শিক্ষার্থীদের হাতে হাত রেখে বানানো ‘পদ্মা সেতুতে’ শোয়া আরেক ছাত্রের পিঠে চড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটোয়ারী।
সোমবার নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনে ওই ঘটনার একটি ছবি নিয়ে ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় চলছে।
শিক্ষার্থীদের হাতের ওপর দাঁড়ানো নূর হোসেনের পাশাপাশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকে।
যাকে নিয়ে অভিযোগ, সেই নূর হোসেন বলছেন, স্কুলের আয়োজনে সেটি ছিল পদ্মা সেতুর প্রতীকী উপস্থাপনা। ইচ্ছে না থাকলেও ছাত্রদের ‘জোরালো অনুরোধ’ তিনি ফেলতে পারেননি।
ওই ছবিতে দেখা যায়, দুই দল শিক্ষার্থী হাতে হাত রেখে ‘সেতু’ তৈরি করেছে এবং আরেক ছাত্র তার ওপর উপুড় হয়ে শুয়েছে। ওই অবস্থায় তার পিঠের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ওই ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, “এই বদমাশটা নাকি জনপ্রতিনিধি? চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান। নাম নূর হোসেন পাটোয়ারী।…
“এই অমানুষটাকে খোঁয়াড়ে ভরা কি খুব কঠিন??”
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী লিখেছেন, “নূর হোসেন পাটোয়ারী নামের জানোয়ারটাকে কী গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেবে বাংলাদেশের কোনো আদালত? সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও দায়ী শিক্ষকদের? হাইমচর নীলকমল হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নূর হোসেন নামের জানোয়ারটা এভাবেই ছোট ছোট ছেলেদের ঘাড়ের ওপর দিয়ে হেঁটে যায়।”
তিনি নূর হোসেনকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান। আর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের প্রতি আহ্বান জানান স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
আলম পিন্টু নামের একজন সাংবাদিক ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বাহ! আমার বাংলাদেশ.. তিনি নাকি চাঁদপুরের হাইমচরের উপজেলা চেয়ারম্যান.. বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হয়ে ছাত্রদের পিঠের উপর হাঁটছেন… হাঁটবেনই না কেন। আজ পিঠে কাল মাথার উপর হাঁটবেন। ভাগ্যতো ভাল পিঠেই হেঁটেছেন… মাথায় হাটেন নি….ইশ! এই স্কুলের শিক্ষকগুলারে পাইতাম একটু কাছে.. এগুলা শিক্ষক নামের কলঙ্ক।”
ইমরান এইচ সরকারের পোস্ট শেয়ার করে আলম কিবরিয়া নামে একজন লিখেছেন, “আমরা এখন কোন যুগে বাস করিতেছি। একজন জনপ্রতিনিধি যদি এইরকম বিকৃত চরিত্রের অধিকারী হয়, তাকে দিয়ে দেশ ও জনগণ কি আশা করতে পারে?”
আশরাফুল মিশকাত নামের একজন ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড কিনা!! তাই সচেতন জনপ্রতিনিধি কর্তৃক মেরুদণ্ডের দৃঢ়তার পরীক্ষা চলছে। আফসোস!! এদের মধ্যে যদি এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকত।”
শাহাদাত হোসেন নামে আরেকজন লিখেছেন, “এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা আয়োজকরাইবা কেমন, এমন কুরুচিপূর্ণ ঘটনা ঘটাইতে পারলো! আর যে ছাত্রদের পিঠের উপর উঠলো সেতো মানুষ নয়, বিবেক বোধহীন নরাধম! ওকে খোয়ারে ভরার কথা বলছেন!!! আজব কথা। আরে বিশ্বজিতের হত্যাকারীর কী হইছে? সাগর রুনির হত্যাকারীর কি হইছে।”
নীল সাধু নামে একজনের মন্তব্যে পাঠ্যপুস্তকে ভুলের বিষয়টিও ফিরে এসেছে। তিনি লিখেছেন, “ছাগল যদি গাছে উঠে আম খায়, তবে চেয়ারম্যান কেন মানুষের গায়ে পা দিয়ে চলতে পারবে না? মানসিক বিকলাঙ্গ এই সব লোককে আমরা আবার ভোটও দেই!!”
সেদিনের ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন তার প্রতি সন্তুষ্টি জানিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাকে মানবসৃষ্ট সেতুর উপর দিয়ে হাঁটার অনুরোধ জানায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমি তাদের পিঠের উপর দিয়ে কিছু সময় হাঁটি।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের পিঠের উপর দিয়ে হাঁটার কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। আমি তাদের নিষেধও করেছিলাম। কিন্তু তাদের জোরালো অনুরোধে আমি সাড়া দিতে বাধ্য হই।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনও শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপাতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, “প্রতিবছরই আমরা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ডিসপ্লে করি। এবারের ডিসপ্লেতে মানবসৃষ্ট পদ্মাসেতু তৈরি করে তাকে শিক্ষার্থীরা হাঁটার অনুরোধ জানায়। তাতে তিনি সাড়া দেন।”
প্রধান শিক্ষক বলেন, “এটি নতুন কিছু নয়, গত ৪/৫ বছর আগে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন খান শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট মানবসেতুর উপর দিয়ে হাঁটেন। বিষয়টি আমরা আনন্দের দৃষ্টিতে করেছি। এটি আসলে তখন অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়নি।”
তবে হাইমচর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাহান মিয়া শিক্ষার্থীদের পিঠের উপর দিয়ে হাঁটার এই ঘটনাকে ‘লজ্জাকর ও দুঃখজনক’ বলেছেন।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এতে শিক্ষার্থী তথা শিক্ষা সমাজের প্রতি অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।”
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।