ঞাবাদ করা হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।