বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন প্রায় এক দশক হলো। দীর্ঘদিন ধরে আছেন বিরোধীদলে। পারিবারিক, মানসিক এবং রাজনৈতিক চাপে এখন যেন অনেকটাই নুয়ে পড়েছেন। তবে সব চাপ সামলে উঠলেও মামলার বেড়াজালে ক্রমশই বন্দি হয়ে পড়ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সময়ের ব্যবধানে বিএনপি নেত্রীর দৌড় অনেকটাই বেড়েছে। তবে সেটা দল বা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নয়। আদালতপাড়ায় খালেদা জিয়া এখন নিত্যদিনের ইস্যু। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাকে দেখা না গেলেও, আদালত প্রাঙ্গণে প্রায় প্রতি মাসেই তাকে দেখা যায়।
গত ১০ বছরে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা ও মানহানির অভিযোগে ৩৭টি মামলা হয়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই তার হাজিরার দিন নির্ধারিত থাকে। ৩৭ মামলার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে দুটি, একটি মামলা আত্মপক্ষের সমর্থন, সাক্ষীর জন্য দুটি, ১৪টি অভিযোগ গঠন শুনানির অপেক্ষায় ও দুটি পলাতকদের পত্রিকা বিজ্ঞাপ্তির জন্য রয়েছে। আর বাকি ১৬টি মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা দুটি রায়ের সন্নিকটে রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করছেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
যে দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা : ভুয়া জন্মদিন পালন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৭ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অপরদিকে ২৩ আগস্ট নড়াইলে একটি মানহানির মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
আত্মপক্ষ সমর্থনের মামলা : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের আট আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক। এ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।
সাক্ষীর জন্য দুই মামলা : ৪৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগে সোনালি ব্যাংক একটি মামলা দায়ের করে। ঢাকার অর্থঋণ আদালতে মামলাটি সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে। অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তারেকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষীর জেরার জন্য ধার্য রয়েছে।
অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় ১৪ মামলা : দারুসসালাম থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলা, যাত্রাবাড়ী থানার দুই মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি, গ্যাটকো, নাইকো দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের একটি করে মোট ১৪টি মামলা অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।
পত্রিকা বিজ্ঞপ্তির দুই মামলা : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও দারুসসালাম থানার নাশকতার মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য ধার্য রয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আসলেই মামলা দুটির অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য হবে। দুই মামলাতেই আসামি খালেদা।
তদন্তাধীন ১৬ মামলা : গুলশানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা এবং বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মানহানি মামলাসহ ১৬টি মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটার আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। তারই হুকুমে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তদন্তে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সরকার তাড়াহুড়া করছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আইনের মাধ্যমে আটকানোর জন্য। বেগম খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি দেশের স্বার্থে মামলাগুলোতে আইনগতভাবে লড়ে যাবেন।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, গত ১০ বছরে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।