সময় ও পরীক্ষার্থীদের চাপ কমাতে দেশের বড় দুই পাবলিক পরীক্ষা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় বিষয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। জেএসসিতে তিন বিষয় এবং এসএসসিতে দুই বিষয়ের পরীক্ষা কম নেয়া হবে।
বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় পাঠ্যক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিও চূড়ান্ত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জেএসসি-জেডিসিতে চারু ও কারুকলা; শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষার পরীক্ষা নেয়া হবে না। আর এসএসসি-দাখিলে হবে না শারীরিক শিক্ষা ও ক্যারিয়ার শিক্ষার পরীক্ষা।
তবে এসব বিষয়ে স্কুল-মাদ্রাসায় পাঠদান ও পরীক্ষা নেয়া হবে। স্কুল-মাদ্রাসায় নেয়া পরীক্ষার নম্বর বোর্ডে পাঠানো হবে, যা জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি-দাখিল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর নম্বরপত্রে উল্লেখ থাকবে। কিন্তু এই নম্বর সার্বিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব ফেলবে না।
বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে তাদের থেকে এসএসসির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ফলে ২০১৯ সালের এসএসসিতে ওই দুই বিষয়ের পরীক্ষা হবে না। আর জেএসসির তিন বিষয় বাদ দিয়ে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত এ বছরই কার্যকর হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমদ এসব সিদ্ধান্তের কথা ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষায় বিষয়ের আধিক্য কমানোর অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশও ছিল। এটি শিক্ষা খাতে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। ফলে লেখাপড়ার পরীক্ষামুখিতা কমবে। শিক্ষার্থীদের শেখার ওপর গুরুত্ব বাড়বে। স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন বাড়বে।’
জানা গেছে, জেএসসি-জেডিসিতে বাদ দেয়া তিনটি বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৫০ নম্বরের মধ্যে। এর মধ্যে শারীরিক শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলার ২০ নম্বর তত্ত্বীয় ও ৩০ নম্বর ব্যবহারিক। আর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষায় ৩০ নম্বর তত্ত্বীয় ও ২০ নম্বর ব্যবহারিক হবে। এ ছাড়া এসব বিষয়ে শ্রেণির কাজ ১৫ (মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা এবং ক্লাস উপস্থিতি ৫ নম্বর করে), শ্রেণি অভীক্ষা ২০ (এমসিকিউ ও রচনামূলক ১০ করে) এবং বাড়ির কাজ ও অনুসন্ধানমূলক কাজ (অ্যাসাইনমেন্ট ও অনুশীলন) ১৫ নম্বরের মধ্যে হবে।
আর এসএসসিতে শারীরিক শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষার পরীক্ষা আগের মতোই ১০০ নম্বরে নেয়া হবে। এগুলো শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ এবং শ্রেণি অভীক্ষা হিসেবে ভাগ করা হবে।
পাঠ্যসূচি
সভায় নবম-দশম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যসূচিও নির্ধারণ করা হয়। গত বছর পর্যন্ত পাঠ্যতালিকায় থাকা সাতটি প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘নিরীহ বাঙালী’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনা পাওনা’, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের ‘আমার সন্তান’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণ’, যতীন্দ্রমোহন বাগচীর ‘অন্ধ বধূ’, ফররুখ আহমদের ‘বৃষ্টি’। প্রথম তিনটি প্রবন্ধ ও গল্প এবং পরের চারটি কবিতা।
এগুলোর পরিবর্তে যোগ হচ্ছে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘পল্লী সাহিত্য’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘প্রবাস বন্ধু’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’, আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ এবং সিকান্দার আবু জাফরের ‘আশা’। এর মধ্যে প্রথম চারটি প্রবন্ধ-গল্প-আত্মকথা এবং পরের চারটি কবিতা।
নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রে মোট ৩১টি গদ্য ও ৩২টি পদ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কবিতা, ৭টি প্রবন্ধ-আত্মকথা, ৫টি গল্প এবং ৩টি উপন্যাস-নাটক পাঠ্য হিসেবে পড়তে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় এনসিসিসির প্রায় সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।