দলীয় মনোনয়ন না জোটায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদে আসেন। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকে ২০১৭ সালের ১৪তম অধিবেশন পর্যন্ত স্বতন্ত্র হিসেবেই ভূমিকা রাখছিলেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হওয়ায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় অনেকটা একা হয়েই পড়েছিলেন তারা। এলাকার উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্রভাবটাই ছিল বেশি। স্বতন্ত্র বলে প্রশাসনের সহযোগিতাও সেভাবে জোটেনি এদের ভাগ্যে।
সংসদে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার চেষ্টা করলেও গুরুত্ব পায়নি তাদের কথাগুলো। সব দিক দিয়ে হোঁচট খেয়ে অবশেষে দলে ফেরেন এসব সদস্য। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আসায় আওয়ামী লীগে ফিরেছেন তারা। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন এরা। ওইসময় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এখন সেইসব আসনেই আবারও মনোনয়নের টিকিট পাওয়ার আশা করছেন তারা। এতে ওইসব আসনের আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে সংসদে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বললেও এলাকার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি এসব এমপির। বিশেষ করে ঝিনাইদহ-২ আসনের সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। সংসদে মাঝে মাঝে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলে হাজিরা নিশ্চিত করেই চলে যেতেন।
এনিয়ে সংসদে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া তাকে একদিন সতর্ক করে বলেছিলেন, আপনারা অধিবেশনে যোগ দিয়ে হাজিরা নিশ্চিত করে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেই চলে যান। এই রেওয়াজ চলবে না। পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলতে চাইলে অপেক্ষা করতে হবে। একবারে শেষে সময় দেব।
তাহজীব আলম সিদ্দিকীর নির্বাচনী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি নির্বাচনী এলাকায় খুব একটা যান না। নিজের ব্যবসা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন।
একই চিত্র অন্য স্বতন্ত্র সদস্যদের বেলায়ও। তারাও এলাকাতে সেভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেননি। বিএনপিসহ বড় একটি রাজনৈতিক জোট ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করায় সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এমপি বনে যান এদের মতো অনেকেই।
দশম সংসদে ১৬ জন স্বতন্ত্র এমপি’র মধ্যে ১১ জনের সঙ্গে গত ৩ মে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সংসদীয় বোর্ডের সেক্রেটারি নূর-ই আলম চৌধুরী, প্রধান হুইপ আ.স.ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম।
দীর্ঘদিন ধরেই তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সম্মতি পাওয়ার পর তাদের যোগদান নিশ্চিত হয়।
যারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তারা হলেন:
গাইবান্ধা-৮ এর আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ-৩ এর ছলিম উদ্দীন তরফদার, কুষ্টিয়া-১ এর রেজাউল হক চৌধুরী, ঝিনাইদহ-২ এর তাহজীব আলম সিদ্দিকী, যশোর-৫ এর স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা-৭ এর হাজী মো. সেলিম, নরসিংদী-২ এর কামরুল আশরাফ খান, নরসিংদী-৩ এর সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মৌলভীবাজার-২ এর আব্দুল মতিন, কুমিল্লা-৩ এর ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও কুমিল্লা-৪ এর রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
যোগ দেননি পিরোজপুর-৩ এর রুস্তম আলী ফরাজী, ফরিদপুর-৪ এর মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, পার্বত্য রাঙামাটির ঊষাতন তালুকদার, ফেনী-৩ এর রহিম উল্লাহ, মেহেরপুর-২ এর মকবুল হোসেন।
স্বতন্ত্র এমপিদের কোনো দলে যোগদানের বিষয়ে সংবিধানে কোনো ব্যাখা নেই।
এবিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াস সদস্য মো. ফখরুল ইমাম বলেন, স্বতন্ত্র এমপিদের দলে যোগদানে সংবিধানে কোনো ‘বার’ (বাধা)নেই। শুধু যারা কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করে পরে অন্য দলে যোগদান করেন তাদের ক্ষেত্রে একটা বিধান রয়েছে। ওই দল থেকে পদত্যাগ করার পর অন্য দলে যোগ দিতে হয়। এছাড়া কোনো বিধান নেই। যারা যোগ দিয়েছেন তাদের সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এবার তারা দলে ফিরেছেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, আমরা তো আসলে আওয়ামী লীগই করতাম। তখন মনোনয়ন পাইনি বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। আগামী নির্বাচনে যাতে কোনো কোন্দল সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সবাইকে ডাকা হয়েছে।
দশম সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন ২৭৬ জন, ওয়াকার্স পার্টির ৭ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) –এর ৬ জন, তরিকত ফেডারেশনের ২ জন, জাতীয় পার্টির (জাপা) ৪০ জন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর ১ জন, স্বতন্ত্র ১৬ জন এবং সংরক্ষিত ৫০ জন সদস্য।
স্বতন্ত্র ১২ জনের যোগদানের ফলে এখন আওয়ামী লীগের সদস্যসংখ্যা ২৮৮ জন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোটের কোনো প্রার্থী অংশ গ্রহণ করেননি।
সূত্র- বাংলানিউজ
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।