উখিয়ার পার্শস্থ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩নং ইউনিয়ন ঘুমধুমের সাম্প্রতিক সময়ের অালোচিত-সমালোচিত পাহাড় কেটে বালু বাণিজ্যের ঘটনা নতুন নয়। ধারাবাহিক পাহাড় ধ্বসে ২ শ্রমিক দিনমজুর হিসেবে পাহাড় কাঁটতে গেলে প্রানহানীর ঘটনায় প্রান হারায়, ১ শ্রমিক চির পঙ্গুত্বের শিকার ও বালুবাহী ড্রাম্পার চালক জীবন -মৃত্যুর সাথে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লড়ে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক নিয়তির নির্মম খেলাও বলা যায় অনাকাঙ্ক্ষিত এসব দুর্ঘটনাকে।ঘুমধুমের পাহাড় কাটার দৃশ্যমান পরিস্থিতি এখনের নয়। বাংলাদেশ -মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই বালু সরবরাহ করে লাখ – লাখ টাকা বাণিজ্য করে আসছিল বর্তমান সরকার দলের ছত্রঁছায়ায় থেকেএকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে বীরদর্পে অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। ভাগ্যক্রমে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মাটি কাঁটার শ্রমিক নোয়াপাড়ার জনৈক সাবেক মেম্বার আলী চান্দেঁর বসতভিটির উচ্চ পাহাড় কাটঁতে গিয়ে ক্যাম্প পাড়ার বাঁহা সুলতানের পুত্র মুজিবুল হক পাহাড় ধ্বসে পড়ে গুরুতর জখম হয়ে দীর্ঘ মাসাধিককাল চট্রগ্রাম মিডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের পরেও কিছুটা সুস্থতায় বাড়ি ফিরলে পঙ্গুত্বের কাছে হার মেনেছে তার সাভাবিক জীবন প্রবাহ।
দুর্ঘটনার তালিকায় যোগ হল গত বছরের নভেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহে পাহাড় ধ্বসে গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয় ঘুমধুম হেডম্যান পাড়ার মৃত ওমর মিয়ার পুত্র জয়নাল আবেদীন (২৩) আরেক শ্রমিক। সে গুরুতর জখমী হয়ে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণর সপ্তাহের মাথায় অকাল মৃত্যুর কাছে হার মেনে না ফেরার জগতে চলে যায়। কিন্তু বিধিবাম। জয়নালের এমন করুন মৃত্যুর ব্যাপারে ময়নাতদন্ত তো দুরের কথা! প্রশাসনের রহসজনক নিরবতায় বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে ধামাচাপা পড়ে গেল! শুধু আত্মীয়সজন পড়শীঁদের মাঝে সজন হারানোর বেদনার ক্ষতটি বেঁচে আছে।
এবার মৃত আর পঙ্গুত্বের শোক মিছিলে যোগ হল চলতি মাসের ১২ জানুয়ারীর ঘুমধুম নোয়াপাড়া নামক স্থানে পাহাড় ধ্বসের মর্মান্তিক ঘটনা। ওইদিন সুর্যাস্তের গত সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৫ঘটিকা। উক্ত স্থানের জনৈক মীর কাসেম, পরাঁন আহমদ ও জেলে মোঃ আলমের ত্রিমুখি সীমানা লাগোয়া পাহাড় কাঁটার শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন ড্রাম্পার চালক উখিয়ার রাজা পালংয়ের সুবধন বড়ুয়ার পুত্র সমীকরন বড়ুয়া (৩৫) এর চালিত মিনি ড্রাম্পার। ওই সময় শ্রমিক নোয়াপাড়ার হতদরিদ্র শ্রমিক খাইরুল বশর, মৃত মকবুল সোবহানের পুত্র মোঃ রশিদ, তার ভগ্নিপতি মোঃ আলম,সহ ৪/৫ জনের দৈনিক মজুর শ্রমিক।ওই আকস্মিক পাহাড় ধ্বসে মাটি কাটাঁরত শ্রমিক খাইরুল বশর (২০) ও ড্রাম্পার চালক সমীরন বড়ুয়া ভাগ্যক্রমে আহত অবস্থায় প্রানে রক্ষা পেলেও
গুরুতর জখমী খাইরুল বশর ও সমীরন বড়ুয়াকে প্রত্যেক্ষদর্শী লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে খাইরুল বশর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শোক সাগরে ঘুমধুমবাসীকে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
গুরুতর আহত চালক সমীরন বড়ুয়া এখনো মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতঁরাচছেন শয্যায়।
