২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

ছিনতাইয়ের ঘটনায় চুরি বা হারানোর জিডি করার পরামর্শ ওসির!

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজার শহরে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে চুরি বা হারানোর জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করার পরামর্শ দিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর-উল গিয়াস!
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৬ টার দিকে শহরের সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী প্রিয়তোষ বেদজ্ঞ। এ ঘটনায় রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরী দাখিল করতে গেলে সেটি গ্রহন না করে উল্টো মোবাইল হারানো বা চুরির জিডি করার পরামর্শ দেয়া হয়। প্রথমে থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও পরে ওসি এ পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছিনতাইয়ের শিকার প্রিয়তোষ বেদজ্ঞর ছোট ভাই নাগরিক টিভির কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক মনতোষ বেদজ্ঞ বলেন, সকালে দুই যুবক ছুরির ভয় দেখিয়ে আমার ভাইয়ের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমার আশংকা হচ্ছে, ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ব্যবহার করে অপরাধীরা নানা ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা চালাতে পারে। তাই ভাইকে নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে যাই। কিন্তু থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা বলেন এ ধরনের জিডি নেওয়া সম্ভব নয়। চুরি বা হারানোর অভিযোগে জিডি করতে হবে। এরপর বিষয়টি আমি তাৎক্ষনিকভাবে থানার ওসিকে মুঠোফোনে অবহিত করি এবং প্রতিকার চাই। তিনি আমাকে নিজের কক্ষে ডেকে একই পরামর্শ দেন। ওসি বলেন, চুরি বা হারানোর ডায়েরী করলে আমরা দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে পারবো। ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নেওয়া যায় না। তখন আমি তাকে বলি, তাহলে তো প্রকৃত ঘটনা আড়াল হয়ে যাবে, একটা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হবে। আমার আশংকা তারা এই মোবাইল কোন অপরাধে ব্যবহার করবে কিনা। তখন ওসি সাহেব আমাকে বলেন, আমি আপনাকে একটা ভালো পরামর্শ দিলাম। এখন আপনার ইচ্ছে।
ছিনতাইয়ের শিকার এনজিও কর্মী প্রিয়তোষ বেদজ্ঞ চাকুরীসূত্রে কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, সকাল ৬ টার দিকে আমি চাকুরীস্থল উখিয়ায় যাওয়ার জন্য বাসা বের হই। ৬ টা ১০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে সেন্ট্রাল হাসপাতাল এলাকায় পৌঁছলে হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা দুই যুবক আমার সামনে ও পেছনে অবস্থান নিয়ে ছুরি বের করে ভয় দেখায় এবং যা আছে সব দিয়ে দিতে বলে। আমি প্রাণভয়ে তাদের হাতে সর্বস্ব তুলে দিই। এর মধ্যে আমারর পোকো এম-২ মডেলের একটি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন, স্যামসাং গুরু মিউজিক-২ মডেলের একটি ফিচার ফোন ও নগদ প্রায় ২ হাাজার ৪০০ টাকা ছিল। সবই তারা নিয়ে গেছে। এরপর ছিনতাইকারীরা দ্রুত কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। ছিনিয়ে নেওয়া এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের আইএমইআই নাম্বার- ৮৬৭৬৬২০৫২০৪০৪০৮ ও ৮৬৭২০৫২০৪০৪১৬। ফিচার ফোনের আইএমইআই নাম্বার ৩৫০৪৪৭১৪৭৫৪৪৩৪৯ ও ৩৫২৮১১৬২৭৫৪৪৩৪৩।
তিনি বলেন, আমার আশংকা ছিনিয়ে নেওয়া এই মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে অপরাধীরা নানা ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে আমি কক্সবাজার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করার চেষ্টা করছি। আজ সকালেও জিডির কপিতে আমার প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশ নিয়ে থানায় গেছি। কিন্তু আবারও তা গ্রহন না করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় জরুরী পরিসেবা ৯৯৯ এর ওয়েবসাইটের এক তথ্যে বলা হয়েছে, পথ চলতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এ সম্পর্কে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা না থাকায় নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বা হুমকির শিকার কিংবা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য পুলিশের সহায়তা চেয়ে থানায় জিডি করা যেতে পারে। কেউ হারিয়ে অথবা পালিয়ে গেলেও থানায় জিডি করা দরকার। এছাড়াও অনেক সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ অন্যান্য দরকারী নথি) হারিয়ে গেলে তা নতুন করে পেতেও থানায় জিডি করার প্রয়োজন পড়ে।
ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে চুরি বা হারানোর জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করার পরামর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রকৃত তথ্য দিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করবেন। ভুক্তভোগী কেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি করবেন? আমি মনে করি প্রকৃত তথ্য দিয়ে অভিযোগ করা উচিত।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।