চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম জিকুসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি নালিশী মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল রোববার চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেছেন পরিষদের নির্বাচিত এক নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী আরজ খাতুন। প্রাথমিক শুনানী শেষে আদালত বাদির অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দায়ের করা নালিশী অভিযোগটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযুক্ত অপরাপর বিবাদিরা হলেন পরিষদের ৩নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বদিউল আলম, ৭নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আলম ও ইউনিয়নের আম্মারডেরা এলাকার মৃত বদিউল আলম খলিফার ছেলে মোজাম্মেল হক।
মামলার আর্জিতে বাদি ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আরজ খাতুন জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক তিনি চলতিবছরের ২১ আগষ্ট পরিষদের সদস্যদের গোপন ভোটে এক নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর ২৪ আগষ্ট ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বারকমুলে (ঢেমু/ইউপি/চক/কক্স/১০৮-১৬) তিনি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অবগত করা হয়।
বাদি আরজ খাতুন আর্জিতে অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে আনুষ্টানিকতা শেষ করে তিনি পরিষদে এক নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিতে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকুসহ অভিযুক্তরা তার কাছ থেকে ৩লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই টাকা না দিলে তাকে দায়িত্ব দেয়া হবেনা মর্মে জানিয়ে দেন। বাদি আর্জিতে বলেন, ইতোমধ্যে তিনি পরিষদে উপস্থিত হলে অভিযুক্তরা জোরপুর্বক ভাবে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। দাবি করেন অবশিষ্ট আড়াই লাখ টাকা।
মামলার বাদি মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী আরজ খাতুন অভিযোগ করে বলেন, অবশিষ্ট আড়াই লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনমাস সময় অতিবাহিত হলেও এখনো দায়িত্ব নিতে পারেনি। পক্ষান্তরে গত ২৮ নভেম্বর তিনি বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে ব্যক্তিগত কাজে আসার পথে পরিষদের সামনে পৌছঁলে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিরা পথরোধ করেন। ওইসময় তিনি পরিষদের দায়িত্বভার বুঝে দেয়ার ব্যাপারে কথা তুললে অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর হামলা করে বলে মামলার আর্জিতে দাবি করেন বাদি। এরপর অভিযুক্তরা তাকে কিল-ঘুষি মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তার ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে নগদ ৫৫ হাজার টাকা ও ৪০হাজার টাকা দামের একটি স্বর্ণের চেইন লুট করে নেয় বলে মামলার এজাহারে বর্ণনা করেন।
প্যানেল চেয়ারম্যান আরজ খাতুন দাবি করেন, বর্তমানে অভিযুক্তরা যোগসাজসের মাধ্যমে একটি অঙ্গীকারনামা সৃজন পুর্বক তা নোটারী সম্পাদনের মাধ্যমে তাকে প্যানেল চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। একদিকে অব্যাহত চাঁদা দাবি, অপরদিকে হামলা ও প্যানেল চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণের কুটকৌশল নেয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে এ নালিশী মামলাটি দায়ের করেছেন বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কয়েকমাসের ব্যবধানে নুরুল আলম জিকু নানা ধরণের অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি সরকারিভাবে দেয়া ১০ টাকার চাল বিক্রির কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়ায় উপজেলা জুড়ে সমালোচিত হয়েছেন। ক্ষমতার অপ-ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি পরিষদের মেম্বার, বিএনপির নেতাকর্মী ও গত ইউপি চেয়ারম্যানে তার পক্ষে কাজ করা অনেক স্বচ্ছল পরিবারকে ১০ টাকা দামের চাল ক্রয়ের সুযোগ দিয়েছেন কার্ড বিতরণের মাধ্যমে।
সুত্রে জানা গেছে, ১০ টাকা দামের চাল বিক্রির কার্ড বিতরণের অনিয়মের ঘটনায় ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদে এসে ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া সব তালিকা জব্দ করে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে বিষয়টি দুদক কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ইউনিয়নের জমিদারপাড়া গ্রামের এক নারী স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে বিচার দিতে যান চেয়ারম্যানের কাছে। ওইসময় ভুক্তভোগী নারী গরু বিক্রির টাকা স্বামীর কবল থেকে রক্ষা করতে জমা দেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকুর কাছে। পরে ওই টাকা ফেরত চাইতে গেলে চেয়ারম্যানের বাড়িতে শাররীক লাঞ্চনার শিকার হন ওই নারী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকুকে আসামি করে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি চকরিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।