#রয়েছে মাদক মামলা
#ব্যবহার করেন বিভিন্ন ছদ্মনাম
#পরিচয় দেন পরিবেশবাদী
#নাই কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা
#ভোটার হালনাগাদ ২০২৩সালে এনআইডি করেছে
#জাতীয় পরিচয় পত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন ৫ম শ্রেণী
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর ফারিবিল এলাকায় বসবাসরত পুরাতন রোহিঙ্গা হাসেমের পুত্র মোহাম্মদ জয়নাল উদ্দিন (৩৩)। তিনি নিজেকে কখনো ব্যবসায়ী, কখনও সাংবাদিক আবার কখনো পরিবেশবাদী পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র।
তথ্য সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে মায়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে জয়নালের পিতা হাসেম প্রাণ রক্ষার্থে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা হাসেম প্রথমে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরনার্থী হিসেবে বসবাস করছিলো। পরবর্তীতে একপর্যায়ে পালংখালীর দশ গইজ্জা পাড়া এলাকায় গিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে পালংখালী ইউপির ৯ নং ওয়ার্ডের জৈনক নুর আলম প্রকাশ নুরুর মেয়েকে বিয়ে করে আস্তে আস্তে বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ার চেষ্টা করেন। তার মধ্যে রোহিঙ্গা হাসেমের বিবাহ জিবনে দ্বিতীয় সন্তান জয়নাল উদ্দিন জন্ম গ্রহণ করেন। জয়নাল ধীরে ধীরে বড় হয়ে একই এলাকায় কোন রকম ৪র্থ-৫ম শ্রেণী পড়াশোনা করেন। পরে আস্তে আস্তে বড় হয়ে পাল্টে যেতে লাগে পুরাতন রোহিঙ্গা জয়নালসহ তার পরিবারের জীবন। জয়নাল এলাকায় নিজেকে এক বড় ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করেন। তার মাঝে পালংখালী বাজারে হঠাৎ খুলে বসেন একটি কাঁচা তরকারির দোকান। পরে খুলে বসেন মুরগীর দোকান এবং পরিচয় লাভ করে মুরগী ব্যবসায়ী হিসেবে। তবে তার দিন দিন উত্থান দেখে এলাকার মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রকমের কৌতূহল। পুরাতন রোহিঙ্গা জয়নালের আশপাশের মানুষ বলাবলি করে তিনি মুরগী ব্যবসার আড়ালে দেশে বিভিন্ন প্রান্তে মাদক পাচার করছে। কিন্তু সঠিক তথ্য আর প্রমাণের অভাবে তাকে আটক করতে পারেনি প্রশাসন। পরবর্তীতে হঠাৎ এক পর্যায়ে মাদকের চালান নিয়ে (গত ২৮ নভেম্বর-২০১৮ সালে) চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানা পুলিশের হাতে আটক হন মোঃ জয়নাল। যা এলাকায় জানাজানি হলে দেখা দেয় মিশ্রণ প্রতিক্রিয়া। জয়নাল দীর্ঘদিন পর জেলখানা থেকে জামিনে বাহির হয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ে মাদক ব্যবসায়।
স্থানীয় নুরুল আলম জানান, “জয়নাল ইয়াবা নিয়ে আটক হওয়ার পর থেকে তাকে এলাকায় ইয়াবা জয়নাল নামে পরিচিত লাভ করেছে।”
স্থানীয় যুবক তারেকুল রহমান তার নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে জয়নালের একটি ছবিসহ রোহিঙ্গা, ইয়াবা ব্যবসায়ি, অশিক্ষিতসহ বিভিন্ন শব্দ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন, তার মধ্যে উক্ত পোস্টের উপরের কিছু অংশ অবিকল নিম্নে তুলে ধরা হলো- “ইয়াবা ব্যবসায়ি জেল ফেরত আসামি জয়নাল” তুমি হয়তো ভুলে গেছ রোহিঙ্গা হাসেমের ছেলে তুমি মানুষকে চোখে ধুলি মেরে রাজনীতি সহ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যাচ্ছ। তুমি এখনও হয়তো জান না। চশমা দিলে মোটরসাইকেল থাকলে সাংবাদিক তথা রাজনীতিবীদ হওয়া যাই না তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে তুমি কোন রাজনীতিবীদের বাসর চাকর ও হতে পারবে না।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, “জয়নালসহ তার চৌদ্দ গোষ্ঠী রোহিঙ্গা এবং এলাকায় মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত ব্যাক্তি। তার মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে কৌশল অবলম্বন করে রাতারাতি সংবাদিকতার কার্ড ক্রয় করে বনে গেলেন সাংবাদিক। তিনি আরো বলেন, টাকার বিনিময়ে উপজেলা প্রেসক্লাবে সদস্যও হয়ে গেলেন। এখন শুনতেছি তিনি নাকি উপজেলা প্রেসক্লাবে কার্যকরি কমিটির অর্থ সম্পাদক হয়েছে। মাদক কারবারি পুরাতন রোহিঙ্গা জয়নাল এখন সাংবাদিক পরিচয়ে পুরোদমে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যালয়ে।”
জানা গেছে, এই জয়নাল নিজের অপকর্মকে আড়াল করতে (মোহাম্মদ জয়, জয়নাল কক্স, সাংবাদিক জয় ইত্যাদি) ব্যবহার করেন বিভিন্ন ছদ্মনাম।
