২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

চট্রগ্রামের রাজনীতিতে আগ্রহ নেই সফল রাজনীতিবিদদের উত্তরসুরীদের

চট্টগ্রামের রাজনীতির অঙ্গনে অতি পরিচিত নাম এম এ আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম এ হান্নান, এম এ মান্নান ও এম এ ওহাব। পাঁচজনই আওয়ামী লীগের সফল রাজনীতিবিদ। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ছিলেন বঙ্গবন্ধুুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীও। চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতির প্রচার-প্রসারে তাঁদের অবদান ছিল সর্বাগ্রে। এখানকার আওয়ামী রাজনীতির ইতিবৃত্তের কথা উঠলে আলোচনায় চলে আসবেন ডাকসাইটে এই পাঁচ রাজনীতিবিদ। কিন্তু চট্টগ্রামের রাজনীতিতে যাঁদের এতো অবদান তাদের সন্তানদের বেশিভাইই রাজনীতির বাইরে। তাদের নেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ। বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন মাত্র ৬ সন্তান।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই পাঁচ রাজনীতিবিদের মোট সন্তান ৫৭ জন। এরমধ্যে ৩৪ জন ছেলে ও ২৩ জন কন্যা। ছেলেদের মধ্যে একজন জহুর আহমেদ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আরেক সন্তান কিছুদিন আগে কানাডায় ইন্তেকাল করেন। অন্যরা ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জহুর আহমেদ চৌধুরীর ২০ ছেলেমেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের সাথে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। অপরদিকে এম এ আজিজের ১০ ছেলেমেয়ের মধ্যে মাত্র দুইজন রাজনীতিতে জড়িত। এঁরা হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার ও ওয়ার্কার্স পার্টির (মেনন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন খালেদ। এই দুইজনের চেয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এম এ হান্নানের পরিবার। তাঁর ১০ ছেলেমেয়ের কেউই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। সন্তানদের একজন ছাড়া সবাই প্রবাসে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এম এ মান্নানের ১০ ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজন রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। এঁরা হলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল লতিফ টিপু, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুস ছামাদ। এম এ হান্নানের পরিবারের মতো এম এ ওহাবের সন্তানরাও। তাঁর ৯ ছেলেমেয়ের কেউ রাজনীতিতে নেই। তবে সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। সংক্ষিপ্ত আকারে পাঁচ পরিবারে সন্তানদের অবস্থান তুলে ধরা হলো।
জহুর আহমেদ চৌধুরী : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রী সভার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৭৪ সালে পহেলা জুলাই তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি তিনটি বিয়ে করেন। তিন ঘরে তাঁর ১১ ছেলে ও নয় কন্যা। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যরা কেউই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। এর মধ্যে সবার বড় সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। মেজ ছেলে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তাঁর অন্য ছেলেরা হলেন : মঈনুদ্দিন খালেদ চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, জিয়াউদ্দিন চৌধুরী শাহীন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, কামরুদ্দিন চৌধুরী কমু, মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও শরফুদ্দিন চৌধুরী রাজু। ছেলেদের মধ্যে কানাডাপ্রবাসী কামরুদ্দিন চৌধুরী কমু অসুস্থ হয়ে সেদেশে ইন্তেকাল করেন। অপর ছেলে কানাডা প্রবাসী জসিম উদ্দিন চৌধুরী সেদেশে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে এসেছেন। একই সাথে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে চলেছেন। ভাইদের অন্যরা রাজনীতির সাথে জড়িত নন। জহুর আহমেদ চৌধুরীর ৯ কন্যা জাহেদা বেগম, সাহেদা বেগম, খালেদা খানম, রাশেদা বেগম রাশু, শামীম আরা মিশু, জেরিনা শিরিন, জেরিনা বেবি, জেরিনা পারভীন ও জেরিনা রোজি, সবাই গৃহিনী।
এম এ আজিজ : সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এম এ আজিজ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭০ সালের ১১ জানুয়ারি। তাঁর সাত ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে রাজনীতির সাথে জড়িত। অন্যরা ব্যবসার সাথে জড়িত। তাঁর ৭ ছেলে হলেন, মরহুম নুরুদ্দিন জাহেদ মঞ্জু, সালাউদ্দিন খালেদ, শওকত ওসমান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, সামসুদ্দিন খালেদ, শহীদ উদ্দিন জাহেদ ও আবু হেনা মোস্তাফা আজিজ। এর মধ্যে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও সামসুদ্দিন খালেদ ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক। এম এ আজিজের তিন কন্যা বিলকিস বানু, নার্গিস বানু ও সুলতানা আকতার বানু গৃহিনী।
এম এ হান্নান : চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের পর্যায়ক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন এম এ হান্নান। ছিলেন এম এ আজিজের নির্ভরযোগ্য সহকর্মী। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বুঝাতে পারতেন তিনি। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়ার মেহেরপুর গ্রামের আমজুকি গ্রামে। সেখান থেকে চট্টগ্রামে এসে স্থায়ী বসবাস করেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে পরিচিত এম এ হান্নান। ১৯৭৪ সালে ১২ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। তাঁর ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে কেউই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। এক সন্তান ছাড়া অন্যরা সবাই কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তাঁর ৬ ছেলে হলেন, সৈয়দ মোহাম্মদ মারুফ, সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুক, সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুদ, সৈয়দ মোহাম্মদ মাহফুজ, সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম ও সৈয়দ মোহাম্মদ মামুন। চার মেয়ে হলেন জাহানারা ইয়াসমিন, জাহানারা নাজনীন, জাহানারা পারভীন ও জাহানারা আইরিন।
এম এ মান্নান : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী এম এ মান্নান। এরপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য হন। ২০০৯ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ছয় ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে তিনজন সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এঁরা হলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল লতিফ টিপু, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুস ছামাদ। অন্য তিন সন্তান হাবিবুস ছামাদ, নুরুচ্ছামাদ ইমন ও আশিকুস ছামাদ। এর মধ্যে প্রথমোক্ত দুইজন ব্যবসা করেন। সবার ছোট আশিকুস ছামাদ অস্টেলিয়া প্রবাসী। এম এ মান্নানের দুই কন্যা রাশেদা মেহের মুন্নী ও ডা. তাহেরা মেহের ঝিনুক।
এম এ ওহাব : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য এম এ ওহাব ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১১ সালে ইন্তেকাল করেন। তাঁর চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে কেউই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। শুধুমাত্র মেয়ের জামাই অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন রাজনীতির সাথে জড়িত। বর্তমানে তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এম এ ওহাবের চার ছেলে হলেন, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. জসিম উদ্দিন, ডা. নুরুদ্দিন জাহেদ ও এডভোকেট ফখরুদ্দিন জাবেদ। তাঁরা প্রত্যেকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। পাঁচ কন্যা দিলারা বেগম, নিলারা বেগম, মনোয়ারা বেগম, রওশন আরা বেগম ও ডা. শাহীন আরা বেগম। এর মধ্যে প্রথমজন মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্সে চাকুরি করেন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।