ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-এ (টুয়াক) নিয়ে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলা আশেকের মধ্যে এই টানাটানি চলছে। তাদের পক্ষে-বিপক্ষে সদস্যরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিভক্তি নিয়ে চলা এই লড়াই তলে তলে অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। এর ফলে পক্ষে-বিপক্ষে বহিস্কার ও পদত্যাগের হিড়িক চলছে। দু’পক্ষের টানাটানিতে বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। টুয়াকের কার্যক্রম নিয়ে পর্যটকদের মধে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে আধিপত্য রক্ষায় সভাপতি রেজাউল করিম মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বাড়াবাড়ি নিয়ে অধিকাংশ সদস্য তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
জানা গেছে, বিভক্তির কারণে ইতিমধ্যে খোদ সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলাকে টুয়াকের সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সেই সাথে টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস.এম কিবরিয়া ও সাবেক অর্থ সম্পাদক শহীদুল্লাহ নাঈমকে সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র অমান্য করে বহিস্কারের মতো ‘নোংরা খেলায়’ মেতে উঠায় রেজাউল করিমকে টুয়াকের স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে রেজাউলের কার্যক্রমের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করেছেন টুয়াকের দায়িত্বশীল তিন সদস্য। তারা হলেন, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ, কার্যকরি সদস্য কামাল হোসেন খোকন ও মো. ফাহাদ।
সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, সভাপতি রেজাউল করিম নিজের অযোগ্যতা, অক্ষমতা, অনিয়ম এবং ক্ষমতাকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দীর্ঘায়িত করা জন্য সংগঠন নিয়ে যাচ্ছেতাই কাজ করছে। এর অংশ হিসাবে মিথ্যা অভিযোগের ধোয়া তুলে একে একে নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের সংগঠন থেকে বহিস্কার করছে। বহিস্কারের ক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি রেজাউল করিম।
পত্রিকার বিবৃতি দিয়ে ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার’র (টুয়াক), এস.এম কিবরিয়া খান ও আসাফ উদ দৌলা আশেককে সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিবৃতি আসাফ উদ দৌলা আশেককে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। একই সাথে সংগঠনের সাবেক অর্থ সম্পাদক শহীদুল্লাহ নাঈমকে সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।
অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে টুয়াকের সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলা আশেক বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক কেলেংকারি, সংগঠন বিরোধী কর্মকা- ও গোপন বৈঠকের প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। এটি একটি হাস্যকর অভিযোগ ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা মাত্র।’ একই দাবি করেছেন এস.এম কিবরিয়াও।
এ প্রসঙ্গে আসাফ উদ দৌলা আশেক জানান, তিনি এবং এস.এম কিবরিয়া কেউ কাউকে নিয়ে কোন ধরণের বৈঠক করেননি। এই অভিযোগ আনার কারণ হলো, টুয়াক’র নিবন্ধন কার্যক্রম ইস্যু। ২০১৪ সালে টুয়াকের নিবন্ধনের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছিল। পদাধিকার বলে বিগত কমিটির সভাপতি হিসাবে আহ্বায়ক করা হয়েছিল এস.এম কিবরিয়াকে। ওই কমিটিতে ১নং সদস্য রয়েছে এম. রেজাউল করিম। এর মধ্যে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় পদাধিকার বলে ওই নিবন্ধন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়মতান্ত্রিকভাবে রেজাউল করিমের উপর ন্যস্ত হয়। কিন্তু তিনি ক্ষমতার গ্রহণের পর নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রমের কোনো ধরণের খোঁজ-খবর নেননি। উল্টো নিবন্ধন কার্যক্রম অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে এস.এম কিবরিয়াকে দোষারোপ করেন। তার সাথে আসাফ উদ দৌলাকেও জড়িয়ে দেয়া হয়।