ঘুমধুমে পাহাড় কাঁটার রেওয়াজ চালু করেন কথিত ছাত্রলীগ নেতা জনৈক আবদুস সোবহানের পুত্র নুর হোসেন। নাইক্ষ্যংছড়ির সরকার দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতারদের আশ্রয়ে ও তাদের নাম ভাংগিয়ে ঘুমধুমের কয়েকজন নেতৃত্বশীল ব্যক্তির আস্কায় বীরদর্পে এখনো পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে তার নেতৃত্বে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের বাড়ি সংলগ্ন। সমপ্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল ঘুমধুমের পাহাড় কাঁটা ও ধ্বসে প্রানহানীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটাঁ বন্ধ ও প্রানহানীর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।১২ জানুয়ারী শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনায় জড়িত হিসেবে ঘুমধুম ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কামাল উদ্দিনকে প্রধান, ঘুমধুম সীমান্তের ইয়াবা মহাজন জলপাইতলীতে ভোটার হওয়া মিয়ানমার পালানো নাগরিক মমতাজ মিয়ার পুত্র ইমাম হোসেন প্রকাশ ইমরান হোসেন ওরপে ইয়াবা বেঈমান হোসেন, শামসুল আলমের পুত্র ছাত্রদল নেতা সাহাবুদ্দিন, ঘুমধুম বেতবুনিয়া এলাকার আলতাফ হোসেনের পুত্র মফিজ,নোয়াপাড়ার মৃত মকবুল ছোবহানের পুত্র মোঃ রশিদ, মৃত ইমাম শরীফের পুত্র আহমদ কবির.মৃত মীর কাসেমের পুত্র বদিআলম খলিফা ও পুর্ব পাড়ার সফরঁ মুল্লুকের পুত ইয়াবা নুরু সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামী করে ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের এএসআই রুপন বড়ুয়া বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং – ০৭/১৭ ইংরেজী। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ইনচার্জ উপ – পরিদর্শন (এসআই) এরশাদ উল্লাহ জানান, কোন নিরীহ লোক আসামী হবেনা। প্রকৃত দোষীরাই আইনের আওতায় আসবে। তদন্ত অব্যাহত আছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদ কবির জানান, প্রকৃত অপরাধীরাই শাস্তির আওতায় আসবে। কোন নিরীহ লোক হয়রানির শিকার হবেনা। নিহতের পরিবার প্রচলিত আইনের সর্বোচ্চ ও পারিবারিক ভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাদানে পুলিশ পাশে থাকবে। সমপ্রতি ঘুমধুমে পাহাড় কাটাঁ, ধ্বসের প্রানহাণি
স্থল পরিদর্শন পরবর্তী জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল বলেন তিনি পাহাড় কাঁটা বন্ধ ও প্রানহানী স্থলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পাহাড় কাঁটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন পুলিশকে। কিন্তু মামলায় অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল নিজেকে নির্দোষ দাবী করে জানান,তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগনের সেবা,সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগনের দোরগোয় পৌছাতে গিয়ে বার – বার ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন।এ মামলায় তিনি সহ ৭জন যুবলীগের নেতাকর্মী আসামী হওয়ায় বর্তমান সরকারের ভার্বমুতি লাটে ওঠেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ার আশংকা করেন। অথচ যে খাইরুল বশর প্রান হারান, তার বাবা সোনালী বলেন বাংলাদেশ – মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ কাজের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী সংস্থার বাল সরবরাহ কাজের শ্রমিক গিয়েছিল দৈনিক মজুরীতে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। অথচ ময়না তদন্ত করতে বারণ করায় অতিউৎসাহী পুলিশ নিজেদের খরচে আসামী করেছে নিরীহ লোকদের নামে। তিনি ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ,মিশকাতুন্নবী (সাঃ) দাখিল মাদরাসার নির্বাচিত বিপুল ভোটের প্রতিনিধি। ইউনিয়ন যুবলীগের বিগত কয়েক দফায় সভাপতি,সীমান্তে মাদক,ইয়াবা,চোরাচালান ও জংগীবাদ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্ব সহ সরকারে ইতিবাচক কল্যাণ মুলক কর্মকান্ড ,রাষ্ট্র, সমাজ,ধর্মীয় মসজিদ – মাদরাসা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ,বিভিন্ন ভালকাজের সাথে সম্পৃক্ত থেকে অসত্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে ভুমিকা পালন করায় এলাকার বিরোধীয় কর্তৃত্ত ও প্রতিক্রিয়াশীল গুটিকয়েক ব্যক্তির আক্রোশের শিকার হচ্ছি।
