মিয়ানমারের সৈন্যদের হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। গত দুই সপ্তাহে অনুপ্রবেশের হার তুলনামূলক কম থাকলেও চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির পরও প্রাণে বাঁচতে কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে তারা। স্থানীয়দের দাবি, চলতি মাসে অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। আরো অন্তত পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশায় সীমান্তে জড়ো হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে নৌকায় করে দল বেঁধে ঢুকতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। একারণে পরের কয়েকদিন অনুপ্রবেশ কমে যায়। তবে এরপর তারা সতর্ক হয়ে অনুপ্রবেশ শুরু করে। জেলেদের সহায়তা নিয়ে তাদের নৌকায় করে প্রতিদিনই ৫০ থেকে দেড়শ জন করে আসতে থাকে। গত শুক্র ও শনিবার রাখাইনের হাতিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে সৈন্যদের আক্রমণ এবং বাংলাদেশের মানবিক আচরণের কারণে এই সপ্তাহে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। গত কয়েকদিন টেকনাফ-উখিয়ার সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যবেক্ষণেও এই তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে উখিয়ায় ৬২ জন ও টেকনাফে তিন শতাধিক অনুপ্রবেশকারী আটকের পর রোহিঙ্গারা কৌশল পাল্টেছে। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে টেকনাফের জাদিপাড়ার একটি দ্বীপসহ বেশকিছু পয়েন্টে প্রাথমিক আশ্রয় নিয়ে জেলেদের নৌকায় করে ২/৩ জনের দলে ভাগ হয়ে টেকনাফের স্থলভাগে আসছে তারা। স্থলভাগে এসে প্রথমেই তারা ছোট-খাট বাজার সদাই করছে। তারপর কুতুপালং কিংবা লেদা বস্তির দিকে যাচ্ছে। ফলে বোঝারও উপায় নেই যে তারা অনুপ্রবেশকারী। আর ক্যাম্পগুলোতে কোনো রকমে ঢুকতে পারলেই তারা পুরনোদের সাথে মিশে যাচ্ছে। পরদিন থেকেই তারা এখানে নিরাপদে থাকার সুযোগ পাচ্ছে।
জানতে চাইলে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির সভাপতি আবু সিদ্দিক ইত্তেফাকের কাছে স্বীকার করেন, গত দুই সপ্তাহে সেখানে পাঁচ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ঢুকেছে। সর্বশেষ গত সোমবার দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার পাঁচ শতাধিক এবং বুধবার পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা তার বস্তি এলাকায় ঢুকেছে বলে তার ধারণা।
টেকনাফের লেদা বস্তির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দুদু মিয়া জানান, গত দুই সপ্তাহে ওই বস্তিতে দেড় হাজারের অধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। সর্বশেষ গত সোমবার ১৫৫, মঙ্গলবার দুই শতাধিক ও বুধবার তিন শতাধিক রোহিঙ্গা তার বস্তিতে ঢুকেছে।
ভালো নেই অনুপ্রবেশকারীরা: ইতোমধ্যে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে তারা খুব একটা ভালো নেই। টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি বস্তিতে আগে থেকে যারা ছিল তাদের ওপরও অনুপ্রবেশকারীদের প্রভাব পড়ছে। কারণ তারা কোনোমতো ছোট ছোট খুপরি ঘরগুলোতে ১০/১৫ জন করে বাস করে আসছিল। এর মধ্যে নতুন যারা আসছে, তাদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন লেদা ও কুতুপালং বস্তির প্রায় বেশিরভাগ ঘরেই নতুন আসা রোহিঙ্গাদের চাপ সইতে হচ্ছে। পুরুষদের মসজিদে রাত কাটাতে হচ্ছে।
অনুপ্রবেশের আশায় সীমান্তে অপেক্ষা :রোহিঙ্গাদের চলমান সংকট শীঘ্রই শেষ হচ্ছে না বলে মনে করছেন টেকনাফ-উখিয়ার স্থানীয়রা। অনুপ্রবেশকারীরা বলছেন, বাংলাদেশে ঢোকার আশায় মিয়ানমার সীমান্তের কুয়ারবিল, কুমিরখালিসহ কয়েকটি এলাকায় অন্তত পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কাছাকাছি জায়গায় জড়ো হয়েছে। দু পারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক পাহারার কারণে তারা ঢালাওভাবে অনুপ্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। তবে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঠিকই ঢুকছে।
মিয়ানমারের ৯১ জেলেকে ফেরত দিল বিজিবি:উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সীমান্তের ঘুমধুম মৈত্রী সড়কে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার পতাকা বৈঠক শেষে বিজিবি দেশটির ৯১ জেলেকে মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরার সময় এদের আটক করেছিল নৌ-বাহিনী।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।