২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক চোরা চালানের গডফাদার ফরিদ ফের সক্রিয়

টেস্ট দীনতাও দেখা গেল ফতুল্লার ড্র ম্যাচে

bd-cricket_thereport24

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দিব মেপে; বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্যের অতি পরিচিত একটি শ্লোক। প্রচণ্ড খরার মুহূর্তে গ্রামীণ মানুষের বিশেষ করে কৃষক সমাজের ‘বৃষ্টি নামার ব্যাকুলতা’ প্রকাশ পায় এই শ্লোকে। কিন্তু গত ৫টি দিন বৃষ্টি নামার ব্যাকুলতা নয়, বৃষ্টি বন্ধের আকুলতায় ব্যাকুল ছিল মুশফিকুর রহিম আর বিরাট কোহলির দল; সঙ্গে পুরো ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টি সেই আকুলতায় কান দিয়েছে কই? উল্টো তার আপন খেয়াল খুশি মতোই চলেছে, ঝরেছে। ফতুল্লা টেস্টের শুরুর দিন থেকে শেষ দিন অবধি বৃষ্টিতে ভিজেছে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের মাঠ ও গ্যালারি। কখনো দিনের প্রথম সেশন তো কখন শেষ সেশন বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে একাকার হয়েছে। তাতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ড্রতেই সমাপ্তি ঘটেছে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচের। কিন্তু বৃষ্টিতে ডুব মারা এমন ম্যাচেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেস্ট দীনতার চিত্রটা যেন প্রকট হয়ে রইল টেস্ট ক্যানভাসে। যে ম্যাচে দুটি দলের পুরো এক ইনিংসের ব্যাটিংয়ের বিষয়টিই নিশ্চিত ছিল না, সেই ম্যাচেই কি না মুশফিকবাহিনী ফলোঅনের লজ্জায় পড়েছে। তাদের নামতে হয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়েও।

টেস্ট ম্যাচ ৫ দিনের। সেশনের হিসেবে তা ১৫ সেশনের। আর বলের হিসেবে তা ৪৫০ ওভারের। কিন্তু বৃষ্টির খেয়ালীপনায় প্রথম দিনে ৫৬ ওভার, তৃতীয় দিনে ৪৭.৩ ওভার এবং চতুর্থ দিনে ৩০.১ ওভারের খেলা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। সব মিলিয়ে প্রথম ৪ দিনে খেলা হয়েছে মাত্র ১৩৩.৪ ওভার। যেখানে হওয়ার কথা ৩৬০ ওভারের। এই যখন অবস্থা তখন ম্যাচের ভাগ্যে ড্র ভিন্ন অন্য কিছু চিন্তা করার অবকাশ নেই। কেউ করেনওনি। বিশেষ করে রবিবার ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনেও যখন বৃষ্টির আভাস ছিল।

আভাস বাস্তবেই রূপ নিয়েছে। যথারীতি পঞ্চম দিনেও বৃষ্টি তার খেয়ালীপনার খেলা দেখিয়েছে। দিনের প্রথম সেশনই ভেসে গিয়েছে বৃষ্টিতে। এরপর ‘মেপে ধান’ পাওয়ার লোভে হয়তো অন্য কোথাও উড়ে গিয়েছে বৃষ্টি ভরা মেঘ। খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে আর বৃষ্টি নামেনি। না, কথাটা ভুল হলো; প্রকৃতির বৃষ্টি নামেনি, নেমেছে হতাশার বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি নামিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

