মাঘের শীত উপেক্ষা করে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে দলে দলে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে।
আজ শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। দ্বীনের দাওয়াতে শরিক হতে আসা মুসল্লিদের আটকাতে পারেনি কোনো বাধাই।
ইজতেমায় অংশ নিতে ১৭টি জেলার মুসল্লিরা বুধবার থেকে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। দ্বিতীয় পর্বে ১৭টি জেলার মুসল্লিদের জন্য ২৬টি খিত্তা নির্ধারণ করা আছে। ইজতেমা ময়দানে জেলাওয়ারি খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান নিচ্ছেন।
২২ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা।
শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হওয়া আমবয়ানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বুজর্গ আলেমগণ ইমান, আমল, আখলাক ও কালেমা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান শুরু করেন। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমারও প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় কয়েক লক্ষ মুসল্লিদের নিয়ে বৃহৎ জুমার নামাজ আদায় করা হবে। জুমার নামাজে গাজীপুর ও আশপাশের এলাকার বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশ নিবেন।
ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক, তুরস্ক থেকে শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় কয়েক হাজার বেশি বিদেশি মেহমানসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা স্থলে হাজির হয়েছেন। এ পর্বের ইজতেমায় আগত মানুষের ঢল অব্যাহত থাকবে রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় ১৭টি জেলার মুসল্লিগণ অংশ নেবেন। ২৬ খিত্তায় এসব জেলা গুলো হচ্ছে, ১নং থেকে ৫ ও ৭নং খিত্তায় ঢাকা জেলার বাকি এলাকা, ৬নং খিত্তায় মেহেরপুর, ৮ নং খিত্তায় লালমনিরহাট, ৯ নং খিত্তায় রাজবাড়ী, ১০নং খিত্তায় দিনাজপুর, ১১ নং খিত্তায় হবিগঞ্জ, ১২ ও ১৩ নং খিত্তায় মুন্সিগঞ্জ, ১৪ ও ১৫ নং খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ১৬ নং খিত্তায় কক্সবাজার, ১৭ ও ১৮ নং খিত্তায় নোয়াখালী, ১৯ নং খিত্তায় বাগেরহাট, ২০ নং খিত্তায় চাঁদপুর, ২১ ও ২২ নং খিত্তায় পাবনা, ২৩ নং খিত্তায় নওগাঁ, ২৪ নং খিত্তায় কুষ্টিয়া, ২৫ নং খিত্তায় বরগুনা এবং ২৬ নং খিত্তায় বরিশাল জেলার মুসল্লিগণ অবস্থান নেবেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।
৫ স্তরের এ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ইজতেমা ঢেকে রাখা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।
এদিকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পার্শ্বে নিউ মন্নু কটন মিলের অভ্যন্তরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে এ বছরও বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
২০ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখী সকল ট্রেন টঙ্গী রেল স্টেশনে ২ মিনিট বিরতি দেবে।
বিআরটিসিও বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে অন্য বছরে ন্যায় এ বছরেও বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে। রাজধানীর গুলিস্থান, ফুলবাড়িয়া, কমলাপুর, মতিঝিল, ফার্মগেট, গাবতলী, মহাখালী, আজিমপুর থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত বিশেষ বাস সার্ভিস চালু থাকবে।
এছাড়া ইজতেমা ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন দুই শিফটে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিশুদ্ধ খাদ্য আইন, ছিনতাইকারী পকেটমার ধরাসহ বিভিন্ন অপরাধীদের এ আদালত সাজা প্রদান করবেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।