চকরিয়া চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৫ টি পয়েন্টে পণ্যবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করছে পুলিশ, বনবিভাগের লোকজন। ৩ টি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ, ২টি পয়েন্টে পুলিশ, এবং একটি পয়েন্টে বনবিভাগের লোকজন চাঁদা আদায় করছে। এসব পয়েন্টে দৈনিক ১০ টি মালবাহি ট্রাক ও মিনিট্রাক থেকে টোকেনের মাধ্যমে আদায় করা হয় প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা।
সূত্র জানায়, টেকনাফ ট্রানজিট ঘাট থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ টি আমদানী পণ্যের ট্রাক চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব গাড়ি থেকে ১৫০/২০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে মহাসড়কের বিভিন্ন চেকিং পয়েন্ট কর্মরতরা সহ হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছে, টেকনাফ ট্রানজিটঘাট থেকে বের হওয়ার পরপর ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় দমদমিয়া বিজিবি চেকপোস্টে কর্মরত সদস্যদের।
এরপর ধারাবাহিক ভাবে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে ২ শত টাকা করে চাঁদা নেয় হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশ, হোয়াইক্যং বিজিবি চেকপোস্ট, বালুখালী কাস্টমস, উখিয়া থানা পুলিশ, থাইংখালী হাইওয়ে পুলিশ, মরিচ্যা বিজিবি চেকপোস্ট, তুলাবাগান পুলিশ ফাঁড়ি, রামু ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশ, চকরিয়া উপজেলাধীন ডুলাহাজারা মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ, বানিয়ারছড়া-চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ি, সাতকানিয়ার দোহাজারি হাইওয়ে পুলিশ, পটিয়া হাইওয়ে পুলিশ, নতুন ব্রীজ সংলগ্ন কলেজ বাজার এলাকায় আনোয়ারা হাইওয়ে পুলিশ।
এছাড়া চকরিয়া নলবিলা ফরেষ্ট বনবিভাগের চেক পোষ্ট,লিংকরোড বন বিভাগের চেক পয়েন্টে পন্যবাহি ট্রাকের বেলায় কাঠ নিয়ে গেলে চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
একজন শ্রমিক জানান, হাইওয়ে পুলিশের কাজ নিরাপত্তা প্রদান করা। অথচ টেকনাফ ও চট্টগ্রাম মহাসড়কে তারা চাঁদাবাজীতেই ব্যস্ত সময় পার করছে। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি থামাবে কে? সচেতন মহলের মাঝে এমনও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মাত্র আড়াশ কিলোমিটার দূরত্বের এই সড়কে কমপক্ষে ১৫ টি পয়েন্টে তল্লাশীর নামে ও গাড়ির কাগজপত্র পর্যবেক্ষণের নামে এরা সব অর্থ নিচ্ছে।
চকরিয়ায় হারবাং এর ট্রাক চালক ইসমাঙ্গল প্রিয় চট্টগ্রামকে জানান, গাড়ির রোড পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, ইন্স্যুরেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার পরও পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। পণ্যের সমস্ত ডকুমেন্ট থাকা সত্বেও চাঁদা না দিলে হয়রানি করা হয়। তল্লাশীর নামে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হয়। মহেশখালীর পান ব্যবসায়ী মাদু জানান, পুলিশ’র চাঁদাবাজীর কারণে ট্রাক ভাড়া ৪ হাজার টাকা বেশী দিতে হয়। তাদের চাঁদাবাজী বন্ধ হলে ১০/১১ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া পাওয়া যাবে। তবে হয়রানির ভয়ে তাদের অধিকাংশই মুখ খুলতে রাজি হননি। কেউ কেউ কথা বললেও নাম প্রকাশে রাজি হননি।
কক্সবাজার জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের দাযিত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মহাসড়কে পুলিশ চাঁদাবাজী ওপেন সিক্রেট। এরা গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় করে। প্রতিবাদ করছেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জলে থেকে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করা যায়না,কারন হিসেবে জানিয়েছেন আকাশে যত তারা পুলিশের তত ধারা। জেলা ট্রাক মালিক সমিতির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে অতীতে অনেকবার প্রতিবাদ করা হয়েছে। ধর্মঘটও পালন করা হয়েছে। এতে কয়েকদিন তাদের যন্ত্রণা বন্ধ থাকলেও আবারো শুরু হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব প্রাপ্ত ওসি জানান, জেলার ৫ টি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ অবস্থান করে মহাসড়কের ডাকাতি প্রতিরোধ করছে। হাইওয়ে পুলিশ কোন পয়েন্টে চাঁদা নেয়না বলে তিনি দাবী করেছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।