নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক একর সরকারি বনভূমি দখল করে পশুর হাট বসিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের একটি সিন্ডিকেট। দখল করা এই বিস্তৃত বনভূমি উদ্ধারের সহযোগিতা চেয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় গত ৪ দিনেও দখলবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি তারা।
অপরদিকে অবৈধ এই হাট উচ্ছেদে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রামুর চাকমারকুল পশুর হাটের ইজারাদার কেএম রহীম উদ্দীন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশের পটপরিবর্তনের পর থেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইসলাম নগর এলাকায় গত ৩০ নভেম্বর রাতারাতি পশুর হাট বসায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই এই পশুর হাটটি বসিয়েছে জনৈক মানিক, ওমর আলী, আজরগর, মুকুল, বাচ্চু, মামুনসহ আরো কয়েকজন। তাদের সাথে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকর্মীও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এই পশুর হাটের দোহাই দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য হাট থেকে পশু ক্রয় করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে নেয়ার পথে চকরিয়ার এই হাটে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, অবৈধভাবে এই পশুর হাট বসানোর কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকায় ইজারা দিয়ে বসানো অন্যান্য পশুর হাটগুলোর ইজারাদাররা চরম লোকসানের মুখে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পশুর হাটে বিক্রি করা হচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম গর্জনিয়ার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা মিয়ানমারের অবৈধ পশু। অন্যদিকে চাকমারকুল, খরুলিয়া, গর্জনিয়া, ঈদগাঁও পশুর হাট থেকে পশু ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়ার পথে পশুর গাড়ি আটকাচ্ছে চকরিয়ার অবৈধ হাটের সাথে জড়িত লোকজন। গাড়ি আটকে তারা গরু প্রতি ১০০০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। না দিলে গাড়ি আটকে রাখা হয়। এর অংশ হিসেবে ২ ডিসেম্বর এক ব্যবসায়ীর চারটি আটকে রাখা হয়। পরে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ছেড়ে দেয়া হয়।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘অবৈধভাবে বনের জমি দখল করে পশুর হাটটি বসানো হয়েছে। হাটটি উচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। উচ্ছেদের সহযোগিতা চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এই পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছে। বাজারটি অনেক পুরনো। মধ্যখানে অনেক দিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি এটি আবার চালু হলো। এখনো জেলা প্রশাসন অনুমোদন দেয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন আছে। উপজেলা প্রশাসন খাস কালেকশনও করছে।’
যোগাযোগ করা হলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘পশুর হাট বসানোর বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। জায়গাটি বনবিভাগের। তারা অভিযানে গেলে সহযোগিতা করা হবে।’
আপনারা ( উপজেলা প্রশাসন) উচ্ছেদে সহযোগিতা করছেন না বলে বনবিভাগ অভিযোগ তুলেছেন, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন মন্তব্য না করে মুঠোফোনের সংযোগ বিছিন্ন করে দেন ইউএনও।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘বন ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশের কোন কাজ নেই। উচ্ছেদ কার্যক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ চাইবে। ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া পুলিশের উচ্ছেদ বিষয়ে কোন ক্ষমতা নেই। যদি ম্যাজিস্ট্রট সহযোগিতা চান, তাহলে পুলিশ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিষয়টি অবগত নন, বলে দাবি করেন। এ পর্যন্ত ওই সংক্রান্ত কোন চিঠিও পাননি বলে জানান তিনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।