নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে বিএনপি নিয়েছে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে। এ ব্যাপারে সামান্যতম শিথিলতা প্রদর্শন না করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার জন্য দলের সব পর্যায়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজে। গণসংযোগের দিনক্ষণ ঠিক করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজ শুরু করেছেন। কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারা এ নির্বাচনে প্রতিদিনই জনগণের কাছে ভোট চাইতে মাঠে থাকবেন।
বিএনপি সূত্র মতে, নাসিক নির্বাচনে সফলতা পেতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। নির্বাচন পরিচালনা ও সার্বিক তদারকির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হচ্ছে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় তথ্য কেন্দ্র করা হবে। প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কি না এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানিসহ যাবতীয় অনিয়ম কেন্দ্রে অবহিত করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে একটি বিশেষ কমিটি করা হবে। নির্বাচন তদারকির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমে তুলে ধরাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি যেকোনো অনিয়ম সাথে সাথে ইসিকে অবহিত করা হবে।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হতে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বাছাই হবে আর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। ৫ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এর পরেই শুরু হবে নির্বাচনী প্রচারণা। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ না করার কারণে এই নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামতে কোনো বাধা নেই। তাই পরিবেশ অনুকূলে থাকলে দলের চেয়ারপারসন অবশ্যই এ সুযোগ কাজে লাগাবেন বলে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপির প্রার্থী করার ইচ্ছা থাকলেও তা হয়নি। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানকে মনোনয়ন দেয়াটাও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ তার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে কোনো অনীহা নেই। এ ছাড়া বহুল আলোচিত ৭ খুন মামলার আইনজীবী হিসেবেও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। এর সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় খালেদা জিয়া অংশ নিলে বিএনপির জয়লাভে সম্ভাবনা অনেকখানি বাড়ে। আর অনিয়ম করে এই নির্বাচনেও যদি বিএনপিকে হারানো হয় তাহলে এই ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করা যাবে।
নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনেই বিএনপি প্রচার চালাবে। যেহেতু চেয়ারপারসনসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন না, তাই তাদের নির্বাচনী প্রচারে নামতে কোনো বাধা নেই।
তিনি বলেন, ইসির আচরণবিধিতে বাধা না থাকলেও ছাত্রলীগের আচরণবিধিতে হয়তো বাধা থাকবে। তাদের ঢিল ছুড়তে, হামলা চালাতে কোনো সমস্যা হয় না। সব দিক বিবেচনা করেই প্রচারণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
একই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি বিএনপির নেতারা জানান, খালেদা জিয়া প্রচারে নামলে ক্ষমতাসীনদের চেয়ে বিএনপি কিছুটা এগিয়ে থাকবে। তাদের মতে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে দুই নেত্রীর জনপ্রিয়তা তুলনাহীন। তারা যেখানেই যাবেন সেখানেই গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। নির্বাচনী আচরণবিধিতে খালেদা জিয়ার প্রচার চালানোর ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই খালেদা জিয়া মাঠে নামলে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আন্দোলনের যৌক্তিকতা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রার্থীকে আজ ডেকেছেন খালেদা জিয়া
: নির্বাচনে দলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আজ সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে ডেকেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচন নিয়ে সব প্রস্তুতি জোরেশোরে শুরু করার নির্দেশ দেয়া হবে তাকে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য সায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের পর দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়নপত্র সাখাওয়াত হোসেন খানের হাতে তুলে দেয়া হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।