২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

দুই নেতা দিয়েই চলছে মৎস্যজীবী দল!

সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক এই দুই মিলে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল। ২০১১ সালের ২ ডিসেম্বের এই বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূ্র্ণ এই সংগঠনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিবীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মিলন মেহেদী আর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আব্দুল আউয়ালকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর মাস ঘুরে ৭ বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে দেয়া হয়নি।

এদিকে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে আব্দুল আউয়ালকে কুমিল্লা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক করায় তিনি এক নেতার এক পদ নীতি অনুসরন করে মৎস্যজীবি দল থেকে পদত্যাগ করেন। আর এভাবেই এখন দুই নেতা দিয়ে চলছে দলটির গুরুত্বপূর্ন এই অঙ্গ সংগঠন।

নেতাকর্মীরা জানান, মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এরকম হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারনে সারাদেশের ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটিও এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো জেলায় দেড় যুগ অতিক্রম হলেও নতুন কমিটি গঠণ করা হয়ে ওঠেনি।

সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আর সাংগঠনিক সম্পাদকের কোন্দলের কারণে অসহায় হয়ে পড়েন সভাপতি। বিভিন্ন সময়ে তিনি ওই দুই নেতার দসাথে আলাদা-আলাদা বৈঠক করেও কোন্দল নিরসন করে  পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি। বিষয়টি তিনি দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করলেও কোনো সমাধান আসেনি। সংগঠনের ওই দুই নেতা দলের প্রভাবশালী নেতা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের একান্ত আস্থাভাজন হওয়ার কারণে কোন্দল নিরসন করার সাহসও কেউ দেখাননি।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি বাংলাদেশ জেলে দল সংগঠনটির কার্যক্রম তার মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২০ বছর পর ১৯৯৩ সালের বিএনপির কাউন্সিলে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী দল নামকরণ করা হয়। এর প্রায় ৭ বছর পর ২০০০ সালে দলের চেয়ারপার্সন মৎস্যজীবী দলকে বিএনপির অঙ্গসংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর গঠনতন্ত্র তৈরী করে পূর্ণাঙ্গ রুপে আত্মপ্রকাশ করে কার্যক্রম আরম্ভ করে।

২০০৩ সালে সংগঠনটির প্রথম কাউন্সিলে বর্তমান সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব এবং মনিরুল হক মোল্যা সাধারণ সম্পাদক হিসেব দায়িত্ব গ্রহন করেন। ওই সময়ের দায়িত্বশীল কমিটি সারাদেশে মৎস্যজীবিদের নিয়ে সংগঠনকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করান। পাশাপাশি দেশের মানুষকে আমিষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন করতে মৎস্য চাষের উপর কর্মসূচি পালন করে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এমনকি সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাবের নেতৃত্বে সারাদেশের জলজ সম্পদ নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী প্রকাশনাও তৈরী করা হয়েছিলো। যার মধ্যে দেশের সকল পুকুর-ডোবা, খাল-বিল, নদীর আয়তন, সংখ্যাসহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়ান ইলেভেন প্রেক্ষাপটে দলকে পূনর্গঠন প্রক্রিয়ায় এ সাংগঠনিক কমিটিকে বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি প্রদানের পর থেকেই ধস নামতে শুরু করে সকল পর্যায়ে। এর মধ্যে সিন্ডিকেট নির্ভর ও এক নেতার আশীর্বাদপুষ্ট নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের পর থেকেই থমকে যায় মৎস্যজীবি দলের কার্যক্রম।