স্থানীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা বলেন, ”সম্প্রতি সময়ে দেখা যাচ্ছে কিছু স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার ব্যবস্থাপক, সম্পাদক ও মালিকরা টাকার বিনিময়ে অশিক্ষিত যোগ্যতাহীন ব্যাক্তিদের পত্রিকার আইডি কার্ড দেন। সে কার্ড ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করে, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে। বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায় যা প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “অনেকে বিভিন্ন মাদক মামলার আসামী আবার নাই কোন শিক্ষাগত যোগ্যতাও এখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে যা প্রকৃত সাংবাদিকদের জন্য খুবই বিব্রতকর।”
উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল আজিজ বলেন, “প্রেসক্লাবে সদস্য হওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দরকার তা কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করে ভুয়া বানিয়ে দিয়েছে যা আমরা বুঝতে পারিনি। এমনকি তার আইডি কার্ডের যে একটি ফটোকপি জমা দিয়েছে সেটি সন্দেহ জনক হওয়ায় চেক করে দেখেছি। আইডি কার্ডটিও অনলাইনে পাওয়া যায়নি। যার কারণে পরবর্তীতে আমরা তাকে বিষয়টি অবগত করার পরেও কোন সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে ক্লাব থেকে বহিষ্কার করেছি।”
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, জয়নাল বিভিন্ন দিকে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক আলোকিত উখিয়া’র প্রতিনিধি আবার কখনো কখনো পরিবেশবাদী পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার “মফস্বল বিভাগের ম্যানেজার” জয়নালকে প্রতিনিধি সত্যতা শিকার করে জানান, জয়নালের প্রয়োজনীয় যে কাগজ পত্র জমা দিয়েছে তা দেখে যদি কোন সমস্যা মনে হয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে একজন পুরাতন রোহিঙ্গা এবং মাদক মামলার আসামীকে কি ভাবে সাংবাদিকতার কার্ড দিয়েছেন? জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এবং কাগজ পত্র দেখতে হবে বলে ফোন কেটে দেন।”
আলোকিত উখিয়া পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রশিদ জানান, “জয়নাল আমার পত্রিকায় কাজ করে তা সঠিক। কিন্তু সে রোহিঙ্গা এবং তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে এসব আমি জানিনা৷”
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হক জানান, “জয়নালের বাবা হাসেম প্রকৃত রোহিঙ্গা। তার ছেলে জয়নাল এলাকায় ৪/৫ ক্লাস পযর্ন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি আরো জানান- জয়নাল রোহিঙ্গা হওয়ার পরে কি ভাবে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয় জানিনা। তবে আমি মনে করি এটা মূলধারার সাংবাদিকদের জন্য খুবই লজ্জা জনক।”
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমি জয়নালকে চিনি না। যদি তার বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব৷”
অভিযুক্ত মোঃ জয়নালকে পুরাতন রোহিঙ্গা উল্লেখ করে “উপজেলা নির্বাচন কমিশন উখিয়া” কর্মকর্তা বরাবরের লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, এমন একটি অভিযোগের কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
উপজেলা নির্বাচন কমিশনার মিজান সজীব বলেন, “জয়নাল উদ্দিন রোহিঙ্গা মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সূত্রধরে দেখলাম তিনি এনআইডি করেছেন ২০২৩সালের ভোটার হালনাগাদের সময়। তার দেওয়া প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রে দেখা গেছে সেই তার মায়ের এনআইডি, স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তার বাবার জাতীয় পরিচয় পত্রের কোন তথ্য উপস্থাপন করেছেন কিনা? জানতে চাইলে জবাবে বলেন, তার পিতা ২০০৬ সালে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন।”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জয়নাল জাতীয় পরিচয় পত্র করতে (রোহিঙ্গা হওয়ায়) জীবিত পিতাকে ১৭ বছর আগে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকায় (এনআইডি- ৯১৭৫২৭৯৫৭০) অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয়নালকে কল দিয়েও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।