টানা চার দিনের ভারী বর্ষণে নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন স্থানে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ী ঢল ও পার্শ্ববর্তী বাকঁখালী নদীর পানি উজানে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বাইশারী, ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ধুংরী হেডম্যান পাড়া, বড়–য়া পাড়া এবং বাজার এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে মূল্যবান মালামালের ক্ষতি হয়। রামু সড়কে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বুধবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলা সদর। এদিকে বাইশারিতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দুই জন নারী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
রামু বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, রামু ভূতপাড়া এলাকায় বিদ্যুতের খুটি পানিতে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের বিষয়ে এখনো কিছু বলা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। জানা গেছে, ভারী বর্ষণে বাইশারী ইউনিয়নের মধ্যম বাইশারী, পশ্চিম বাইশারী, নারিচবুনিয়া ও বাজার এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে চলমান কর্মসৃজন কর্মসূচীর একটি বাধঁ ভেসে গেছে। এছাড়াও আশারতলী বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মৎস্য দপ্তরের নির্মাণাধীণ বাধেঁর উপর পাহাড় ধ্বসে পড়েছে। মধ্যমবাইশারী এলাকার পানি বন্দি গ্রামবাসীকে বাইশারী পুলিশ ফাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সদরে ৩১ বিজিবি জোন, মহিলা বিষয় কর্মকর্তার দপ্তর, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস, এলজিইডি দপ্তর, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও পানি বন্দী রয়েছে।
এদিকে উপজেলার বাইশারীতে টানা ৫ দিনের প্রবল বর্ষণে দক্ষিণ নারিচ বুনিয়া, ধৈয়ার বাপের পাড়া, পশ্চিম বাইশারী, দক্ষিণ বাইশারী, পূর্ব বাইশারী, মধ্যম বাইশারী, ধাবন খালী মার্মা পাড়ার শতাধিক বাড়ী ঘর পানির নিচে রয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দক্ষিন নারিচবুনিয়া ও দক্ষিন বাইশারী। প্রবল বর্ষনে বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এই এলাকার অধিকাংশ বাড়ীঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দক্ষিন নারিচবুনিয়া এলাকার লাল মিয়ার পুত্র বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাষ্টার আব্দুল মাবুদ, তার বড় ভাই আব্দুর রহিম ও খুশনেআরা বেগম নামের এক অসহায় মহিলার বাড়ীটি পানির ¯্রােতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হয়। তাছাড়া উত্তর নারিচবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাকিমের পুত্র আব্দুল খালেকের বসত বাড়ীটি ঝড়ে উপড়ে ফেলায় বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে।
প্রবল বর্ষণের কারণে বাইশারী ইউনিয়নের অভ্যান্তরিন সড়ক, বাইশারী-গর্জনিয়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে এবং বাইশারী ঈদগাঁও সড়কের কানিয়া ছড়া নামক স্থানে পাহাড়ী ঢলের পানিতে পাকা সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে হিললাইন মিনিবাসের কাউন্টার ম্যানেজার আরমানুর রহমান টিটু জানান।
এছাড়াও বাইশারীর পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন গর্জনিয়া এলাকার বড়বিল, নজু মাতবর পাড়া, বড়–য়ার চড়া, মরিচ্যা চর, থিমছড়ি, নতুন বাজার, থোয়াঙ্গাকাটা, পূর্ব জুমছড়ি সহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক চৌধুরী ইয়াহিয়া।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদ বলেন- টানা বর্ষণে উপজেলায় বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় পরিবারের জন্য ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ১২ মে:টন চাল ও ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে তুমব্রু খাল ও পাহাড়ী ঢলে তুমব্রু কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া, উত্তর পাড়া ও বাজার এলাকায় মানুষ পানি বন্দী এবং অভ্যান্তরীন কয়েকটি সড়কে পাহাড় ধ্বসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানান ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যন জাহাঙ্গীর আলম।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু শাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদ ইসলাম বলেন- ভারী বর্ষণে উপজেলায় অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। তবে বড় ধরনের কোন ক্ষয় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বন্যার সর্বশেষ খোজ খবর তিনি রাখছেন বলে জানান। তবে বৃহস্পতিবার তিনি বেশ কয়েকটি এলাকায় পরিদর্শন করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় উপস্থিত না থাকার বিষয় নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।