লাঞ্চের পর পঞ্চম দিনের খেলা মাঠে গড়িয়েছে। চতুর্থ দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ছিল ১১১/৩। পঞ্চম দিনে ২ ওভার ৩ বল খেলা হওয়ার পর সেই স্কোর হয়ে গিয়েছে ১২১/৪। ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সাকিব আল হাসান আউট ব্যক্তিগত ৯ রান। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ঋদ্ধহস্তে সাকিবকে তালুবন্দী করেছেন ভারতের তরুণ উইকেটরক্ষক ঋদ্ধমানা সাহা। সাকিব আউট হওয়ার পর উইকেটে এসেছেন ব্যাটে আলোর ঝলকানি দেখিয়ে দলে প্রায় পোক্ত হয়ে যাওয়া সৌম্য সরকার। উইকেটের অপর প্রান্তে দৃঢ়তা দেখাচ্ছিলেন ইমরুল। সৌম্য-ইমরুলে ভালই এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইমরুলও থেমে গেলেন ব্যক্তিগত ৭২ রানে, দীর্ঘ দিন পর দলে ফিরে ঘূর্ণিময় সফলতার খোঁজে থাকা হরভজনের শিকার হয়ে। তাকে শিকার করে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পাকিস্তানী গ্রেট ওয়াসিম আকরামকে পিছনে ফেলে সর্বকালের সেরা উইকেট শিকারী বোলারের তালিকায় নবমস্থানে উঠে এসেছেন হরভজন। বর্তমানে তার উইকেট সংখ্যা ৪১৬।

ইমরুল যখন আউট হয়েছেন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৭২/৫, ৪৭.২ ওভারে। ৫ বল পরেই সেই স্কোর হয়ে গেল ১৭৬/৬। এবারে ভারতীয় পেসার বরুণ অ্যারনের শিকার হলেন সৌম্য। অ্যারন গর্ব করতেই পারেন। কেননা, ফতুল্লার পেস বিরুদ্ধ উইকেটে একমাত্র পেসার হিসেবে তিনিই উইকেট পেলেন যে!

বাকি গল্পটা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা আর ভারতীয় স্পিনার জুটি অশ্বিন-হরভজনের সাফল্যের গল্প। এর মাঝে উজ্জ্বল হয়ে থেকেছেন কেবল বাংলাদেশের অভিষিক্ত ক্রিকেটার লিটন কুমার দাস। ৪৫ বলে ৪৪ রানের ঝরঝরে ইনিংস খেলেছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে সুযোগ পাওয়া তরুণ ক্রিকেটারটি। এর মধ্যে ৩৮ রানই এসেছে চার-ছক্কায় (৮টি চার, ১ ছক্কা)।

অশ্বিন মোট ৫ উইকেট দখল করেছেন। হরভজন নিয়েছেন ৩ উইকেট। আর তাদের চক্রব্যূহে পড়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছে ২৫৬ রানে। মাত্র ৬ রানের জন্য ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

এরপর তামিম-ইমরুল ১৫ ওভার ব্যাটিং করে দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ২৩ রান তুলেছেন, ম্যাচ শেষ হওয়ার তখন ১ ঘণ্টা বাকি। ড্র ভিন্ন অন্য আর কিছুর সুযোগ নেই দেখে দুই দলের সম্মতিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই ড্র হয়েছে ফতুল্লা টেস্ট।

তবে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মতোই ফতুল্লা টেস্টের গল্প যেন এখানেই ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। ম্যাচ ড্র হলেও ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শনী দেখিয়ে মুশফিকবাহিনী খুঁচিয়ে তুলেছে দুটি প্রশ্ন; এক. যদি বৃষ্টি না হতো, তাহলে কি ফতুল্লায় ৫ দিন পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচিয়ে রাখতে পারত বাংলাদেশ? দুই. ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেও হোম অ্যাডভান্টেজেই যদি ফলোঅনে পড়তে হয়, তাহলে কি আগামীতে ১১ ব্যাটসম্যান নিয়েই একাদশ গঠন করবেন বাংলাদেশের নির্বাচকরা?

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য প্রথম প্রশ্নটি আত্মমর্যাদায় আঘাত করার মতোই বিষয়। কিন্তু বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার সুযোগ কোথায়!