বার -বার ওইসব প্রতিক্রিয়াশীল গুটিকয়েক লোকের সাথে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সখ্যতা থাকায় আমাকে দমিয়ে রাখতে পিছু লেগেই আছে। যারা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে আতাঁত করে একের পর এক অপরাধের সাথে জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী করে যাচেছ। ইহ দুনিয়ায় হয়তো ন্যায় বিচার পাবোনা। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আইনী প্রক্রিয়ায় জনগনের কাতারে ফিরে আসার জন্য আমার প্রানপ্রিয় ঘুমধুমবাসীর দোয়াও সহযোগিতা কামনায় আমার সততা এবং শক্তি।পাহাড় ধ্বসের সর্বশেষ খাইরুল বশর (২০) এর পিতা সোনালী ও তার আত্মীয় সজনের অনেকেই ক্ষুদ্ধ কন্ঠে জানান, খাইরুল বশর হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে। বাংলাদেশ -মিয়ানমার মৈত্রী নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক ককন্সট্রাকশনের বালু সরবরাহ কাজে শ্রমিক হিসেবে দৈনিক মজুরীতে গিয়েছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় ছেলে মারা গেছে। তাতে কেউ জড়িত হিসেবে আমি দায়ী করছিনা। হয়তো আল্লাহর হুকুম। খাইরুল বশর আর ফিরে আসবেনা। একই কায়দায় পুর্বে শ্রমিক জয়নালও মারা যায়। ময়না তদন্ত হয়নি। আমিও (সোনালী) মৃত ছেলের ময়না তদন্ত না করতে বারণ করি। কিন্তু অতিউৎসাহী পুলিশ ময়না তদন্ত করে মৃতের উপর পুনঃ লাশ বানাল। মামলা করলো! এতে আমার আত্মীয় পড়সী অনেকেই মামলার আসামী হয়ে এলাকা ছাড়া হওয়ায় তাদের পরিবারে নিরীহ পরিজনরা অর্ধাহারে – অনাহারে ভোগে চরম অমানবিক জীবন -যাপন করছে।
তাতে আমি আরো ভারাক্রান্ত।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন পাহাড় কাটাঁ,ধ্বসের কারণ ২
জনের অকালমৃত্যু, ২ জনের পঙ্গুত্বের কাছে সাভাবিক জীবন কষ্টদায়ক। মামলার বিষয়ে প্রশাসনের এখতিয়ার।
ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ইনচার্জ উপ – পরিদর্শক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এরশাদ উল্লাহ জানান, মামলা তদন্তাধীন আছে। আসামী গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। তবে কোন নিরীহ ব্যক্তি ইতিপূর্বে হয়রানীর শিকার হয়নি। এবারও কোন ব্যক্তি হয়রানির শিকার হবেনা। প্রকৃত অপরাধী যতই বড় শক্তিশালী নেতা হউক না কেন? ছাড় নেই। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদ কবির জানান,ঘুমধুমে পাহাড় কাটা ও প্রানহানীর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কোন নিরপরাধ লোকজন হয়রানী হবেনা আবার কোন অপরাধীও ছাড় পাবেনা। পুলিশ এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও সজাগ রয়েছে। প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল সে সহ তার বিরুদ্ধে করা মামলা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত পুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্ম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরাষ্ট্রমন্ত্রী/সরাষ্ট্র সচিব,আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী, পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাবু বীর বাহাদুর উশৈচিং এমপি,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি /সাধারণ সম্পাদক, জেলা পুলিশ সুপার,এএসপি (সার্কেল) লামা,জেলা পরিষদ সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি,উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার,ওসি নাইক্ষ্যংছড়ি ,সকল ইউনিয়ন পরিযদ চেয়ারম্যান গন, আওয়ামীলীগ ঘরানার মজলুম দেশপ্রেমিক এবং সচেতন জনতার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মামলার অভিযুক্ত
দের মজলুম অসহায় পরিবার -পরিজন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।