সংবিধানের বিরোধিতা করেছিলেন প্রতিষ্ঠাকালে। তবুও তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তার বাকপটুতার সম্বলই ছিল সংবিধান। সংবিধানের ওপর এমন দখলদারিত্ব আর কোনো রাজনীতিবিদের ছিল কি না, তা মেলানো ভার। সংবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে তার দারস্থ হতে হয়েছে খোদ স্পিকারকেও।
সংসদ বসেছে, অথচ তিনি নেই, এ যেন বাতিঘরে অন্ধকার। কথার পরতে পরতে আনন্দবার্তা। তর্ক, যুক্তি, সমাধান সবই মিলেছে তার বক্তৃতায়। তিনি দাঁড়ালেই নীরবতা নেমে আসত সংসদে। শুধু শোনার জন্যই নয়, শেখার জন্যও অন্য সাংসদের কাছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন মহাগুরু।
সরকারে থেকেও যেমন বাচনভঙ্গিতে বিশেষ পারদর্শীতা দেখিয়েছেন, বিরোধী দলে থেকেও ঠিক তাই। আপন মহিমায় আলো ছড়িয়েছেন সংসদের বাইরেও।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার এই চলে যাওয়া যেন মহান সংসদে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নিভে যাওয়া।
রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিতের পরাজয় নেই বললেই চলে। হেরে গিয়েও জিতেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালের কথা। অভিযোগ রয়েছে, কারুচুপি করে হারানো হয় তাকে। মামলা করে বিজয়ী হয়ে বসেন সংসদে। এরপর আর ভোটের মাঠে হারতে হয়নি তাকে।
১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জিতে প্রমাণ করেছেন, তিনি জনতার।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তার মরদেহ দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ পারেননি। সবদিক থেকে তিনি ছিলেন নাম্বার ওয়ান।’
তিনি বলেন, ‘সুরঞ্জিতের মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। এটা কখনও পূরণ হওয়ার নয়।’ শ্রদ্ধা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি নেই এমন সংবাদে আমাদের মাঝে শূন্যতা বিরাজ করছে। জানি না এই শূন্যতা পূরণ হবে কি না।’
সুরঞ্জিতের মরদেহ রোববার সকাল ৯টায় হাসপাতাল থেকে তার জিগাতলার বাসায় নেয়া হয়। সেখানে সুরঞ্জিতকে দেখতে ছুটে যান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্য নির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি (সুরঞ্জিত) একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ছিলেন। যিনি রাজনীতিকে ব্রত মনে করতেন। আমার মতে তার মতো অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান দ্বিতীয়জন নেই।’
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার প্রতীক। দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী নেতা। তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সংসদীয় গঠনতন্ত্রের ক্ষেত্রে তিনি সরকারি দলে থাকেন আর বিরোধী দলে থাকেন সব সময় দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতেন।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।