বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ ইয়াবা পাচার থেমে নেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক পথে। নিত্য-নতুন কৌশল পাল্টে ও অভিনব কায়দায় পাচারকারীরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক পথে ইয়াবা পাচার করছে। প্রতিদিন এ সড়কের কোন না কোন অংশে ইয়াবার ছোট-বড় চালান পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। এ সড়কের লোহাগাড়া অংশে পুলিশের হাতে যারা ধরা পড়ছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ অভিনব কায়দায় পাচারকারী।
বিভিন্ন সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে ইয়াবার এতো বেশি চাহিদা যে, মিয়ানমারের উৎপাদিত ইয়াবা টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির প্রায় ৩৩টি সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। সড়ক পথে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান। তারপরও চোরাচালানকারীরা বিভিন্ন কৌশল ও রুট পরিবর্তন করে ইয়াবা পাচার করছে। সড়ক পথে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লা হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে চলে যাচ্ছে। নীল, লাল রংসহ বিভিন্ন রং’র ছোট প্যাকেটে ২শ’টি ট্যাবলেট প্যাকেটজাত করে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। স্থানভেদে প্রতি পিস ট্যাবলেটের দাম ১৮০-৫০০ টাকা। ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা এবং দেশের যুবসমাজ ও অভাবী নারী-পুরুষকে। পাচারকারীরা কখনো যাত্রীবেশে কখনো চালকের আসনে কখনো ভিক্ষুক-প্রতিবন্ধী, কখনো ভিআইপি গাড়ি করে ও কখনো সুফি সেজে পাচার করছে। কক্সবাজার থেকে প্রাইভেট গাড়ি, মাইক্রোবাস, দূরপাল্লার বাস, অ্যাম্বুলেন্স ও মালবাহী-লবনবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্নস্থানে চলে যাচ্ছে।
অন্যদিকে সড়ক পথে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮টি চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেক পোস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকার পরও পাচারকারীরা কৌশল পাল্টে ইয়াবা পাচার করছে। প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে শত শত ও হাজার হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট। এ মাদকদ্রব্য থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে। পাচারের রুট হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলের সড়ক- উপসড়ক। দেশীয় চোরাচালানী ও প্রভাবশালীরা নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার-পাল্টে পাচারকারীদেরকে দিয়ে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে। এতে আক্রান্ত হচ্ছে যুব সমাজ।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ জানান, মাদকদ্রব্য ইয়াবা সেবনে শরীরে নানা জটিল রোগ হয়। ইয়াবায় ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এমফিটামিন রয়েছে। এটি সেবনে কিডনি নষ্ট, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসসহ হার্টএ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। এক পর্যায়ে কর্মশক্তি ও উদ্যম হারিয়ে শারীরিক-মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে জীবনের আলো নিভে যায়।
লোহাগাড়া থানার ওসি মো. শাহজাহান পিপিএম জানান, ইয়াবা পাচারে পাচারকারীরা যত কৌশল অবলম্বন করুক না কেন পার পাবে না। ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স। উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক পথে ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণে লোহাগাড়া থানা পুলিশ সবসময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ফলে পাচারকারীরা রেহাই পাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুব আলম জানান, ইয়াবা নেশা জাতীয় মরণঘাতি মাদকদ্রব্য। এটি সেবনে নানা মারাত্মক রোগ হয়। দেশের যুব সমাজ এটির প্রতি আসক্ত হয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলায় মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে শাস্তির ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে লোহাগাড়ায় অর্ধ শতাধিক ইয়াবাসেবককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদেরকে মাদকদ্রব্যের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।