চকরিয়ায় বিয়ের একদিন আগে শহরের অনুষ্টান থেকে কনেপক্ষের কেনাকাটা করা স্বর্ণালংকার ও মালামাল এবং যৌতুক হিসেবে দেয়া টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে বরপক্ষের বিরুদ্ধে। তুচ্ছ ঘটনার জেরে বিনা কারনে বিয়ের অনুষ্টানে অংশ না নেয়ায় প্রায় আড়াই শতাধিক বরযাত্রী মেহমানের জন্য করা ভুরিভোজ নষ্ট হয়েছে। ফলে বিপুল টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি এলাকায় সম্মানহানি হয়েছে কণেপক্ষের।
তবে অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত বর প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে অপর একজনকে মেয়েকে বিয়ে করার কারনে কৌশলে বরপক্ষের লোকজন এ ধরণের প্রতারনা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের বার আউলিয়ানগর এলাকায়।
অভিযোগে জানা গেছে, কাকারা ইউনিয়নের বারআউলিয়া নগর গ্রামের বেলাল উদ্দিনের মেয়ে কাউছার জন্নাতকে প্রেমের সর্ম্পকের সুবাদে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় একই উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আবদুল জব্বারসিকদারপাড়া গ্রামের জমির উদ্দিন ছেলে সোহেল মোস্তফা। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর পারিবারিকভাবে দু’পক্ষের সম্মতিতে ২০১৪সনের ১৫ডিসেম্বর ৫লাখ টাকা দেনমোহরে নোটারী মূলে বিয়ে হয় দু’জনের। নোটারীতে উভয় পক্ষের লোকজনকে স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে আয়োজনের।
এরই মধ্যে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রতারক প্রেমিক বর সোহেল মোস্তফা নিজেই আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে ২০১৬সনের ২৯ ডিসেম্বর উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এলাকার শামসুল আলমের মেয়ে জান্নাতুল মোকারমার সাথে নতুন করে বিয়ের কাবিননামা সম্পন্ন করে।
বিষয়টি হতভাগ্য প্রেমিকা কাউছার জন্নাতের পরিবার জানতে পেরে ওইসময় থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের নিয়ে বর সোহেল মোস্তাফার দ্বিতীয় বিয়েতে বাধা সৃষ্টি করেন। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ৫০হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে নতুন বিয়ের ওই কাবিননামা বাতিল করা হয়।
কণের পক্ষের লোকজন জানান, পূণরায় বর সোহেল মোস্তফা ও কনে কাউছার জন্নাত পক্ষগনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গত ৮জানুয়ারী পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৩জানুয়ারী তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হবে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১১জানুয়ারী চকরিয়া পৌর শহরের নিউ মার্কেট থেকে বিয়ে বাবত স্বর্ণালংকার ও মালামাল ক্রয়সহ যৌতুক হিসেবে নগদ টাকাসহ লাখ ৭০হাজার বর পক্ষকে বুঝিয়ে দেন কনে পক্ষের লোকজন।
উভয়পক্ষের কথা মতো বিয়ের দিন বরপক্ষের অন্তত আড়াই শত মেহমানের জন্য লক্ষাধিক টাকা খরচ করে খাবার (ভুরিভোজ) আয়োজন করেন কণের বাবা বেলাল উদ্দিন। বিয়েরদিন বিকেল ৪টার মধ্যে বর পক্ষের লোকজন কণেকে (নতুন বধু) নিয়ে যেতে না আসায় বিষয়টি জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করেন কনে পক্ষের লোকজন। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় বরের পিতৃালয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে খবর নেওয়া হয় প্রকৃত ঘটনা।
ওইসময় জানতে পারে কণে পক্ষের দেয়া স্বর্ণালংকার ও মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতারক বর সোহেল মোস্তফা ও তার বাবা জমির উদ্দিন সহ পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে হতভাগ্য কণে পরিবার বিষয়টি নিয়ে সুষ্ঠু সমাধানের আশায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বর ও তার পরিবারের প্রতারণার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে প্রতারক সোহেল মোস্তফার বাবা জমির উদ্দিন বাদী হয়ে কণের বয়স কম এমন অজুহাত তুলে ইতোমধ্যে কণের বাবাসহ ৩জনের বিরুদ্ধে উপজেলা আদালতে একটি সিআর মামলা করেছে। আদালত মামলাটি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
এমনকি বিয়ের স্বাক্ষী (বাদির শ্যালক ও বরের মামা) বাবুলকেও মামলাটিতে আসামী করা হয়েছে। একইভাবে বিয়ের স্বাক্ষী বাবুল কণে পক্ষে যাতে স্বাক্ষী দিতে না পারে সেইজন্য চাপ প্রয়োগ করতে কৌশলে তাঁর অসুস্থ মা মাজেদা খাতুনকে ( প্রতারক বরের নানী) বাদী বানিয়ে ফের ২৫জানুয়ারী উপজেলা আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করে।
বর্তমানে ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের করা মামলাটি আপোষ দেয়ায় চেষ্টা করছে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া বর সোহেল মোস্তফা ও তার বাবা জমির উদ্দিন।
অপরদিকে প্রতারণার এ ঘটনায় সর্বশেষ কনের বাবা বেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রোববার (২৯ জানুয়ারী) এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদে শালিসী বৈঠক আয়োজন করলে বরপক্ষের লোকজন এতে উপস্থিত হননি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।