নেতাকর্মীরা জানান, দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল এই সংগঠনকে উজ্জীবিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি একটি সম্মেলন করার প্রস্ততি সম্পন্ন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহনকে অতিথি করে দাওয়াত পত্র, সম্মেলনের জন্য হল ভাড়াও করেছিলেন। কিন্তু সম্মেলনের আগের রাতে মহাসচিব ওই সম্মেলন স্থগিত করে দেন। মৎস্যজীবি দলের সাধারণ সম্পাদক মিলন মেহেদী এবং সংগঠন থেকে ইস্তফা দেয়ার পরও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল যোগসাজশ করে ওই সম্মেলনের বিরোধিতা করে মহাসচিবসহ সকলকে প্রভাবিত করেন। যার কারনে সম্মেলনের জন্য সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা রাজধানী ঢাকায় এসে উপস্থিত হলেও ফিরে যেতে হয়েছে তাদের।

নেতাকর্মীরা জানান, বিগত আন্দোলনে এই সংগঠনের কোন অংশগ্রহণ ছিলো না। তবে এককভাবে আন্দোলনে অংশ নেয়ায় সংগঠনের সভাপতি ষাটোর্ধ মাহতাবের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা হয়েছে। কারাগারে যেতে হয়েছে ৬বার। অপর দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা একটি জিডি পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু এরপরও তাদেরকে পদায়ন করা হয়েছে। শুধুমাত্র রিজভী আহমেদের আস্থাভাজন হওয়ার কারনে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

তারা জানান, আগে তিন নেতা আর এখন দুই নেতা নিয়ে বিএনপির মতো একটি বড় দলের অঙ্গ সংগঠন পরিচালিত হতে পারে তা আমাদের কাছেও বিস্ময়। অভিভাবকহীন অবস্থায় দীর্ঘ সাত বছর অতিক্রম করলেও হাইকমান্ডের নজরে পড়েনি। আগামীতেও পড়বে না। যদি এরকম সংগঠনকে আবারো বিলুপ্ত করে দেয়া উচিৎ। তা না হলে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা উচিৎ।

নেতাকর্মীরা জানান, দলের মৎস্যজীবী দল যেন আলাল আর দুলালের মতো করে চলছে। আলাল যদি ডাইনে যায়, দুলাল যায় বামে। আমাদের সংগঠনেও সভাপতি যদি ডানে যায় অন্যজন যায় বামে। এর আগে সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুই নেতার মধ্যেও ছিলো কোন্দল। তারাও আবার ডানে বামে করে ছিলেন।

সভাপতি মহানগরের কমিটি তৈরী করতে চাইলে তারা দু’জন বাধা দেন। এমনকি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটির বিরোধীতাও করেছেন তারা। আবার তাদেরকে কমিটি দিতে বললে নিজেরা কোন্দলের সৃষ্টি করেন। সারাদেশের কমিটি নিয়েও চলছে তেলেসমতি কান্ড। এর মধ্যে আবার কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। পদ পদবী দেয়ার নাম করে একাধিক নেতাকর্মীর নিকট থেকে টাকা নিয়েছেন ওই দুজন নেতা। এ অভিযোগ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে। মিলন মেহেদীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এম এ আউয়াল কুমিল্লা জেলার মজিবর নামক এক ব্যাক্তির নিকট থেকে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি করা হবে এমন আশ্বাস দিয়ে ৩৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। আবার এম এ আউয়াল দাবি করেন, মিলন মেহেদী বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়েছেন পদ দেয়ার নাম করে। এরকম নেতৃত্বের কবলে পড়ে বেকায়দা আছেন সভাপতি নিজেও। এদিকে সভাপতির স্বাক্ষর জ্বাল করে সাধারন সম্পাদক মিলন মেহেদী ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ ও মুন্সিগঞ্জের কমিটিও ঘোষণা করেন। যা পরবর্তিতে বাতিল করা হয়। এভাবেই চলছে মৎস্যজীবী দল।

এসব বিষয়ে সংঘটনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব বলেন, আমি ১৯৬৭ সাল থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত। কিন্তু এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এরকম উদ্ভট সমস্যায় কখনো পড়িনি। আমার এতদিনের সকল অর্জন এখন ধুলিস্যাৎ হওয়ার পথে। আমি এখন ফাঁদে পড়ে গেছি।

সূত্র- পূর্বপশ্চিম

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।