দীর্ঘ ২ বছর বন্ধ থাকার পর আবারো পুরোদমে শুরু হয়েছে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যক্রম। কিন্তু শুরুতেই ডিবির কার্যক্রম নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়েছে। ইয়াবা কারবারিরা সুকৌশলে বিভিন্ন মিডিয়ায় ডিবির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় রত রয়েছে। এ সব প্রচারনা পড়লে যে কারো মনে হবে উখিয়া- টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসা হয় না বা কোন কারবারিও নেই। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, উখিয়া-টেকনাফে প্রতিটি এলাকা এখন ইয়াবা ব্যবসায়িদের দখলে। এ ইয়াবার কারনেই সীমান্ত এলাকা উখিয়া-টেকনাফ খ্যাতি পেয়েছে ইয়াবা রাজ্য হিসেবে। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ইয়াবা। সমাজপতি, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার গায়ে ইয়াবার কালিমা। ঘরোয়া বৈঠক থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকের অন্যতম এজেন্ডা এই ইয়াবা। তারপরও ইয়াবা বিরোধী অভিযান হলে বা অভিযানে কেউ আটক হলে কিছু লোক হুমড়ি খেয়ে পড়ে ইয়াবা বিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। তারা প্রমান করতে চেষ্টা করেন, পুলিশের জালে যারা ধরা পড়েন, তারা সবাই নিরীহ! তাহলে কি উখিয়া-টেকনাফে কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী নেই?
গত বুধবার টেকনাফ থানা পুলিশের ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে টেকনাফ পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে এমন ২/৩ জন ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেন, যারা ইয়াবা মামলার আসামী। এমনকি তাদের আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত।
টেকনাফ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মাইন উদ্দিন জানান, টেকনাফে ইয়াবা সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী। প্রতি পাড়া মহল্লায় এরা সক্রিয়। তাই পুলিশ অভিযানে বের হলেই তারা সংঘটিত হয়ে সিনক্রিয়েট করে। টেকনাফে ইয়াবা বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে ইয়াবা সিন্ডিকেটের পরিকল্পিত এসব অপকান্ডের বিষয়টি জেলা পুলিশকেও ভাবিয়ে তুলেছে। পুলিশ এসব ঘটনার অন্তরালে অন্য কোন ঘটনা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছেন।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কতিপয় পুলিশ সদস্যের ইয়াবা সংশ্লিষ্টতাসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার কারনে ডিবি পুলিশের কার্যক্রম প্রায় দু’বছর বন্ধ ছিল। এ দু’ বছরে ডিবি পুলিশের কোন ইয়াবা উদ্ধার, আটক বা জব্দ ছিলো না। ফলে কোন বাধা ছাড়াই নির্ভিগ্নে ব্যবসা করেছে কারবারিরা। এতে ভয়াবহ ভাবে বিস্তার লাভ করেছে ইয়াবা। ইয়াবার ভয়াবহতা রোধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে, আবারও ইয়াবা বিরোধী অভিযান শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর সুফলও আসে। বিপুল ইয়াবা উদ্ধারের পাশাপাশি, আটক ও জব্দ তালিকাও দীর্ঘ।
কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মনিরুল ইসলাম পিপিএম জানান, গত জানুয়ারি মাস থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮ শ ইয়াবা উদ্ধার করোছো গোয়োন্দা পুলিশ। এ সময়ে বিভিন্ন মামলা হয়েছে ২৩৯টি । আসামী করা হয়েছে ৪৩৮ জনকে। এছাড়া ১০টি অস্ত্র , কার্তজ ১৮ রাউন্ড এবং ১০টি কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশি সিগারেট আ্টক করেছে ৩ হাজার প্যাকেট, ফেন্সিডিল ৫৯০ বোতল, বিদেশি মদ ৬৪ লিটার, দেশি ১৫০ লিটার এবং বিয়ার ৭০ ক্যান। ইয়াব বহণের দায়ে ২৩টি বিভিন্ন যানবাহন আটক করা হয়েছে বলেও জানান ডিবি পুলিশের ওসি।
এদিকে ডিবি পুলিশের কার্যক্রম বন্ধের সময়কাল ও পুনরায় কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ৫ মাসের পরিসংখ্যান মিলালে আরও একটি প্রশ্ন সামনে চলে আসে। তা হলো, ডিবি পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে লাভ কার? ঘুরেফিরে লাভ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও তাদের সুবিধাভোগিদের।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাড়ানোর আহবান জানান।
পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, এটা নতুন কিছু নয়, ভাল কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। সব ধরনের অপপ্রচার ও বাধা অপেক্ষা করে জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি সকলের সহযোগিতায় কক্সবাজার থেকে মাদক নির্মূল করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।