কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালীতে বনবিভাগের জমিতে নতুন করে দেড় হাজার ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছে রোহিঙ্গারা। বনের গাছ ও পাহাড় কেটে ২ মাস ধরে এসব ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব ঘরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। বিষয়গুলো স্বীকার করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারাও। তবে বন কর্মকর্তারা এসব ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদে অসহায়। এমনকি এসব বস্তি থেকে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়। সরেজমিন দেখা যায়, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বালুখালী পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে উঠেছে। বেসরকারি এনজিও সংস্থা মুক্তির এ জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে ওই নতুন বস্তিতে দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোহিঙ্গার দল এতে ঢুকে পড়ছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, বালুখালীতে নতুনভাবে শত শত ঘর উঠেছে। বন ও পাহাড় কেটে এসব ঘর তৈরি করছে রোহিঙ্গারা। নোয়াখালীর হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, একে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী। জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা, অত্যাচার ও ধর্ষণসহ ঘরবাড়িতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করে। এতে হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা টেকনাফ সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারের চলে আসে। এরপর তারা ঢুকে পড়ে উখিয়ার বনভূমিতে। বনের গাছপালা দিয়ে তৈরি করে ঝুপড়ি ঘর। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে ঘরের সংখ্যাও।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, ৪ মাসে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে ৯২ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম গৃহহারা হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও নতুন রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে ওঠার বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করছে স্থানীয়রা। নতুন বস্তিতে এলাকার পরিবেশও দূষণ হয়ে পড়ছে। এতে আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনাসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির বলেন, নতুন রোহিঙ্গারা বনের জমিতে প্রতিনিয়ত ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে যাচ্ছে। ঘর তৈরি করতে তারা পাহাড় ও গাছ কেটে নিচ্ছে। ১ মাস আগে অবৈধভাবে নির্মিত শতাধিক ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু উচ্ছেদের সময় বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাধা দেয় রোহিঙ্গারা। এমনকি হামলাও করে তারা। এ বিষয়ে উখিয়া থানায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করা হয়। তিনি বলেন, বালুখালীতে হাজারের বেশি নতুন রোহিঙ্গারা ঘর তৈরি করেছে বর্তমানে। তাদের কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। উচ্ছেদের বিষয়ে এক ধরনের অসহায় হয়ে পড়েছি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।