২২ এপ্রিল, ২০২৫ | ৯ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

গোমাতলীর ২০ হাজার বাসিন্দা নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত

কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং স্লইস গেইটটি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতের পর তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ স্লইস গেইট দিয়ে প্রতিদিন জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ করার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত গোমাতলীর ২০ হাজার বাসিন্দা গত আট মাস ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে জানা গেছে। ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বেঁড়িবাধ ও স্লইস গেইটসমুহ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে টেকসই কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। প্রতিদিনকার জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীন সড়ক উপ-সড়কসমুহ।
এক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার এলজিইডির আওতাধীন ঈদগাঁও গোমাতলী সড়কটির শেষ ঠিকানা পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী রাজঘাট পর্যন্ত। প্রায় ১৫ কি:মি এর এ সড়কটি বিগত সরকার কয়েক দফে এক তৃতীয়াংশ নির্মাণ কাজ শেষ করলেও অদৃশ্য কারণে সড়কের সংস্কারের কাজ বন্ধ রয়েছে। যার কারণে যান চলাচলতো দুরের কথা হেঁটে চলায় দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদের বাঁশঘাটা থেকে পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম গোমাতলী বাজার পর্যন্ত সড়কের একাধিক স্থানে গেল বর্ষায় সৃষ্টি হয়েছে ৫০ টির অধিক খানা খন্দক। এসব এলাকার মধ্যে ঈদগাহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল গেইট, পাহাশিয়াখালী ষ্টেশন, টেকপাড়া বায়তুশ ্শরফ মসজিদ, ইছাখালী মাদ্রাসা গেইট, হিন্দু পাড়া, কবি নুরুল হুদার বাড়ির সামনের অংশ, নয়া বাজার, পোকখালী হাই স্কুল রোড মাথা, ব্রীজের গোড়া, পূর্ব গোমাতলী বার্মাইয়া পাড়া, বাংলা বাজার, পশ্চিম গোমাতলী বাজার, কাটাখালী ব্রীজ, উত্তর গোমাতলী রয়েছে। এসড়কে চলাচলরত অর্ধ শতাধিক সিএনজি- টমটম চালকদের দূর্ভোগ কিছুতেই কমছেনা। বিশেষ করে রোগী নিয়ে ঈদগাঁও বাজার যাওয়ার পথে হিমশিম খেতে হয়। অন্যদিকে ছোটখাট দূর্ঘটনা লেগেই আছে।
এদিকে পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং ¯ুইস গেইট এলাকা ভাঙ্গনের কারনে ওই পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়াতে চলতি লবণ মৌসুমে শত শত একর জমি লবণ চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এতে করে এলাকার বিপুল সংখ্যক লবণ চাষী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক দুখু মিয়া। প্রান্তিক লবণ চাষীদের মুখে এখন আশার আলো জাগলেও জ্বলছে নিভু নিভু। কারণ জানতে গিয়ে দেখা গেছে, গোমাতলীর দু’ শত ফুট বেঁড়িবাধ সংস্কার না হওয়ায় এ পেশায় জড়িত প্রায় ২ হাজার লবণ চাষীর পরিবারকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। লবণের দাম স্বাভাবিক থাকলেও ১২ শত একর মাঠ খালি থাকছে বলে স্থানীয় লবণ চাষীদের অভিমত। অনেক দিনের পুরনো পেশা হিসেবে ছেড়েও দিতে পারছেনা লবণ চাষ। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন গুলোতে এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদনের মহাযজ্ঞ। কিন্ত সরকারের দিকে চেয়ে থাকছে অপরাপর চাষীরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকায় অবস্থিত সি বক, ডি বক ঘোনাসহ আরো বেশ কয়েকটি ঘোনার লবন মাঠে এখনো কোন চাষা মাঠে নামেননি। নভেম্বর মাসের দিকেই লবণ উৎপাদন শুরুর লক্ষ্য নিয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠ পরিচর্যা করেছে স্থানীয় কৃষকরা। গোমাতলীর কৃষক ছাবের ,হোছেন , রাজঘাট এলাকার মিয়া জানান, গত ১৫-১৬ অর্থ বছরের লবন মৌসুমে উৎপাদিত লবনের দাম ছিল ,আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাষীরা খুবই লাভবান হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার প্রান্তিক লবণের মূল্য নির্ধারণ ও বিদেশ থেকে আমদানী বন্ধ করে দেওয়ায় গোমাতলীর লবণ চাষিরা লাভবান হয়েছিল। রাজঘাট এলাকার ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানান, গত রোয়ানুর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ।
ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন জানান, জোয়ারের পানির কারনে ওই এলাকার উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট এলাকার কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন জোয়ারের পানি উলেখিত এলাকার বসতঘর ও শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে। পাউবোর ৬৬/৩ নং পোল্ডার সংলগ্ন এলাকার ২শ মিটার ভাঙ্গনটিই এলাকার লোকজনকে বেশী ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে জানালেন, গোমাতলী মোহাজের কৃষি উপনিবেশ সমিতির নেতা ও চিংড়ি চাষী সাইফুদ্দিন।
তিনি আরো জানান, বাধের দু’পার্শ্বে থাকা নদীগুলো খরস্রোত হওয়ায় ভাঙ্গন দিনে দিনে তীব্রতর হচ্ছে। সরকারী সাহায্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে জমি মালিকেরা প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে বিকল্প উপায়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কিছুদিন আগে বাধ নির্মাণ করেন। কিন্ত জোয়ারের তীব্রতায় তাও ভেসে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের উত্তর গোমাতলী ৭ নং ওয়ার্ড রাজঘাট পাড়া ফুলছড়ি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ করার কারণে এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে রাজঘাট পাড়ার মানুষ গত ১০ মাস ধরে নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে মসজিদ কবরস্থান ও রাজঘাট। জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ জানতে গিয়ে দেখা গেছে, পাড়ার দু’ শত ফুট বেঁড়িবাধ সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। এলাকাবাসী ভাঙ্গনরোধে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ ও সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নদী ভাঙ্গনের শিকার রাজঘাট পাড়ার বাসিন্দা নুরুল হুদা জানান, পূর্ণিমার জোর প্রভাবে ফুলছড়ি নদীর রাজঘাট পাড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ভয়াবহ ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে আরো অনেক বসত ঘর হারিয়ে যাবে নদীর গর্ভে। গত কয়েক দশকে ফুলছড়ি নদী তীরের রাজঘাট পাড়ার বাসিন্দা আবদুল মোনাফ, জাফর আলম, মো: ইসমাঈলের বসত ঘর হারিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকে বসত ঘর হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাযাবর জীবন যাপন করছে।
তারা আরো জানান, ফুলছড়ি নদী খরস্রোত হওয়ায় ভাঙ্গন দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। সরকারী সাহায্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে এলাকাবাসী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কিছুদিন আগে বাধ নির্মাণ করেন। কিন্ত জোয়ারের তীব্রতায় তাও ভেসে গেছে। জোয়ারের পানির কারনে ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা। প্রতিদিন জোয়ারের পানি উলেখিত এলাকার বসতঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছর পূর্বে গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতি ও এলাকাবাসির অর্থায়নে রাজঘাট পাড়ার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। সে থেকে সরকারী কোন বরাদ্ধ জুটেনি। ফুলছড়ি নদীর পাশে অবহেলিত এ গ্রামটি স্বাধীনতার পর থেকে নানা অবহেলায় রয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা কয়েক দপে চাঁদা দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার করলেও তা ছিল অপ্রতুল। যার কারনে দিন দিন নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে পাড়ার বসত ঘর। হুমকিতে রয়েছে একমাত্র মসজিদ-কবরস্থান।
ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, গোমাতলীবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে পাউবোর কাছে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আবেদন জানানো হয়েছে কিন্ত অদ্যবধি কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ভাঙ্গন এলাকায় কংক্রীটের বক বসিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে ৬৬/৩ পোল্ডার সংলগ্ন বিশাল এলাকা কিছুদিনের মধ্যেই সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে।
কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর আলম সিদ্দিকী বলেন, উপকূল রক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁধ মেরামত না করে অভ্যন্তরীন সড়কসমুহ মেরামত করলেও তা কোনো কাজে আসবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের কিছু কিছু অংশ সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বরাদ্দ হাতে এলে দ্রুত টেকসই বাধ নির্মাণে প্রচেষ্টা চালানো হবে। দুর্ভোগে পড়া জনগণ টেকসই বাধ, স্লুইস গেইট ও সড়ক সংস্কারে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।