প্রথম দুই দিন বৃষ্টির তোড়ে ম্যাচ যখন বার বার বিঘ্নিত হচ্ছে, সেই তখন থেকেই ম্যাচ কভার করতে আসা ভারতীয় সাংবাদিকদের মুখ ভার। বৃষ্টি দেবতা ‘বরুণদেব’র প্রতি তীব্র ক্ষোভ তাদের। প্রথম দিনেই শেখর ধাওয়ান-মুরলি বিজয়ের ওপেনিং জুটি বাংলাদেশী বোলারদের বিপক্ষে ‘গব্বর সিং’ মার্কা তাণ্ডব চালানোর পর ভারত ম্যাচ জিতে নিবে— ভারতীয় সাংবাদিকরা এমন বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। সেখানে ‘বরুণদেব’ তাদের বিপক্ষে আচরণ করছে দেখেই ক্ষোভ তাদের। এমনকি কেউ কেউ লিখেও দিয়েছেন, বরুণদেব (বৃষ্টি) নাকি বাংলাদেশের দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেছে! বলার অপেক্ষা রাখে না, রবিবার ম্যাচ শেষে এই ক্ষোভ আরও বেড়েছে। কেননা, ম্যাচ ড্র হওয়ায় র‌্যাঙ্কিংয়ে ১ ধাপ অবনমন ঘটে ভারতকে নেমে যেতে হয়েছে ৪-এ। অথচ অতিথিদের বিশ্বাস ছিল ঠিকমতো খেলা হলে বিরাট কোহলিদের সামনে টিকতেই পারতো না মুশফিকরা।

ভারতীয়দের এই ধারণা ভুল প্রমাণ করার দায়িত্ব ছিল মুশফিকদেরই, পারফরম্যান্সের ঝলক দেখিয়ে। কিন্তু বৃষ্টিভেজা এমন ম্যাচের শেষ দিনে ফলোঅনের লজ্জায় ডুবিয়ে মুশফিকরা যেন অতিথিদের বক্তব্যই সত্যি প্রমাণিত করে দিয়েছে।

টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে নেমেও যদি দল ফলোঅনে পড়ে তাহলে তো হতাশা ছাড়া ভিন্ন কোনো আবেগ আসার কথা নয় ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশীদের মনে। হয়েছেও তাই। ফতুল্লা টেস্ট শেষ হওয়ার পর নির্বাচকদের ৮ ব্যাটসম্যান তত্ত্ব আর বাংলাদেশী ব্যাটারদের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজে বাংলাদেশ কি করবে, এখন থেকেই সেই হিসেবী আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে উঠছে আরও একটি প্রশ্ন;

দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি, দলের পক্ষে ওপেনিং জুটিতে রেকর্ড রান, অশ্বিনের ৫ উইকেট, হরভজনের ছন্দে ফেরা, শেষ দিনে মাত্র দুই সেশনে ১৪৫ রান খরচ করে বাংলাদেশের শেষ ৭ উইকেট তুলে নিয়ে ফলোঅন করানো-বৃষ্টিতে বিঘ্নিত ফতুল্লা টেস্টে ভারত তো অনেকই কিছুই পেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ পেয়েছে কি? উত্তরে হয়তো সংশ্লিষ্টরা বলবেন, লিটন কুমার দাসের মতো তরুণ প্রতিভাকে খুঁজে পাওয়া কিংবা সাকিব আল হাসানের বল হাতে ছন্দে ফেরার মতো বিষয়গুলোকেই। তবে তারা যাই বলুন না কেন, ফতুল্লার মাঠে টেস্ট দীনতার যে চিত্র দেখতে পাওয়া গিয়েছে তা থেকে বাংলাদেশের কোচ, নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্ট, ক্রিকেটাররা আগামীতে কতটুকু শিক্ষা নিতে পারলেন এটাই দেখার বিষয়।

সংক্ষিপ্তস্কোর

ভারত : প্রথম ইনিংস, ৪৬২/৬ ডিক্লেয়ার, ওভার ১০৩.৩ (ধাওয়ান ১৭৩, বিজয় ১৫০, রাহানে ৯৮; সাকিব ৪/১০৫, জুবায়ের ২/১১৩)

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ২৫৬/১০, ওভার ৬৫.৫ (ইমরুল ৭২, লিটন ৪৪, সৌম্য ৩৭; অশ্বিন ৫/৮৭, হরভজন ৩/৬৪)

বাংলাদেশ : দ্বিতীয় ইনিংস, ২৩/০, ওভার ১৫ (তামিম ১৬, ইমরুল ৭)

ফল : ম্যাচ ড্র

ম্যাচ সেরা : শেখর ধাওয়ান (ভারত)

 

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।