শহীদুল্লাহ নাঈম জানান, তিনি অর্থ সম্পাদক থাকা কমিটিতে সাধারণ সম্পাদ ছিলেন রেজাউল করিম। ওই সময় রেজাউল করিম সমিতির ২৮ লাখ টাকার হিসাব তছরুপ করেন। এই বিষয়টি পরবর্তী উত্থাপন করা হয় শহীদুল্লাহ নাঈমকে উদ্দেশ্যমূলক বহিস্কার করেছে রেজাউল।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২ জুলাই টুয়াকের নিবন্ধনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আসাফ উদ দৌলা ছিলেন আবেদনকারী। এর মধ্যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরও নানা জটিলতার কারণে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনামুলক একটি চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি আসাফ উদ দৌলার কাছে আসে। চিঠির ব্যাপারে সভাপতি রেজাউল করিমকে জানালেও তাতে কোনো ধরণের কর্ণপাত করেননি এম. রেজাউল করিম। তিনি কর্ণপাত না করায় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত দেন আসাফ উদ দৌলা। বর্তমানে নিবন্ধন ফাইলটি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, আসাফ উদ দৌলা আশেক ও এস.এম কিবরিয়া গোপন বৈঠক করে ২৭জনের স্বাক্ষর দেখিয়ে রেজ্যুলেশন তৈরি করে। ওই রেজ্যুলেশনের ভিত্তিতে টুয়াকের ৯৩ জন সদস্য থাকলেও ২৯ জনের নাম দিয়ে গোপনে নিবন্ধন আবেদন করেছে। ওই ২৯ জনের বেশ কয়েকজন ভুয়া সদস্যও রয়েছে।’
অভিযোগের জবাবে এস.এম কিবরিয়া বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় নানা তালবাহনা শুরু করেছে রেজাউল। তিনি অসদুুুুুুপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু তার কু-মতলব টের পেয়ে সদস্যরা তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই তিনি বহিস্কারের মতো নোংরামিতে মেতে উঠেছেন।’
অধিকাংশ সদস্যের অভিযোগ, রেজাউল দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি এজেন্ডাবিহীন সভা ডাকলেও তা মূলতবি করা হয়েছিল। মূলতবি সভা ৩ মাসের ডাকার নিয়ম থাকলেও চার পরে ডাকা হয় ওই মূলতবি সভা। কিন্তু তাও এজেন্ডাবিহীন হওয়ায় ফলপ্রসু হয়নি। তার অদক্ষতার কারণে সংগঠন মুখ থুবড়ে পড়ছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কার্যক্রম।
সাধারণ সদস্যরা বলছেন, টুয়াক নিয়ে যা শুরু হয়েছে তা নোংরামী পর্যায়ে পৌঁছেছে। অতীতে এ রকম কোনো কা- হয়নি। সংগঠনের নেতাদের কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ির কারণে এই সংগঠনটি অস্থিত্বহীনতার মুখে পড়বে।
আবাসিক হোটেল ম্যানেজার সমিতির সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘টুয়াক কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের অগ্রগণ্য অংশীদার। টুয়াকের মাধ্যমেই এখানকার পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টুয়াক নিয়ে যে রশি টানাটানি চলছে তা পর্যটন শিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এর সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’
টুয়াকের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়াম্যান এম.এ আসিফ বাদল বলেন, ‘টুয়াকের পরিচালনা কমিটির অভিভাবক হচ্ছে স্ট্যান্ডিং কমিটি। নেপথ্যে থেকে স্ট্যান্ডিং কমিটিই মূল ক্ষমতার অধিকারী। কোনো দায়িত্বশীল সদস্যকে বহিস্কারের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডিং কমিটির মতামত নিতে হয়। কিন্তু আমাদের অগোচরেই দায়িত্বশীল সদস্যদের বহিস্কার করে রেজাউল গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করেছেন। তাই তাকে স্ট্যান্ডিং কমিটির থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টুয়াক সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনে সংগঠন বিরোধীদের বহিস্কার করেছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।