মুফিজুর রহমান,(বাইশারী): বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে থ্যালাসেমিয়া নামক ব্যায়বহুল রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবননাশের মুখে শিশু তৌহিদুল ইসলাম (৬)। সে ইউনিয়নের তুফান আলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্র। তৌহিদের বয়স যখন দুই বছর তখন থেকেই তাকে কেমন যেন ফ্যাকাশে দেখাতে থাকে। সাথে খাওয়ায় অরুচি এবং পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট। বাবা মায়ের উদ্বিগ্ন মন বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তৌহিদের রক্তে ধরা পড়ে একটি জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বর্তমানে শিশু তৌহিদের হাত-পা শুকিয়ে যাচ্ছে। পেটও সামান্য বড় হচ্ছে। চিকিসৎকের পরামর্শ মতো প্রতিমাসে তার শরীরে এক ব্যাগ করে “ও” পজেটিভ রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এ-কমাত্র ছেলে এবং সংসারের ছোট সন্তানের এমন দুরাবস্থায় বাবা নুরুল হাকিম ও মা জান্নাতুল ফেরদাউস দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় মক্তবে কোরআন শিখতে যাওয়া থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু তৌহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে জানায়, তার কথা বলতে খুব কষ্ট হয়। হাটতে পারে না। অনেকক্ষন হাটলে মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায় সে। তার কি রোগ হয়েছে সে জানে না। সে আরো জানায়, আমি সবার মত করে খেলতে চায় এবং পড়ালেখা করতে চায়।
তৌহিদের বাবা নুরুল হাকিম নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ডিবাইন রাবার গার্ডেনের সুপারভাইজার হিসেবে মাত্র ছয় হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করেন। এই সামান্য বেতনে তার ¬৪ মেয়ের পড়ালেখার খরচ, সংসার খরচ ও ছেলের চিকিৎসা খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
বাবা নুরুল হাকিম জানান, অনেক চিকিৎসা করেছি। এ পর্যন্ত আমার একমাত্র ছেলেটির পিছনে ৩ লাখেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। ডাক্তারা জানিয়েছেন, থ্যালাসেমিয়া রাগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে রক্ত দেওয়া। তিন বছর বয়স থেকেই আমার শিশু ছেলে অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি রক্ত দিয়ে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। ছেলের রক্তের গ্রুপ ঙ+। তিনি জানায়, আমার একমাত্র ছেলেকে শুধু রক্ত দিয়েই কি বাঁচানো যাবে। এর কি কোন চিকিৎসা নেই?
মা জান্নাতুল ফেরদাউস জানান, দুই বছর পর যখন বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিই। তারপর থেকে দেখি, তৌহিদের মুখ ফুলে যাচ্ছে, সব সময় গায়ে জ্বর থাকে। তারপর স্থানীয় ডাক্তারের পাশাপাশি এমবিবিএস ডাক্তারের শরনাপন্ন হই। ছেলের কষ্ট আর সহ্য করা যায় না। এখন ছেলেটিকে চিকিৎসা করাতে না পারলে তাকে বাঁচানো যাবে না। তিনি আরো জানান, তার চার মেয়ে এবং ১ ছেলে। তৌহিদ সবার ছোট। একমাত্র ছেলেটির হঠাৎ কঠিন রোগে আক্রা¬ন্ত হয়ে পড়ায় মা হিসেবে আমি চিন্তায় আছি।
তৌহিদের বড় বোন শাহজাহান বেগম জানান, খেলাধুলা করার সময় হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন তার জ্ঞান থাকে না। এ অবস্থায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। স্কুলে নিয়মিত যেতে পারে না। আমার ভাইকে আমি সুস্থ হিসেবে দেখতে চাই।
তুফান আলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল আজিম জানান, শিশু বয়সে অন্যান্য ছেলেদের পাশাপাশি তারও খেলাধুলার প্রতি আসক্তি বেশি। কিন্তু দূর্বলতা এবং শ্বাষকষ্টের কারণে কূলিয়ে উঠতে পারে না। এমনকি খেলতে গিয়ে বারবার সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। এতে আমরা শিক্ষক হিসেবে অনেকটাই দূশ্চিন্তায় থাকি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: আবু তাহের জানান, শিশু তৌহিদের চিকিৎসায় অনেক টাকার প্রয়োজন। যা তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে যোগাড় করা অসম্ভব। তাই শিশুটিকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।