কক্সবাজার জেলাব্যাপী শ্রমবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চলমান বুরো ধানকাটা মৌসুম, লবন মৌসুম ও আসন্ন চিংড়ি উৎপাদন মৌসুমকে সামনে রেখে শ্রমিক মজুরী একলাফে দ্বিগুন হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যাবসায়ী, কৃষক ও শিল্প উদ্যোক্তারা।
চলমান লবন উৎপাদনের ভরা মৌসুমে মাঠে উৎপাদিত অপরিশোধিত লবন কার্গোট্রলার-ট্রাকে ধোলাই করার কাজে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন । মাঝে কিছুদিন আবহাওয়াজনিত বিরূপতা কাটিয়ে ৭/৮ দিন আগে থেকে প্রখর রোদ ও অনুকুল বাতাসের ফলে জেলাব্যাপী ৬০ হাজার একর লবন মাঠে এখন প্রতিদিন প্রচুর পরিমান লবন উৎপাদন হচ্ছে।কিন্তু এসব লবন ধোলাই করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান শ্রমিক শ্রমিক পাওয়া যচ্ছেনা। ফলে মাঠের লবন মাঠেই পড়ে আছে, সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। সম্প্রতি বুরো ধানকাটা মৌসুম শুরু হওয়ায় জেলা ব্যাপী দিন মজুরের চাহিদা বেড়ে গেছে। সদরের জালালাবাদ ফরাজী পাড়ার কৃষক এরশাদ বলেন, বর্তমানে ধানকাটার জন্য দৈনিক ৬০০টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। ৬০০ টাকা মজুরি ছাড়াও ভাত-পান-বিড়ি প্রভৃতি মিলেয়ে ৭০০ টাকা পড়ছে বলে জানান তিনি। ধানকাটা শেষে মাড়াই-শুকানো এবং গোলায় তোলার কাজেও শ্রমিক দরকার হবে, কিন্তু পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই। সদর উপজেলা লবন চাষী সমিতির সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, মাঠে উৎপাদিত প্রচুর পরিমান লবন শ্রমিকের অভাবে ধোলাই করা যাচ্ছেনা। আগে মনপ্রতি ২০/২২ টাকা ধোলাই খরচ থাকলেও এখন ২৫/৩০ টাকা দিয়েও শ্রমিক মিলছেনা।নির্মান ঠিকাদার জালালাবাদের মুফিজ বলেন, রাজ মিস্ত্রীরা প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক ও যোগালী পাচ্ছেনা, ফলে কাজের অগ্রগতি হচ্ছেনা। সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকায় অবস্থিত লবন কারখানা হীরা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন সল্ট ইন্ডাষ্ট্রীজ’র ব্যাবস্থাপক রশিদ বলেন, এরকম শ্রমিক সংকট অব্যাহত থাকলে ইসলামপুরের কারখানাসমুহের নিয়মিত উৎপাদন ব্যাহত হবে । মহেশখালী , কুতুবদিয়া , পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার সমুদ্র উপকুলীয় প্রায় ৭০ হাজার একর জমিতে আর মাত্র মাসখানেক পরেই শুরু হবে বাগদা চিংড়ি চাষ মৌসুম। মাটি কাটা , বাধ মেরামত, পানি নিষ্কাশন গেইট মেরামত, প্রহরী বাসা নির্মানও অপরাপর কাজ সম্পন্ন করে চিংড়িঘের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত পরিমান শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন গোমাতলীর উদ্যোক্তা ফারুক আহমেদ। উপকুলীয় এলাকা থেকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় ভয়াবহ মানবপাচারের বিষময় ফল হিসাবে দেখা দিয়েছে এই শ্রমিক সংকট। এভাবে চলতে থাকলে জেলার শ্রমনির্ভর শিল্প-বানিজ্য হুমকির মুখে পড়ার আশংকা ব্যাক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।