বিশেষ প্রতিবেদকঃ ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলাজুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ২৫টি চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাসী করেছে আইনশৃংখলাবাহী।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া রোধ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় ২৫টি চেকপোস্ট ও ১২টি পেট্রোল টিমসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছে। অতিরিক্ত পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চার প্লাটুন বিজিবি, ৬০ জন অফিসারসহ ৩৬০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও আনসার সদস্য, স্কাউট সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
মঙ্গলবার শহরে প্রবেশের সময় লিংক রোড এলাকা থেকে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করে ২১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাব। পরে তাদের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘কক্সবাজার শহরে রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকাতে জেলা পুলিশ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ২৫টি চেকপোস্ট বসিয়েছে। অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টাকালে শতশত রোহিঙ্গাকে আটক করে সরকার নির্ধারিত ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। শহরে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদেরকে আটক করে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
র্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কিছু লোক শহরমুখী হচ্ছে। আমরা তাদের প্রতিরোধ করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠাচ্ছি। মঙ্গলবারও ২১০ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত পাঁচশতাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৯টি চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে। রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, বোমা নিক্ষেপ, গুলি করে ও গলা কেটে রোহিঙ্গাদের হত্যার অভিযোগ ওঠে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। ২৬ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আশ্রয়ের জন্য আসা এসব রোহিঙ্গাদের সরকার নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের একত্রিত করার লক্ষ্যে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে দুই হাজার একর জায়গা নির্ধারণ করে সরকার।
ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় সরকার তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে। টেকনাফে পাঁচটি ও উখিয়ায় সাতটি পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। খোলা হয়েছে আটটি লঙ্গরখানা। তাদের অস্থায়ী বাসস্থান, চিকিৎসা, স্যানিটেশনসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।