জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১০-তম বলে বিবেচিত হয়েছে। গত বছরের তালিকায়ও বাংলাদেশের অবস্থান একই ছিল। তবে এবারের তালিকায় ডেনমার্ককে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে নরওয়ের নাম। তালিকায় এর পর পরই আছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও ইয়েমেনের পাশাপাশি সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো তালিকায় সবার নিচে রয়েছে। সোমবার (২০ মার্চ) জাতিসংঘের বৈশ্বিক উদ্যোগ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) থেকে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০১৭-তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এটি পঞ্চম বার্ষিক প্রতিবেদন। ১৫৫টি দেশের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে নিজস্ব নাগরিকদের কল্যাণে সামাজিক আস্থা গড়ে তোলার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এসডিএসএন-এর পরিচালক এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা জেফ্রে স্যাকস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সাধারণ মাপকাঠিতে সুখী হলো সেই দেশগুলো যাদের সমৃদ্ধির মধ্যে ভালোরকমের ভারসাম্য আছে। এর মানে হলো সমাজে চূড়ান্ত পর্যায়ের আস্থা রয়েছে, অসমতা কম এবং সরকারের আত্মবিশ্বাস আছে।’
এর আগের তালিকায় সুখী দেশ হিসেবে ডেনমার্ক সবার শীর্ষে থাকলেও এবার সেই স্থান দখল করে নিয়েছে নরওয়ে। এরপর শীর্ষ স্থানগুলোতে রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সুইডেন। তালিকায় সবার নিচে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, লাইবেরিয়া, গিনি, টোগো, রুয়ান্ডা, তাঞ্জানিয়া, বুরুন্ডি এবং মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক। তালিকায় নিচের দিকে থাকা দশটি দেশের মধ্যে আটটি দেশই আফ্রিকান। তালিকায় জার্মানির অবস্থান ১৬ তম। এরপর ১৯ তম স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য এবং ৩১ তম স্থানে আছে ফ্রান্স। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৪ তম। আর বাংলাদেশের অবস্থান ১১০ তম।
তালিকাটি তৈরি করার ক্ষেত্রে ছয়টি মানদণ্ডকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেগুলো হলো- মোট দেশজ উৎপাদন, স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রত্যাশা, স্বাধীনতা, উদারতা, সামাজিক সমর্থন এবং সরকার কিংবা ব্যবসায় দুর্নীতির অনুপস্থিতি।
অবশ্য গত বছর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন এর তৈরি করা পরিবেশবান্ধব ও সুখী দেশের তালিকা বলেছিল ভিন্ন কথা। ওই তালিকায় বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্য থেকে সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অষ্টম অবস্থানে রাখা হয়েছিল।
‘হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স ২০১৬’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৮ দশমিক ৪। একটি দেশের নাগরিকদের সন্তুষ্টি, গড় আয়ু, পরিবেশের ওপর প্রভাব ও বৈষম্য- এই চার মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সুখী দেশের সেই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, সুখী দেশ নিরূপণ করতে গিয়ে জাতিসংঘ ও নিউ ইকোনমিক ফাউন্ডেশন আলাদা মানদণ্ড ব্যবহার করেছে। সুখী দেশ হিসেবে দুই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আলাদা আলাদা অবস্থানের পেছনে মানদণ্ডজনিতজনিত ভিন্নতাকেই কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।