ভারতের দিল্লিতে সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিল্লি যে ব্যর্থ সে কথা জানিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দিল্লিতে এতো মানুষের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল থেকে অশান্তি কিছুটা কমেছে। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি রাজধানীর। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পর থেকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি।
এদিকে, দিল্লির হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪-এ । বৃহস্পতিবার আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সোমাবর চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনজনের মৃত্যু।
হিংসাবিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধার এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা অফিসারের দেহ। উপদ্রুত চার এলাকায় কারফিউ। দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ। বন্ধ বাজার, দোকানপাট। আতঙ্কে রাজধানী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লির ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার শান্তি, ভ্রাতৃত্বের বার্তা দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত থেকে দিল্লির সংঘর্ষকবলিত স্থানগুলি ঘুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। কিন্তু প্রশ্ন হলে-পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণেই থাকে তাহলে মৃতের সংখ্যা কি বাড়তে পারে উত্তরোত্তর?
মঙ্গলবার রাত থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দিল্লি পুলিশের নরম মনোভাবকে ত্যাগ করে শক্ত হাতে হাল ধরার পরামর্শ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রাস্তায় নামানো হয় আধা সেনাবাহিনী। সেনার হাতে রাজধানীর দায়িত্ব তুলে দেওয়া নিয়ে একপ্রস্থ তরজাও হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে। পরে অজিত দোভাল দিল্লির উত্তপ্ত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক, ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে অজিত দোভালের আশ্বাসেই কি দিল্লিবাসী আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক জনজীবনের ছন্দে প্রবেশ করতে পারবেন?
দিল্লিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মঙ্গলবার রাত থেকেই দফায় দফায় এলাকায় চলছে পুলিশের টহল। ১৪৪ ধারা জারি করে রাখা হয়েছে মউজপুর, কারওয়া লনগর, জাফরাবাদের মতো এলাকাগুলিতে। আজ, বৃহস্পতিবারও প্রায় দিনভর চলবে আধাসেনার কড়া প্রহরা।
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর যেভাবে অজিত দোভাল এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন বুধবার সেভাবেই ঘুরে দেখেন দিল্লি। তবে বুধবার সন্ধে থেকে ফের উত্তেজনা ছড়ায় ভজনপুরা, মউজপুর, কারওয়াল নগরে। বেশকিছু জায়গায় আগুনও লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। দিল্লি পরিস্থিতি ঘুরে দেখার সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখেও পড়েন তিনি। এর মধ্যেই দিল্লিতে যখন ধাপে ধাপে বাড়ছে মৃত্যু মিছিল তখন দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র জানান, তেমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নেই। প্রায় ১০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৮ জনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যদিও দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বুধবার গোটা দিনই চলে কাটাছেঁড়া। সুপ্রিম কোর্ট থেকে দিল্লি হাইকোর্ট কোথাও ছাড় পায়নি দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এম জোসেফ। দিল্লি পুলিশের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
এদিকে দিল্লির হিংসা ছড়াতে বিজেপির যে চার নেতা উসকানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্নে জর্জরিত করা হয় দিল্লি পুলিশকে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।