চকরিয়ায় ভূমি সেবায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগের পর চকরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসও ভূমি রেজিষ্ট্রি সেবায় সুশাসন, স্ব”ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনের প্রথম ধাপ হিসেবে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে বিভিন্ন সেবার মূল্য তালিকা, কার কাছে গেলে কি সেবা পাবে, জমি ক্রয়ের পূর্বে কি কি করতে হবে সে বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যবোর্ড স্থাপন করেছে। সোমবার ২৭ মার্চ বেলা বারটায় চকরিয়া উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণশুনানী। দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি’র সহায়তায় এ গণশুনানীর আয়োজন করা হয়।
টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার মোঃ জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় এবং সনাক ভূমি বিষয়ক উপ-কমিটির আহবায়ক মোহাব্বত চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে উপস্থিত জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাব-রেজিষ্টার। গণশুনানীর পূর্বে উপস্থিত সেবা গ্রহীতাদের উদ্দেশ্যে সাব-রেজিষ্টার এ.এস.এম. শামছুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্ব”ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, চকরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সেবা নিতে এসে কোন মানুষ যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভূমি রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত যাবতীয় ফি’র তালিকা ও বিভিন্ন তথ্য রেজিষ্ট্রি অফিসের দেয়ালে টাঙ্গানো হয়েছে। যেকোন মানুষ সেবা নিতে এসে হয়রানীর শিকার হলে সরাসরি আমাকে জানাতে পারে। তিনি আরো বলেন, জনগণের কাছে জবাবদিহি করার জন্য এখন থেকে প্রতি মাসের শেষ সোমবার গণশুনানী করা হবে। গণশুনানীতে অংশগ্রহণকারি সাংবাদিক মনজুর আলম প্রশ্ন করেন, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অফিসের নিয়ম থাকলেও নিয়ম না মেনে ৩টার পর এমনকি সন্ধ্যার পরও কাজ করা হয়, এসময় অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে কাজ করা হয়। জবাবে সাব-রেজিষ্টার বলেন, এলাকার মানুষ সকালে কাগজপত্র তৈরী করে বিকেলে রেজিষ্ট্রির জন্য আসে, যদি ৩টার পর রেজিষ্ট্রেশন বন্ধ করা হয় তবে জনগণ কোন সেবাই পাবেনা, তাছাড়া ৩টার পর অতিরিক্ত টাকা নেয়ার যে কথা এসেছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
কাহারিয়াঘোনার ফরিদুল আলম প্রশ্ন করেন, ভূয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে ভূয়া দলিল করা হচ্ছে হরহামেশা, একারণে অনেক নীরিহ লোক পথে বসে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সাব-রেজিষ্টার বলেন, ভূয়া দলিল যাতে কেউ সৃজন করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকা হয়। এধরণের অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এজন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। সাংবাদিক আলী হোসেন বলেন, জমি রেজিষ্ট্রির পূর্বে জাতিয় পরিচয়পত্র যাচাই এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাকেরা বেগম বলেন, একটি জমি একবার রেজিষ্ট্রি হওয়ার পর আবারো রেজিষ্ট্রি হচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব। এবিষয়ে সাব-রেজিষ্টার বলেন, জমি একবার বিক্রির পর পুনরায় বিক্রি করা অপরাধ। এধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে দলিলের কপিসহ উপস্থিত হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিক আবদুল মজিদ বলেন, সরকার বিভিন্ন জমি অধিগ্রহণ করছে। রাস্তার দু’পাশের জমি সরকারের নামে রেজিষ্ট্রি থাকা সত্ত্বেও কিছু মহল এসব জমি পুনরায় বিক্রি করছে। এতে হানাহানির আশংকা দেখা দিয়েছে, তাই এবিষয়ে দৃষ্টি দেয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পৌর কাউন্সিলর জাফর আলম, সাংবাদিক যথাক্রমে জাকের উল্লাহ, মনছুর আলম, জিয়াউদ্দিন ফারুক, জহিরুল আলম সাগর, এম. আলী হোসেন, এম. রায়হান চৌধুরী, এ.কে.এম. বেলাল উদ্দিন, সাঈদী আকবর ফয়সাল প্রমুখ। উল্লেখ্য, সনাক-টিআইবি চকরিয়ার ভূমি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে, এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই চকরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে গণশুনানী আয়োজনে সহযোগিতা করা হয়। এবিষয়ে সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভূমি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চকরিয়ায় যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ভূমি অফিসে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসও আজ গণশুনানীর মাধ্যমে স্ব”ছতা ও জবাবদিহিতার কার্যক্রম শুরু করলো, আমরা আশা করি এর মাধ্যমে জনগণ হয়রানীমুক্তভাবে ভূমিসেবা পাবে। তিনি আরো বলেন, সনাক-টিআইবি সকল ইতিবাচক কার্যক্রমের সাথে থাকবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।