দেশের ৫২ শতাংশেরও বেশি ব্যাংক তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। যার মধ্যে ১৬ শতাংশ খুবই উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ও ৩৬ শতাংশ উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘আইটি অপারেশনস অব ব্যাংক’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ শতাংশ ব্যাংক মনে করে, তাদের বর্তমান তথ্য নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়। তারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ৩৬ শতাংশ ব্যাংক মনে করে, যেকোনও মুহূর্তে তাদের তথ্য চুরি হতে পারে। এছাড়া ৩২ শতাংশ ব্যাংক কিছুটা কম ঝুঁকিতে এবং ১২ শতাংশ ব্যাংক কম ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ৪ শতাংশ মনে করছে তথ্য প্রযুক্তিতে তাদের ব্যাংক কোনও ঝুঁকিতে নেই।
কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে ঝুঁকছে। এর পেছনে বড় অংকের অর্থ খরচ হলেও ব্যাংকগুলো এখনও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। বাংলাদেশের সব ব্যাংকে একই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করলে সাইবার ঝুঁকি ও আর্থিক ক্ষতি দুটোই কমানো সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যাংক তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। এ খাতে তাদের বাজেট যেমন কম, তেমনি কেনাকাটায়ও দেরি করছে। কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে ব্যাংকগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি আইটি সিকিউরিটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। দেশের ব্যাংকগুলোর আইটি নিরাপত্তা বাড়াতে এবং সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আইটি ও সাইবার সিকিউরিটিসহ সাতটি বিষয়ের ওপর বিআইবিএম গবেষণা করে আসছে। ব্যাংকিং খাতের সেবার মান বাড়াতে বিআইবিএমের সুপারিশের আলোকে ব্যাংকগুলো ব্যবস্থা নিতে পারে।’
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংক অডিটে প্রত্যেক টিমের মধ্যে একজন করে দক্ষ আইটি বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে। কারণ, অডিটের সময় আইটি দুর্বলতা ধরা না পড়ার কারণে বড় বড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। ব্যাংকারদের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে কয়েক ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এসব জালিয়াতির জন্য কিছুক্ষেত্রে ব্যাংকাররাই দায়ী। আবার কিছু ঘটনা গ্রাহকদের অসচেতনতার কারণে ঘটছে। সুতারাং উভয় পক্ষকেই সচেতন হতে হবে।’
বিআইবিএমের পরিচালক ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি কিংবা গুরুপূর্ণ বিষয়ে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকা উচিত নয়। নিজস্ব উদ্যোগেই আইটিসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করতে হবে।’
সাউথইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি সফটওয়্যারের সমালোচনা করা হলেও হঠাৎ করে দেশি সফটওয়্যার ব্যাপকভাবে বাড়ানো ঠিক হবে না। দেশি-বিদেশি সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় করেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায় বলেন, ‘দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার না করে ব্যাংকগুলো অহেতুক বিদেশি সফট্ওয়্যারের দিকে ঝুঁকছে। ব্যাংকের অর্থে অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ কিংবা অন্য কোনও লাভের আশায় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তারা এ কাজ করছেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক নিরীক্ষায় আইটি বিষয়টি এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ব্যাংকগুলোর কল সেন্টারের অবস্থাও খারাপ। গ্রাহকের সেবার মান বাড়াতে এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।’
কর্মশালার পর্যালোচনা দলে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক কানিজ রাব্বি ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ এমদাদুল হক খান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।