বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই আসন চূড়ান্ত করলেও একটি নিয়ে টানাটানি চলছে। তিনি ফেনী-১ ও বগুড়ার ৭ আসন থেকে নির্বাচন করবেন এটি নিশ্চিত। এবার ঢাকা-৬ যেটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন সেটিতে করতে চাইলেও অনেকে বলছেন সিলেট সদর থেকে লড়তে। তিনি প্রার্থী হলে সিলেট সদর আসন নিশ্চিত হবে। দলীয় সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া চান সিলেট সদরে খন্দকার আব্দুর মুক্তাদিরকে দলের মনোনয়ন দিতে। লন্ডনে নির্বাসিত পুত্র তারেক রহমানেরও তার জন্য সবুজ সংকেত রয়েছে। ভদ্র, বিনয়ী, ব্যবসায়ী খন্দকার মুক্তাদির দীর্ঘদিন ধরে সিলেট সদর আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে আসছেন। তার পিতা খন্দকার আব্দুল মালিক ১৯৭৯ ও ৯১ সালের নির্বাচনে সিলেট সদর থেকে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন। ৯১ সালের নির্বাচনে সিলেট বিভাগে বিএনপি একটি আসনই লাভ করেছিল, যেটি খন্দকার আব্দুল মালিকের সিলেট সদর।
রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত, সিলেট সদর যার, সরকার তার। বিএনপির কেউ কেউ বলছেন, সিলেট সদরে খালেদা জিয়া প্রার্থী না হলে পুত্রবধু সিলেট কন্যা ডা. জোবাইদা রহমানকে প্রার্থী করতে। পারিবারিক ইমেজ ছাড়াও এই নারীর ব্যক্তিগত ক্লিন ইমেজ রয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার প্রশংসা করেছেন। অনেকে মনে করেন, জোবাইদাকে নামালে বিএনপি সিলেট বিভাগেই নয়; জাতীয় নির্বাচনেই বড় ধরণের সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু জোবাইদার রাজনীতিতে আসার প্রতি বরাবরই অনীহা। জোবাইদা আনা না হলে খন্দকার মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেকে মনে করেন, ঢাকার একটি আসন থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচন না করলে ধানের শীষের পক্ষে ঢেউ উঠবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোন আসনগুলো থেকে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। ঢাকা, সিলেট ও বগুড়া থেকে তার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভবনা রয়েছে সবচেয়ে বেশি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীন নাকি সহায়ক সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। তবে থেমে নেই রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রস্তুতি। অন্যান্য দলের মতো বিএনপিও ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ জরিপ করছে। আগ্রহী প্রার্থীরাও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বাড়িয়ে দিয়েছেন গণসংযোগ।
বিএনপি নেতারা কে কোথায় প্রার্থী হবেন তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় পর্যায়ে আগ্রহ রয়েছে। আর দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কোন আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিয়ে রয়েছে বাড়তি কৌতুহল। এমনকি আদালতে সাজা পাওয়া তারেক রহমানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও আসন নিয়েও আলোচনা শোনা যাচ্ছে দলের ভেতর।
আগে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ ছিল। নতুন নিয়মে তা তিনটিতে নামিয়ে আনা হয়। যা ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে থেকে কার্যকর হয়। সে অনুযায়ী সারাদেশের যেকোনো তিনটি আসন থেকে অংশ নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়া আগের নির্বাচনগুলোতে প্রতিবার বগুড়া, ফেনী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে নির্বাচন করেন এবং প্রতিবারই সব আসনে জয়ী হন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া। খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭(গাবতলী-শাহাজাহানপুর) আসনে নিয়মিত নির্বাচন করে জয়ী হয়ে আসছেন। এবার যেকোনো একটি আসন তিনি দলের অন্য কারো জন্য ছেড়ে দিতে পারেন বলে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
গুঞ্জন আছে, আগামী নির্বাচনে দল অংশ নিলে খালেদা জিয়া কেবল বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। সদর আসনে তারেক রহমানকে নিয়ে চিন্তা করলেও দেশে ফেরার মতো পরিস্থিতি না হওয়ায় বিকল্প প্রার্থী হিসাবে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে আছেন। শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ দুর্নীতি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুদ্রা পাচার মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকা-৫ বা ৬ ও সিলেট থেকেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা চলছে দলে। ঢাকা-৬ আসনের নিয়মিত প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা সর্বশেষ ২০০৮ সালে পরাজিত হন। বর্তমানে খোকা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেই সঙ্গে তাকে দুর্নীতির মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন এখান থেকে প্রার্থী না হলে খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাজী লিটন বা বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর শিকদার প্রার্থী হতে পারেন। ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী) আসনে খালেদা জিয়া নির্বাচন না করলে প্রার্থী হতে পারেন সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন সিলেট-১। এখানেই রয়েছে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহপরানের মাজার। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মাজার জিয়ারত করেই শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রচলিত আছে, এ আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন, সে দল সরকার গঠন করে। গত প্রতিটি নির্বাচনে এর প্রমাণ মিলেছে।
এবার আসনটি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভবনা বেশি। সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি ইতিমধ্যে সিলেট আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন আভাস দিয়েছেন।
এছাড়া, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসন থেকেও প্রার্থী হতে পারেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত নির্বাচনে এ আসন ছিল বিএনপির দখলে। খালেদা জিয়া এখান থেকেই সর্বাধিক পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও ২০০১ সালে জয়লাভের পর তার ছেড়ে দেয়া আসনে উপনির্বাচনে এমপি হন ছোট ভাই প্রয়াত মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা মন্তব্য করতে চাননি। তবে সাদেক হোসেন খোকার ঘনিষ্ট এক নেতা জানান, সাজা হওয়ায় খোকা এবার নির্বাচন করতে পারবেন না, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তাই তিনি তার ছেলে ইশরাক হোসেনকে প্রার্থী করার চেষ্টা করছেন। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন ওই আসন থেকে নির্বাচন করলে সেটা হবে সবচেয়ে খুশির খবর।
অন্যদিকে, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের মন্তব্য, বগুড়ার ওই দুই আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে দলের হাইকমান্ড। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আগামী নির্বাচনে বগুড়ার ৮০ ভাগ ভোট ধানের শীষ প্রতীকে যাবে।
উল্লেখ্য, বিএনপি সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়া জয়ী হলেও পরে আসনটি ছেড়ে দেন। উপনির্বাচনে জয়ী হন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
সূত্র-পূর্বপশ্চিম
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।