কক্সবাজারের টেকনাফে আবারো অবরুদ্ধ হলো জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল। তাদের উপর হামলা চেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে। এসময় আটক এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকেও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে রব উঠেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ গিয়ে ডিবি’র দলকে উদ্ধার করে। বুধবার রাত ১০টার দিকে সাবরাং ইউনিয়নের সিকদার পাড়া গ্রামে সংগঠিত এ ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারদের টেকনাফ প্রীতি নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। ক্রিডিক্যাল এলাকায় অভিযানে যাবার কালে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে অবগত করার নিয়ম থাকলেও রহস্যজনক কারণে সে নিয়মের তোয়াক্কা করছেন গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীলরা। ফলে বার বার হামলা ও অবরুদ্ধের শিকার হয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়ছে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থায় কর্মরতরা।
পুলিশের ভাষ্যমতে, ইয়াবা মজুদের সংবাদে বুধবার রাতে সাবরাং ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায় জহির আহমদের বাড়িতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযানে যায়। এসময় সিকদার পাড়ার রাস্তা থেকে জহির আহমদের ছেলে কামাল হোসেন ও রেহানা আক্তার নামে এক নারীকে পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ আটক করে অভিযানকারিরা। পরে কামাল হোসেন পালিয়ে যায়। রেহেনার শোর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ডিবি পুলিশের উপর চড়াও হয়ে রেহেনাকে ছিনিয়ে নেয় এবং তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন তার লোকজন নিয়ে ডিবি পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসে। পরে টেকনাফ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঞ্চিত ডিবি পুলিশ সদস্যদের থানায় নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, টেকনাফ মাদক ও চোরাচালানের হাট হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এখানে পুস্টিং পেতে মুখিয়ে থাকেন আইনপ্রয়োগকারি সংস্থায় কর্মরতরা। এখানে দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি জেলায় কর্মরত বিশেষ বিশেষ বিভাগের দায়িত্বশীলরা মৌয়ের নেশায় কারণে অকারণে টেকনাফে ঢু-মারে। যে কাউকে ধরতে পারলেই লাখের নিচে কোন সমজোতা নেই। বা ক্রসের ভয়ে মোটা টাকা আদায়ের একটি সুযোগ তৈরী হয়। একারণে ডিবিসহ অন্য অনেক বাহিনী এখানে প্রতিরাতেই অভিযানের নামে সুযোগের সন্ধানে আসে। নিয়মমতে কোন এলাকায় অভিযানে গেলে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের সহযোগিতা নেয়া কিংবা অবহিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু টেকনাফে অভিযানে আসা বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা এ নিয়মটি পালন করেন বলে মনে হয় না। তাই গত ২০ মে এবং ১২ জুন রাতে ডিবি পুলিশ লাঞ্চলান শিকার হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
যে কোন এলাকায় বিশেষ বাহিনী অভিযানে গেলে সে এলাকার পুলিশ স্টেশনকে অবহিত করার বিধান রয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এটা আবশ্যক উল্লেখ করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, বুধবার রাতে ডিবি পুলিশের অভিযানের বিষয়টি থানা সংশ্লিষ্টরা অবগত নন। তেমনি ২০ মের অভিযানও জানা ছিল না। এরপরও বিপদাপন্ন হওয়ায় নিয়মানুসারে পুলিশ তাদের উদ্ধারে গেছে। ডিবিতে দায়িত্বরতদের জেলার সব জায়গায় যাবার অথরিটি রয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যেতে নিয়মিত বাহিনীর সহযোগিতা নিলে এত সমালোচনায় পড়তে হয়না।
তিনি আরো বলেন, বুধবার রাতের ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের উপর হামলার চেষ্টার খবর পেয়েছি। তাই একটি আইনী সংস্থাকে সরকারি কাজে বাঁধা দেয়া ও মাদক উদ্ধারের বিষয়ে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এতে ছিনিয়ে নেয়া নারী ও সংশ্লিষ্টদের আসামী করা হচ্ছে।
ঐ নারী আগে কোন মামলায় অভিযুক্ত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে টেকনাফের ওসি বলেন, এ মূহুর্তে সঠিক বলা যাচ্ছে না। নথি ঘেটে নিশ্চিত করা যাবে।
অসমর্থিত একটি সূত্রের অভিযোগ, ডিবির এসআই কামাল হোসেনের নেতৃত্বে টিমটি রাস্তা থেকে রেহেনাকে ধরেনি। রেহেনাদের বাসায় গিয়ে ইয়াবা সংশ্লিষ্টরাতার অভিযোগে মোটা অংকের টাকা দাবি করে তারা। দু’পক্ষের মাঝে দেন দরবারও চলছিল। কিন্তু এসআই কামালদের চাহিদা না কমায় তাদের ভেতর বাদানুবাদ হয়। এর জেরে রেহেনাকে তারা ক্রসে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ধরে নিয়ে আসছিলেন। এতে ভয়ে সে (রেহেনা) শোর চিৎকার করলে প্রতিবেশী ও স্বজনরা এগিয়ে এসে ডিবি টিমকে লাঞ্চিত করে রেহেনাকে নিয়ে যায়। জেলা ডিবিতে কর্মরত অধিকাংশ এসআই ও কনস্টেবল মাদকের তালিকাভূক্ত উখিয়া-টেকনাফের ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। যাদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা মিলে তাদের সাথে সম্পর্কটা ভাল রেখে অন্যদের ধরতে অভিযানের নামে ভয় দেখায় তারা।
এদিকে, এসআই কামালদের অভিযানের বিষয়ে অবগত কিনা জানতে রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মনিরুল ইসলামের সরকারি মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁর ফোনে একটি শর্ট বার্তা প্রেরণ করা আছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২০ মে একই অভিযোগে টেকনাফ সদর ইউনিয়ের ইউপি সদস্য এনামুল হকের বাড়িতে ঢুকে তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্ঠাকালে ডিবি পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুর করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এতে ডিবি পুলিশের এএসআই আসাদুজ্জামান, ফিরোজ মিয়া, কনেস্টবল আল আমিন, সুমাইয়া সুলতানা ও গাড়ী চালক বাপ্পি আহত হন। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছিল। এর দেড় মাসের মাথায় আবারো লাঞ্চনার শিকার হলো ডিবি পুলিশের অপর টিম।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।