২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

গোমাতলীর ৬ নম্বর স্লুইচগেইটের ভাঙন বাড়ছে

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কবলে পড়ে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী উপকূলবাসী এখনো বিপর্যস্ত সময় পার করছেন। বিগত ৮ মাসেও ভাঙা কিংবা বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় উপজেলার উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়নের লোকালয়ে এখনো চলছে জোয়ার-ভাটা। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ৩ শত কিলোমিটার আভ্যন্তরিণ সড়ক-উপসড়ক। গত ২১ মে রোয়ানুর আঘাতে প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বিলীন হয়ে যায়। ১৯৯১ সালের জলোচ্ছ্বাসের পর বেড়িবাঁধ টেকসই করণে বিগত ২৫ বছরে কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এ পরিস্থিতি হয়েছে বলে দাবি ভূক্তভোগীদের।

পোকখালী ইউনিয়নের উত্তর গোমাতলী ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদুল হক দুখু মিয়া জানান, ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সদরের পোকখালী ও গোমাতলী এলাকার বেড়িবাধের বেশ কয়েকটি অংশ ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রায় ভাঙন স্থানীয় ভাবে মেরামত সম্ভব হলেও উত্তর গোমাতলী ৬ নম্বর ¯ুইস গেইট এলাকার এক থেকে দেড়শ গজের ভাঙনটি অনেক চেষ্টা করেও মেরামত সংস্কার সম্ভব হয়নি। এ ভাঙন দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী, রাজঘাটের মানুষকে জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল করেছে।

পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম গোমাতলী ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আলাউদ্দিন জানান, জোয়ারের পানিতে এলাকার প্রায় ৫ হাজার একর জমি তলিয়ে যাওয়ায় ডুবে যাচ্ছে নিচু এলাকার রাস্তা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উত্তর গোমাতলী সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়, গোমাতলী উচ্চ বিদ্যালয়, অনেক মক্তব ও নূরানী মাদরাসাসহ নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। জোয়ারের সময় অনেক বাড়িতে হাটু পরিমাণ পানি ঢুকে দাঁড়ানোর জায়গাও থাকে না। তখন ভাটা নামা পর্যন্ত রাস্তার উপরেই অবস্থান করতে হয় শত শত মানুষকে। বাড়িতে অবস্থান দূরূহ হয়ে পড়ায় অনেকে পরিবার নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেছে। পানির ধাক্কায় ঈদগাঁও-গোমাতলী কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা সড়ক ভাঙনের কবলে পড়ায় স্বাভাবিক যান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাঁও-গোমাতলী কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা পাকা সড়কের পূর্ব কাটাখালী সংযোগ স্থল অংশ, পশ্চিম গোমাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটস্থান, গোমাতলী উচ্চ বিদ্যলয়ের দক্ষিণাংশ, উত্তর গোমাতলী কাটাখালী পশ্চিমাংশ ব্রিজ এলাকা, ফয়সাল সেন্টারের দক্ষিণাংশ, উত্তর গোমাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ ও উত্তরাংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। জোয়ারের সময় এলাকায় পানি ঢুকলে এসব ভাঙন দিয়ে বৃহত্তর গোমাতলী পানিতে একাকার হয়ে যায়। এসময় জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের বাহন হিসেবে নৌকাই একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে।

গোমাতলী মোহাজের কৃষি উপনিবেশ সমিতি ও চিংড়ি চাষী নেতা সাইফুদ্দিন জানান, ৬ নম্বর ¯ুইস গেইটটির দুইপাশেই গভীর খাল। এ কারণে ভাঙনটি দিন দিন কেবল বড়ই হয়েছে। মরা কাটাল কিংবা ভরা কাটাল (স্থানীয় ভাষায় জোঁ) উভয় সময় এ ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকছে। পাউবোর কক্সবাজার এলাকার ৬৬/৩ পোল্ডারের গোমাতলী এলাকার প্রায় দুই আড়াইশ হাতের এ ভাঙন বৃহত্তর গোমাতলীর অর্ধলাখ মানুষকে ভোগাচ্ছে। বাঁধ বরাবর খরোস্রোত থাকায় ভাঙনটি মেরামতে বিকল্প উপায় হিসেবে জমির মালিকরা প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ করে রিং বাধ দিয়েছিলেন। কিন্তু জোয়ারের তীব্রতা এ মাটি টিকতে দেয়নি। এলাকার চিংড়ি জমিতে চাষ করা দূরের কথা ১ হাজার একর জমিতে লবন চাষও করা যায়নি।

উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, অর্ধলাখ মানুষের নিত্য দূর্ভোগ লাঘবে পাউবোর কাছে বেশ কয়েকবার আবেদন দেয়া হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাদের পরামর্শে বিশ্ব ব্যাংকের ফান্ড থেকে বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও সংশিষ্ট শাখায় আবেদন করা হয়েছে।

গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন বলেন, গত বছর ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কবলে পড়ে ৬ নম্বর ¯ুইস গেইটটির দুই পাশেই ভেঙে যায়। বিলীন হয়ে গেছে ২কিলোমিটার বাঁধ। এতে জোয়ারের পানিতে ভাসছে ৫টি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ। কিন্তু বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এলাকার ২ কিলোমিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকেছে জোয়ারের পানি। এসব স্থানে কাদায় ভরা সড়কে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া ঘরেও জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় রান্না-বান্নায় সমস্যা হচ্ছে বেশি। কোনো কাজ না থাকায় অনেকের আয়-রোজগারও বন্ধ। সরকারি সহযোগিতাও অপ্রতুল। কিš ‘৮ মাস অতিবাহিত হলেও বাঁধ সংস্কার হয়নি। তার মতে, চারপাশে বক দিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ না করলে ৬৬/৩ পোল্ডারের এলাকাটি সাগরে তলিয়ে যাবে।

কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর আলম সিদ্দিকীর মতে, উপকূল রক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত আবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনে সব প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের পাউবোর সঙ্গে সমন্বিত করা যায়। বাঁধ মেরামত না করে আভ্যন্তরিণ সড়ক মেরামত করলে তা কোনো কাজে আসবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ভাঙা বাঁধের কিছু কিছু অংশ সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকি বরাদ্দ হাতে এলে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রচেষ্টা চালানো হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।