শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সিকদারপাড়া এলাকায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে দুই পুত্রবধূর উপর অমানুষিক
নির্যাতন, হামলার অভিযোগ করেছেন খোদ শ্বশুরের বিরুদ্ধে। এমন কি থানায় এজাহার দেওয়ায় বাড়ী থেকে বের করে দেয়াও হয়েছে। পুত্রবধূদের উপর শ্বশুরের এমন আচরণে পুরো উপজেলাজুড়ে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পারিবারিক ও সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করারও পরামর্শ দিয়েছেন হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জোবায়ের। নতুবা সমাজে এর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে তাঁর ধারণা।
৮ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৫ টার দিকে এই অমানবিক হামলার ঘটনা ঘটেছে।সেলিনা আকতার ও তছলিমা জন্নাত নামের দুই পুত্রবধূর উপর নির্যাতন চালানো ও প্রাণে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন নির্যাতিত সেলিনা আকতার। ১০ ফেব্রুয়ারী তিনি শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে এই এজাহার দায়ের করেন। নির্যাতিত দুই গৃহবধূকে নির্যাতনের পর বাড়ী থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
পুত্র ও তাদের বধূরা ন্যায় বিচারের জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সিকদারপাড়া গ্রাম। এই গ্রামের পাইপ মিস্ত্রি সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আকতার (৩০)।
ঘটনার সময় ৮ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৫ টায়। এসময় সেলিনার স্বামী বাড়ী ছিলেন না। হঠাৎ অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করে তার স্বামীর ঘরে ডুকে শ্বশুর আকতার আহম্মেদ। তার চুলের মুঠি ধরে বেদম মারধর করে। এরপর পর্যাক্রমে শ্বাশুড়ি
সাজেদা বেগম, ননদ কফি সোলতানা ও সাজিয়া বেগমও হামলায় অংশ নেন।
গৃহবধূ সেলিনা আকতারকে এলোপাতাড়ি মারধর ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে পুত্রবধু তছলিমা জন্নাত (৩০) কেও মারধর করে এসময় গুরুতর আহত করা হয়। আহতদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে দুই পুত্রবধু সেলিনা আকতার ও তছলিমা জন্নাতকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চকরিয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহত পুত্রবধূরা ও প্রতিবেশীরা জানান, শ্বশুর আকতার আহমদ একজন পুরনো অপরাধী ও খারাপ প্রকৃতির। পুত্রবধূদের অমানষিক নির্যাতন; নতুন নয়। ইতোপূর্বেও একাধিক বার পুত্র ও তাদের স্ত্রীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে।তবে ছেলেরা ও পুত্রবধূরা কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আস্কারা পায় শ্বশুর আকতার। স্থানীয় আজিম নামের এক দালাল উল্টো নির্যাতিত গৃহবধূদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানীর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
তবে, এবারের ঘটনায় গুরুতর আহত পুত্রবধূ সেলিনা আকতার থানার আশ্রয় নেন। তিনি বাদী হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারী শ্বশুর একই এলাকার মৃত ইমান শরীফের ছেলে আক্তার আহম্মেদ (৬৫) শ্বাশুড়ি সাজেদা বেগম, ননদ কফি সোলতানা ও সাজিয়া বেগমের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেন।
ঘটনাটি তদন্তের জন্য হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আজহারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আজহার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি পারিবারিক ও সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করারও পরামর্শ দিয়েছি। পারিবারিক ভাবে নিষ্পত্তি না হলে অবশ্য মামলা নেওয়া হবে।
আহত তছলিমা জন্নাতের স্বামী হেফাজ উদ্দীন মানিক
বলেন, তার পিতা আকতার আহম্মদ কতৃক তার স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রী বারবার হামলার শিকার হয়েছে। পিতার এমন আচরণে আমরা সন্তানেরাও অতিষ্ঠ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সুত্রে জানা গেছে, বরইতলি ইউনিয়নে কোন সংঘাত বা পারিবারিক কোন ঘটনা হলেই ফায়দা লুটেন বরইতলি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের পহরচাদা এলাকার থানার দালাল খ্যাত আজিম নামের এক ব্যক্তি। দালাল আজিমের কারণে নির্যাতিতরা থানায় ন্যায় বিচার পায় না বলে অভিযোগ।
আহত তছলিমা জন্নাত বলেন, শ্বশুর আকতার আহম্মদ বার বার পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। শ্বশুর ও ননদ আমাদেরকে বারবার শারিরীকভাবে নির্যাতন করেছেন। তাদের জন্য আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি। আমার শ্বশুর আমাকে ও সেলিনা আকতারকে প্রাণে হত্যার অপতৎপতায় লিপ্ত রয়েছে। এব্যাপারে তিনি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার দাবি করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।