২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

‘ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা রামুবাসি

ramu pic1

‘ঘুরে দাঁড়াতে চাইলেই বার বার বন্যার কবলে পড়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না রামুবাসি। ৩ বছরের ব্যবধানে দুই বার বন্যায় রামুবাসির ভাগ্য ছিন্ন-বিন্ন করে দিয়েছে। তাদের দাবি, বন্যা হলেই কয়েকদিন ত্রান তৎপরতা থাকলেও বাকি সময়টা তাদের খুঁজ নেয়ার কেউ নেই! এমন অভিযোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের। বন্যায় দূর্গতরা স্থায়ী সামাধান চান।
সূত্র মতে, গত ২০১২ সালের ২৫ জুন রামু উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়। ওই সময়েও রামু উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ক্ষয়-ক্ষতি পুঁষিয়ে না উড়তে আবারও এই বছর বন্যার কবলে পড়েন রামুবাসি। রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশির ভাগ এলাকা বন্যায় ডুবে যান। পাহাড়, পানির ঢলে ভেসে গিয়ে নারীসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়। যেই পরিমান ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সেই পরিমান সরকারি ও বেসরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না দূর্গতরা।
কক্সবাজার সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল জানিয়েছেন, সবচেয়ে অবাক ঘটনা হচ্ছে ২০১২ সালের ২৫ জুন এখানে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। এবারও কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের ফলে ২৫ জুনই বন্যা হয়েছে। বন্যায় রাস্তাঘাটসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যাতে সহসায় সহায়তা পায়; এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় তাঁর পক্ষ থেকে খাবারসহ বিভিন্ন ত্রাণ সরাবরাহ অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও ত্রাণ সরাবরাহ দেওয়া হচ্ছে। স্ব স্ব এলাকায় বিত্তবানরাও এগিয়ে এসেছেন বানভাসী মানুষের সাহায্যার্থে।
এদিকে ভয়াবহ এ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এসব সাহায্য পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রামুকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলার রামু-মরিচ্যা পুরাতন আরকান সড়কের অফিসেরচর সংলগ্ন সড়কটি বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ফলে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছে এই এলাকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।
এছাড়া বন্যার পানিতে এখনও ডুবে আছে আলহাজ ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সড়ক ও কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সদর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর, চরপাড়া, ডাক বাংলা পাড়া, লামার পাড়া, লম্বরী পাড়া, হাজারীকুল, বুথপাড়া, মেরংলোয়া, মণ্ডল পাড়া, তেচ্ছিপুল, সাতঘরিয়া পাড়া, শ্রীকুলসহ কমপক্ষে ৩০টি গ্রামের মানুষের।
রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহান মুন্নি জানান, অতি বর্ষণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, রাজারকুল, চাকমারকুলসহ শত শত গ্রাম থেকে পানি নেমে গেলেও স্থানীয় লোকজন দূর্ভোগ এ রয়েছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মাসুদ হোসেন জানান, বন্যায় নিহত ৭ জনের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারিভাবে ত্রাণ সরাবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তবে, কয়েকদিনের মধ্যে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ সম্পন্ন হবে।
রামু সেনা নিবাসের মেজর কামাল পাশা জানান, বন্যায় মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুর্গতদের মাঝে চিড়া ও গুড় বিতরণ করা হচ্ছে।

রামু চাকমারকুল মিস্ত্রিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিউল্লাহ ও ইউসুপ জানান, গত ২০১২ সালের বন্যায় তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে যান। এই ভেঙ্গে যাওয়া বাড়িঘর নির্মাণ করা শেষ না হতেই গেল কয়েকদিনের আগের বন্যায় একই ভাবে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে যায়। এই রকম অধিকাংশ লোকজনের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে যান বলে খবর পাওয়া গেছে।

রামু চাকমারকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুফিদুল আলম জানান, গেল কয়েকদিনের বন্যায় তার এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ লোকজনের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাটের এক কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কক্সবাজারে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ‘ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি’ হয়েছে দাবি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল অবিলম্বে বন্যাদূর্গত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপনের আহবান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক দলগুলো বন্যাদূর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে এলেও সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা চোখেই পড়ছে না।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার জেলাকে বন্যামুক্ত করতে হলে দুইটি পরিকল্পনা নেয়া দরকার। একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও অন্যটি স্বল্প মেয়াদী।’
অতিদ্রুত স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে কক্সবাজার সদর উপজেলা ও রামু উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো সংস্কারের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দেরও দাবি জানান সাবেক এই সংসদ সদস্য।
তিনি মঙ্গলবার দুপুরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার দূর্গত মানুষের জন্য সরকারি পর্যায়ে পরিকল্পিত উপায়ে ত্রাণ তৎপরতার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও এবারের বন্যায় একানব্বইয়ের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি মনে করেন, বৃষ্টি থামার পর পানি নামতে শুরু করলেও মানুষ কষ্টে আছেন।
তিনি বলেন, ‘এতো বড় বন্যা হলেও কক্সবাজারে ত্রাণ মন্ত্রণালয় কিংবা কোন মন্ত্রীকে আমরা দূর্গত এলাকায় দেখিনি।’
কাজল আরও বলেন, ‘চীনের দুঃখ যেমন হুয়াং হু নদী, তেমনি কক্সবাজারের দুঃখ হলো বাঁকখালী নদী। এই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে কক্সবাজার পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’
তিনি মনে করেন, বাঁকখালী নদী ড্রেজিং করে তার দুই কূলে বাঁধ দিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। বাঁকখালী নদীকে শাসনে আনার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।