২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

ডিবি পুলিশের ইয়াবা বাণিজ্যের নায়ক আকরাম কোথায়?

db

পুলিশের ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকা বা সহযোগিতার অভিযোগও অহরহ। বিশেষ করে ফেনীতে ৬ লাখ পিচ ইয়াবাসহ পুলিশের এক এএসআই গ্রেফতার ও তার স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দীতে পুলিশের ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে। মিলছে নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য। খোদ কক্সবাজারে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ২ডজন পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু ডিবি পুলিশের জব্দকৃত ইয়াবা যে পুলিশ কর্মকর্তা বিক্রি করতেন সেই এসআই আকরাম রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। তিনি দুর্নীতিবাজ শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের আর্শিবাদে থেকে বহাল তবিয়তে এসব অপরাধ করে গেছেন। তাকে জিজ্ঞাবাসাদ করলে এ বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
কক্সবাজার ডিবিতে প্রায় ১বছর কর্মরত ছিলেন এসআই আকরাম। এ সময়ে তিনি ডিবি অফিসকে ইয়াবা বেচাকেনার হাটে পরিনত করেন। তার হাত দিয়ে প্রায় ৫০কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান। এ সময়ের মধ্যে তিনি একবার বদলী হলেও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাকে ১০লাখ টাকা দিয়ে বদলী ঠেকান।
জানা যায়, তিনি গোয়েন্দা পুলিশে থাকাকালীন সময়ে একটি সিন্টিকেট গড়ে তুলেন। ডিবি পুলিশের মধেই তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ইয়াবা সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট টেকনাফ সীমান্ত থেকে পুরো ইয়াবা রুটে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতো। অভিযানের সময় তারা পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করতেন না। প্রাইভেট নোয়া, কার ও মাইক্রোবাসে করে গোয়েন্দা পুলিশের এসব কর্মকর্তা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের চিহ্নিত একাধিক স্থানে অবস্থান নিয়ে ইয়াবা উদ্ধার করতেন। উদ্ধাকৃত ইয়াবার বেশীরভাগ হজম করে হাতেগোনা কয়েকশ জব্দ দেখানো হতো। এভাবে আইনশৃংখলা বাহিনীতে থেকে পুরো কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল কক্সবাজারে গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা। এ অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা অল্প সময়ে ইয়াবা বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে যান। কিন্তু ধূর্ত প্রকৃতির এ অফিসার চলাফেরা করতেন সাদামাটা। তাকে দেখে বুঝার উপায় ছিল না যে তিনিই ডিবি পুলিশের ইয়াবা বিক্রেতা! এ সব অপকর্ম করলেও তার চাকরি হারানো বা শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার ভয় ছিল না। কারণ খোদ জেলা পুলিশের অভিভাবক তার কাছ থেকে মাসিক হারে ৫লাখ টাকা করে নিতেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্য এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজারে কর্মরত পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, পুলিশের ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা ছিল অসহায়। তাদের আয়েশি চাল-চলন, ব্যয় ছিল চোখে পড়ার মতো। উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও এসব জানতেন। পুলিশের শীর্ষ কমর্তাদের প্রতি অভিযান থেকে ২০% করে দেওয়ার প্রথাও এ আকরাম চালু করেন। এ কারনেই তিনি বহাল তবিয়তে থেকেই এসব অপরাধ করে গেছেন। তাকে জিজ্ঞাবাসাদ করলে এ বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
ফেনীতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা সহ র‌্যাবের হাতে আটক টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই মাহফুজ র‌্যাবের কাছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন। সিন্ডিকেটে কারা ছিল তাদের নামের একটি তালিকাও দিয়েছেন তিনি। পুলিশের মধ্যে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই বিল্লাল হোসেন প্রকাশ বেলাল, হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রেঞ্জের কুমিরা ফাঁড়ির এসআই আশিকুর রহমান অন্যতম। আর এ সিন্ডিকেটেরই আরেক সদস্য হচ্ছেন এসআই আকরাম।
এদিকে পুলিশের ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে কক্সবাজারের দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তারা মেল খাওয়া মাছের মতো হয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। সরাসরি ইয়াবায় জড়িত অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ৫০হাজার টাকা করে চাদা নিয়ে ২০ লাখ টাকার ফান্ড করেছে। এ টাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানে স্থানে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। এখানেও আকরাম ইয়াবা বিক্রেতা হিসাবে মিডিয়ায় তার নাম না আসার জন্য ৫লাখ টাকা দিয়েচেন বলে জানা যায়।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় কক্সবাজারে ইয়াবা আটক করেছেন এই সিন্ডিকেটের পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা আটক করলেও তাঁরা অল্প পরিমাণ জমা দিয়েছেন পুলিশ বিভাগে। বাকি ইয়াবা নিজে বিক্রি করার জন্য সেগুলো কিনে নিতেন এসআই আকরাম। তিনি এ ইয়াবা কক্সবাজারে ভাড়া বাসায় নিয়ে মজুদ করতেন। কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টে রুম ভাড়া নিয়েও সেখানে ইয়াবা মজুদ করতেন তিনি। এই মজুদ থেকে মাসে দুটি চালান ঢাকায় পাঠানো হতো। নিরাপদে ইয়াবার চালান ঢাকায় আনতে ব্যবহার করা হতো পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি।
জানা গেছে, পুলিশ লেখা ব্যক্তিগত গাড়ি দেখলে রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ তল্লাশি করত না। ফলে সহজেই ইয়াবা পৌঁছে যেত ঢাকায় নির্দিষ্ট ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাতে। মাহফুজ র‌্যাব কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিতভাবে ইয়াবা পাচার করতেন। কক্সবাজার থেকে এএসআই বেলাল ইয়াবা সংগ্রহ করে তাঁর (বেলালের) মালিকানাধীন মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় নিয়ে যেতেন। আর মাঝেমধ্যে কক্সবাজার যেতেন মাহফুজ। এদের কার্যক্রম সমন্বয় করতেন এসআই আকরাম।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী বাইপাস অংশের লালপুল থেকে ৬ লাখ
৮০ হাজার ইয়াবা সহ পুলিশের এসবির এএসআই মাহফুজুর রহমান ও তার গাড়িচালক মো. জাবেদ
আলীকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে মাদক বিক্রির নগদ সাত লাখ টাকা, চারটি
মোবাইল সেট, বিভিন্ন ব্যাংকের আটটি ক্রেডিট কার্ড ও তিনটি মাদক বিক্রির টাকার হিসাবের নোটবুক উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনার পর ইয়াবা পাচারের ঘটনায় পুলিশের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। যার প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দফতর দুইটি পৃথক কমিটি ঘটনা করে বিষয়ের তদন্ত শুরু করে।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য এসআই  আকরামের  সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।