রহমত উল্লাহ:
কক্সবাজারের টেকনাফে শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকায় এবং দীর্ঘদিন আদম পাচার বন্ধ থাকার পর টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহার ছড়া ও সাবরাং দিয়ে মানব পাচারের কাজ শুরু হয়েছে। এদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা নাগরিক। দিনের বেলায় উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কলা কৌশলে পালিয়ে এসে বাহার ছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ী ঘর-বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রাতের অন্ধকারে বোটযোগে মালেশিয়া পাড়ি জমাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচারকারীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ। সাগর কিছুটা শান্ত। কিন্তু মোটেও শান্ত নয় পাচারকারীরা। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সাগর পথে মানবপাচারে। হতাশ রোহিঙ্গারাই প্রধান টার্গেট, বাংলাদেশীদেরও বোটে তুলছেন নানা কৌশলে। এরপর জিম্মি করে চলে টাকা আদায়।
টেকনাফ বাহার ছড়া ইউনিয়নের ৭,৮ও ৯ ওয়ার্ডে নোয়াখালী পাড়া, কচ্ছপিয়া, বড়ডেইল ও শামলাপুর, সাবরাং ইউনিয়ন দিয়ে রোহিঙ্গারা রাতের অন্ধকারে দলে দলে মালেশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। তালিকাভুক্ত মানবপাচার কারীরা অনেকেই পালিয়ে যায় আলোচিত সিনহা ঘটনার পর থেকে তারা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে তাই মানবপাচার ব্যবসা চালু করার জন্য তারা বৈঠক শুরু করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করে জন প্রতি টাকা নেই দালালরা।ছোট নৌকাতে ওঠার আগেই ৫০ হাজার টাকা দালালরকে বুঝিয়ে দিতে হয় বাকি টাকা থাইল্যান্ডে পৌঁছলে দিতে হয়।
টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর হচ্ছে আলোচিত মানবপাচারে নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট ও সাবরাং ইউনিয়নের নয়া পাড়ার সীমান্ত দিয়ে ও শাহপরীরদ্বীপ সাগর । রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এই বাহারছড়ায় বর্তমানে তালিকাভুক্ত মানবপাচারকারীরা ফের বাড়ি ফিরছেন। গত ১৫ জানুয়ারি শাহপরীরদ্বীপ ড়াংগর পাড়া ২০ জন রোহিঙ্গা বোটে ওঠে এই যাত্রী রাখা হয়েছিল ডাংগর পাড়া রাজিয়ার(২৫) বাড়িতে।
কারা রাখছিল এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিয়া বলেন, আমার বাসায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বেড়াতে আসছে বলে তিনি মালয়েশিয়া গামী যাত্রী নন বলে অশীকার করেন।
শাহপরীরদ্বীপের এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হঠাৎ শাহপরীরদ্বীপ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি বন্ধ হয়ে যায় যার কারণে আদম পাচার সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু করেছে বলে জানান।
শামলাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড়ের কয়েকজন সচেতন লোকজন নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক জানান উক্ত ওয়ার্ডের একজন ক্ষমতাশীন দলের নুরুল কবির নামক রাজনৈতিক নেতা মানবপাচার কাজের গ্রুপ লিডার হিসেবে কাজ করছে।তারই নেতৃত্বে সন্ধ্যা হলে শত শত রোহিঙ্গা জঙ্গল থেকে বের হয়ে বোটে উঠার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
শাহপরীরদ্বীপের ড়াংগর পাড়ার প্রকাশ নাফাইগ্যার ছেলে সব্বির আহমদ,মাঝের পাড়ার শীর্ষ মানবপাচারকারী শাহাব মিয়ার সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সারাংয়ের আজীম উদ্দিন মালয়েশিয়া থেকে সিন্ডিকেট মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গড়ে তোলে ভয়ংকর আদম পাচার সিন্ডিকেট।
বাহারছড়া শামলাপুর পুরানপাড়া এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে শফি উল্লাহ (৫০) এক সময় অভাব অনটনে দিন যেতো। বর্তমানে কোটি কোটি টাকা ও সম্পদেরর মালিক।
সাগর পথে অবৈধভাবে মালেশিয়া পাড়ি জমান শফি উল্লাহর ছেলে তৈয়ব উল্লাহ।সেখানে গিয়ে কৌশলে পরবর্তীতে তার ভাই আরিফ উল্লাহকেও নিয়ে যায়। শুরু করে সাগরপথে আদম ব্যবসা। দিনদিন এলাকায় মাথা ব্যবসায়ী বলে পরিচিত পাশ শফি উল্লাহ। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের রাতারাতি কোটিপতির স্বপ্ন দেখিয়ে শুরু করে মানবপাচারের পিতাপুত্র সিন্ডিকেট। সাগরপথে শতশত মানবকে মালয়েশিয়ায় পাচার করে হয়ে যায় কোটি টাকার মালিক।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী মধ্যমপাড়ার লাইলা বেগম। একজন রোহিঙ্গা নারী। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ওই নারী প্রতিটি ক্যাম্পে ঘুরে সংগ্রহ করেন মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক নারীদের। লাইলা বিয়ে করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম খোকাকে। খোকা এলাকার আবদুল আলী সিন্ডিকেট নামে পরিচিত একটি মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য। এ রকম আরো অসংখ্য সিন্ডিকেট রয়েছে ক্যাম্পগুলোতে। যারা নিয়মিত মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক নারীদের জোগাড় করে। এবং তাদের সঙ্গে দামদর করে। টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসবাসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা নিজেরাই রোহিঙ্গা পাচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। যারা সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে সক্রিয়ভাবে জড়িত রোহিঙ্গা দালাল চক্র। এবং নিজেদের গোত্রের বলে তাদের সহজে বিশ্বাসও করছে ভুক্তভোগীরা। তাদের সঙ্গে এই অপকর্মে স্থানীয় অংশীদার হচ্ছে স্থানীয় চক্রটিও। এরইমধ্যে সমুদ্র মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা দালাল। তাদের দেয়া তথ্যে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে মানবপাচারকারী চক্রের অনেক সদস্যের নাম বেরিয়ে আসে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- হাফেজ ছলিম, আতাত উদ্দিন, মোহাম্মদ আলম, আবদুর করিম, হাফেজ মোহাম্মদ আইয়ুব, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ কবির, আমির হোসেন, মোহাম্মদ ফয়েজ, নূর হোসেন, মোহাম্মদ রশিদ, হাসিম উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহ ও মোহাম্মদ হামিদ। তারা সবাই উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। এ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় ওই ক্যাম্পগুলোতে। যারা নিয়মিত রোহিঙ্গা নারী সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে।
বাহারছড়া শামলাপুর এলাকাবাসী জানান,একসময়ের
খুঁড়েঘর থেকে বিলাশ বহুল বাড়ীর মালিক বর্তমানে শফি উল্লাহ। কাঠের বোট নিয়ে সাগরপথে মানবপাচারের ঘটনা প্রশাসনের নজরে আসে, আলোচিত হন শফি উল্লাহ। তখন আরিফ উল্লাহ ও তার ভাইয়েরা মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ডে মানুষদের নিযার্তন করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পরে মানবপাচারের মামলার আসামী হয় শফি উল্লাহ, তার ছেলে শহিদ উল্লাহ। মানবপাচারের মামলায় জেলও খেটেছে শফি উল্লাহ, তবে পলাতক ছিলো তার ছেলে শহিদ উল্লাহ।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, এই বিষয়টি আমার নজরে আসেনি তবে আমরা নিয়মিত রাতে টহল জোরদার করি। দেশ ও জাতীর স্বার্থে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে সবাইকে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।