সাত ভাই আর দুই বোনের পরিবারটি পাঁচ বছর আগেও চলতো কষ্টেসৃষ্টে। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। সুপারিবাগান ঘেরা ভিটেয় একটি টিনশেডের আধাপাকা বাড়ি দেখে দিদার বলীর আর্থিক অবস্থার বেশি কিছু বোঝারউপায় নেই। তবে তিনটি বিলাসবহুল কার, গ্রামের স্টেশনে একটি বড় পাকা মার্কেট আর বিলাসী জীবন বলে দেয়গত তিন বছরে কতো টাকার মালিক বনে গেছেন দিদারুল আলম ওরফে দিদার বলী। এসবই হয়েছে ইয়াবার গুণে।দিদার বলী পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী বিষয়টি এতদিন লোকমুখে শোনা গেলেও গত ২৮ জুন ময়মনসিংগ গোয়েন্দাপুলিশের হাতে তিন সহযোগী নিয়ে ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে। এ সময় তার ব্যবহৃত একটি প্রিমিও ব্রান্ডের প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে। তার কাছে দুইশ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে।
দিদার বলী ছাড়াও গ্রেপ্তার বাকী তিনজন হলেন, রামুর উমখালি মুক্তার বাপের বাড়ির আবদুল করিমের ছেলে মো. ইসমাইল, পশ্চিম রাজারকুল ধরপাড়ার মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে শওকত হোসাইন ও তার গাড়ি চালক পশ্চিমরাজাকুল ধরপাড়ার আবু সৈয়দের ছেলে আবদুল আজিজ। চারজনকে আসামি করে ময়মনসিংহ সদর থানার গত২৯ জুন গোয়েন্দা পুলিশের রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
দিদার বলীর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় আরো একটি মামলা রয়েছে। মারধর করে আর্থিক ক্ষতি করারঅপরাধে রামুর উমখালি গ্রামের তফুরা বেগম নামে এক মহিলা রামু থানায় গত ১৭ জুন এ মামলা দায়েরকরেছেন।
গতকাল শনিবার রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ময়নমসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আশিকুররহমান জানান, ময়মনসিংহ সদরের স্টেশন রোড এলাকা থেকে ২৭ জুন রাতে ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করাহয়। তার ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিও জব্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দিদার বলীর দুটি প্রাইভেট কার আছে। একটি নিশান ও অন্যটি টয়োটা এফ প্রিমিও মডেলের প্রাইভেটকার। গাড়ি চালকের ডানপাশে দরজার ভেতরে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা বহন করেন দিদার বলী। প্রিমিও গাড়িটিকরে তিনি আগে আগে যান। আর নিশান গাড়িটি যায় পেছনে পেছনে। মূলত পেছনের গাড়িতেই রাখা হয় ইয়াবা।
দুই সপ্তাহ আগে টেকনাফ থেকে তিন টন পণ্য ওজন ক্ষমতা–সম্পন্ন একটি পিকআপে করে ইয়াবা আনার সময়শাহাব উদ্দিন নামে দিদার বলীর এক সহযোগীকে বিজিবি সদস্যরা আটক করেন। জব্দ করেন ১৭ হাজার ইয়াবা।টেকনাফ থানার পরিদর্শক (ওসি) রনজিৎ বড়ুয়া জানান, শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে।জব্দ পিকআপটি কাস্টমসের কাছে জমা দিয়েছে বিজিবি।
চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলার ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন দিদারুল আলম ওরফে দিদার বলীর গ্রামের বাড়িকক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে। গ্রামের নাম উমখালী। বাবা আশরাফ আলীপাঁচবার ইউপি সদস্য নির্বাচনে অংশ নিয়ে একবার নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের নেশা তাকে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্তকরে। ফলে সব জমিজমা বিক্রি করে একমাত্র সুপারিবাগান আর ভিটেই অবশিষ্ট থাকে সম্বল হিসেবে। প্রতিবছরেরবৈশাখ আসলে বিভিন্ন স্থানে বলী খেলায় অংশ নিয়েও কিছু টাকা আয় করেন দিদার বলী। তবে তা সংসারচালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। মাঝখানে স্থানীয় উমখালী স্টেশনে একটি মুদির দোকান দেন দিদারের বাবাআশরাফ আলী। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। পাঁচবছর আগে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান দিদার বলী। দ্রুতবদলাতে থাকে আর্থিক অবস্থা। উমখালী স্টেশনে বেশি দাম দিয়ে প্রায় ৫ গ–া জায়গা কিনে রাতারাতি পাকামার্কেট তৈরি করেন। আজিজুল হক নামের এক ভাইকে পাঠান সৌদি আরবে। কিন্তু তিনি সেখানে বেশিদিন টিকতেপারেননি। চলে আসেন দেশে। তাকে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করান দিদার বলী। কিন্তু ওই বিয়ে বেশিদিন টিকেনি।দ্বিতীয়বার আবারও ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করান ভাইকে। বর্তমানে আজিজুল হক নিজেদের মার্কেটে একটি বড়করে মুদির দোকান দিয়েছেন। দিদার বলী ব্যক্তিগতভাবে একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করলেও তিনি নিজ নামেআরও তিনটি মোবাইল ফোনের নিবন্ধন নিয়েছেন।
দিদার বলীর বাবা আশরাফ আলী একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ২০১৪ সালেউপজেলা নির্বাচনে দিদারুল আলম ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চতুর্থ হন। এর পর পরবর্তী নির্বাচনেঅংশ নিয়ে জয়ের আশায় সপরিবারে বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। তবে জেলা বিএনপি ও আওয়ামী লীগেরশীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে সমান যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন তিনি। আর্থিকভাবে সাফল্য আসার পর এই ইয়াবা ব্যবসায়ীনিজ গ্রামের একটি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতিও হন। এভাবে ইয়াবা থেকে পাওয়া বিপুল অর্থ নিজপ্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে লাগান তিনি। ইয়াবা ব্যবসার বদনাম ঢাকতে এলাকায় ওয়াজ মাহফিলেরআয়োজনও করেন। তাতে আর্থিকভাবে সহায়তা দেন। আর অর্থের গুণেই ওয়াজ মাহফিলে সভাপতিত্ব করেনপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ–ি পার না হওয়া দিদার। দিদার বলীর গ্রামে বাড়ি হলেও তিনি গত চারবছর ধরে নিয়মিতকক্সবাজার শহরের লাবনী পয়েন্টে বিলাসবহুল হোটেলের কক্ষ ভাড়া করে থাকতেন। সেখানে নিজস্ব বিশেষ পাহারাআছে। ফলে তার কক্ষে চাইলেই যখন তখন কেউ যেতে পারতো না।
সূত্র: দৈনিক পুর্বকোণ
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।